ঘুরে দাঁড়িয়েছেন রাজশাহীর মাছচাষিরা

মেহেদী হাসান, রাজশাহী:সারাদেশে কার্পজাতীয় মাছ উৎপাদন ও বিপণনে উল্লেখযোগ্য জায়গা দখল করে আছে রাজশাহী। বিগত বছরের তুলনায় চলতি বছরে মাছের দাম বেশ ভালো হওয়ায় ঘুরে দাঁড়িয়েছেন মাছচাষিরা। করোনা মহামারির শুরু থেকে মাছের দাম ওঠানামায় লোকসান হলেও বর্তমানে প্রতিকেজি মাছের দাম ৫০ থেকে ৮০ টাকা বেড়েছে। ফলে লোকসানের মোটা অংশ পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে আশা করছেন এখানকার চাষিরা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে মাছের চাহিদা রয়েছে, আছে পর্যাপ্ত ক্রেতা। স্থানীয় বাজারগুলোয়ও বিগত সময়ের চেয়ে ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে কার্পজাতীয় মাছ। একদিকে অক্সিজেনস্বল্পতা কমাতে বড় আকারের মাছ বিক্রি করছেন চাষিরা, অন্যদিকে ক্রেতা-বিক্রেতার সমারোহে ব্যবসা জমিয়ে তুলেছেন মাছ ব্যবসায়ীরা। জেলায় উৎপাদিত রুই, কাতলা, মৃগেল, গ্রাসকার্প, ব্লাডকার্প, সিলভারসহ বিভিন্ন কার্পজাতীয় মাছ কৌশলে ট্রাকে করে কয়েকবার পানি বদলিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে ঢাকার বিভিন্ন বাজারে। সেখানেও ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে তাজা মাছ। সবমিলিয়ে মাছের রাজ্যে শান্তি বিরাজ করছে উভয় পক্ষের।

গতকাল সকালে রাজশাহীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারের মৎস্য আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজারে প্রতিকেজি ছোট রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা কেজি দরে, যা আগে ২১০-২২০ টাকা বিক্রি হয়েছে। পাঁচ কেজির রুই বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে। সিলভার কার্প ১৬০, ছোট আকারের কাতল ২৮০ টাকা, পাঁচ কেজির কাতল ৩৮০ থেকে ৪০০, দুই কেজি ওজনের মৃগেল চাষি পর্যায়ে ১৭০ এবং বাজারে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকায়। এছাড়া তেলাপিয়া ১৬০ টাকা, বোয়াল ৬০০ টাকা এবং বাগদা চিংড়ি ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, যা আগের তুলনায় প্রতিকেজি ৫০ টাকা বেশি।

রাজশাহী জেলা মৎস্য সূত্র জানায়, রাজশাহী জেলায় মৎস্য উৎপাদন ও বিপণনের সঙ্গে জড়িত জেলার প্রায় ৯ লাখ মানুষ। বর্তমানে মাছ উৎপাদিত হয় ৮২ হাজার ৫৪৫ মেট্রিন টন। বার্ষিক মাছের চাহিদা ৫২ হাজার ৬৩ মেট্রিক টন। ফলে উদ্বৃত্ত থাকে ২৮ হাজার ৭৮ মেট্রিক টন। ২০১৭ সালের তুলনায় ২০২০ সালে মাছের উদ্বৃত্ত প্রায় আড়াই গুণ। সেইসঙ্গে মোট জলাশয়ের সংখ্যা তিন ৪৮ হাজার ৪২৭টি থেকে বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ৫১৫টিতে।

রাজশাহীতে উৎপাদিত মাছের মধ্যে কার্পজাতীয় মাছ প্রায় ৮৫ শতাংশ। এছাড়া কার্পজাতীয় মাছ উৎপাদনে শীর্ষে থাকা রাজশাহী থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিদিন প্রায় ১৫০ ট্রাক মাছ রপ্তানি হয়ে থাকে। বর্তমানে ঢাকায় মাছের চাহিদা থাকায় খুশি এখানকার চাষিরা।

রাজধানীর নিউমার্কেট কাঁচাবাজার, মিরপুর-১০ ও মিরপুর-৬ এলাকার মৎস্য আড়তগুলোয় বিক্রি হয় রাজশাহীর মাছ। মিরপুর-১০ এলাকার মানিক এন্টারপ্রাইজের মালিক মানিক হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বাজারে মাছের চাহিদা রয়েছে। আবার শীতকালে পুকুুর-পুষ্করিণী শুকিয়ে যাওয়ার জন্য সব মাছ বাজারে আসছে। নতুন নতুন মাছ আসছে, যা সারাবছর পাওয়া যায় না। এবার এই মৌসুমে মাছের দাম আছে। আগের বছরের তুলনায় রাজধানীতে প্রতিকেজি ১০০ টাকা বেশি।’

জেলার পবা উপজেলার পারিলা গ্রামের বাসিন্দা সোহরাব হোসেন। প্রায় দুই যুগ ধরে মাছ চাষ করছেন। ছোট-বড় মিলিয়ে তার পুকুরসংখ্যা ২১টি, যার আয়তন ২৫০ বিঘা ছাড়িয়েছে। প্রতিবছর এসব পুকুর থেকে আয় হয় ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা। গতবছরে লোকসান হলেও এবার কিছুটা পুষিয়ে নিচ্ছেন।

এই মাছচাষি শেয়ার বিজকে বলেন, ২০১৯-২০ সালে তিন-চার কেজি ওজনের রুই বিক্রি করেছি ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকায় পর্যন্ত। কিন্তু করোনায় গত বছর লোকসান হয়েছে। এবার আবার কেজিতে ৪০-৫০ টাকা বেড়েছে। ভোক্তা পর্যায়ে ৫০-৭০ টাকা বাড়লে উৎপাদনকারীরা পায় ২৫ টাকা। পাঁচ-ছয় কেজির গ্রাস কার্প বিক্রি করেছি কেজিপ্রতি ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায়, ছয়-সাত কেজি ওজনের কাতল বিক্রি হয়েছে সাড়ে ৩৮০ থেকে ৪২০ টাকায় এবং ১০ কেজি ওজনের কাতল বিক্রি করেছি ৫০০ টাকায়। সবমিলিয়ে যা লোকসান হয়েছে, তার কিছু অংশ উঠছে। এছাড়া মাছের খাদ্যের দাম বেড়েছে, ওষুধপাতির দাম চড়া হওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে, ফলে লাভের অংশ কমে গেছে। আগের মতো আর লাভ নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অলক কুমার সাহা শেয়ার বিজকে বলেন, মাছের দাম কমার কারণ মূলত আমদানি বেশি। করোনাভাইরাসের শুরু থেকেই মাছের দাম কম। এ সময় ছোট পুকুর ও খাল শুকিয়ে মাছ ধরছেন মাছচাষিরা। শীতকালে মাছের গায়ে ঘা হয়, কিন্তু রাজশাহীতে এ ধরনের খবর পাওয়া যায়নি। চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০