ঘুরে দাঁড়াক ন্যাশনাল টি কোম্পানি

 

বাংলাদেশ একসময় জাতীয় চাহিদা মিটিয়ে চা রফতানি করলেও এখন সে অবস্থা আর নেই। যদিও দেশে চা বাগানের সংখ্যা বেড়েছে, বাজারে এসেছে কয়েকটি গুণগত মানসম্পন্ন চায়ের নতুন ব্র্যান্ড; কিন্তু ভোক্তা বেড়েছে বহুগুণ। ধারণা করা হয়, বাগান থেকে উৎপাদনের পর ভালো মানের চা সরাসরি চট্টগ্রামে চলে যায় নিলামে। ফলে দেশের বাজারে যে চা-পাতা পাওয়া যায়, সেগুলো দ্বিতীয় বা পরবর্তী সারির। বিদেশে বাংলাদেশের চায়ের এতটাই চাহিদা ছিল বা আছে যে, বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের চা-ব্যবসা বাংলাদেশসহ অল্প কিছু দেশের চায়ের ওপরই নির্ভর করে। একসময় সিলেট, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের চা-বাগান প্রধান ভরসা হলেও এখন পঞ্চগড় বা দিনাজপুরেও চায়ের আবাদ হচ্ছে। সেগুলোর মানও খারাপ নয়; বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশ ভালো। এমনকি প্রিমিয়াম কোয়ালিটি নাম দিয়ে কয়েকটি ব্র্যান্ড বাজারে যেসব টি-ব্যাগ বিক্রি করছে, সেগুলোকে আন্তর্জাতিক মানের বলা যায়।

এ অবস্থায় দেশের অন্যতম বড় চা কোম্পানি ‘ন্যাশনাল টি কোম্পানি’ ভালো নেই বলে দৈনিক শেয়ার বিজের গত শুক্রবারের এক প্রতিবেদনে জানা যায়। কোম্পানিটির লাভ প্রতিবছরই কমছে। এটি দেশের অন্যতম পুরোনো কোম্পানি। এদেশে তারা চায়ের ব্যবসা শুরু করে আজ থেকে ১৫০ বছরেরও বেশি আগে। এক সময় প্রচুর লাভ করা কোম্পানিটি কয়েক বছর ধরে প্রত্যাশিত হারে লাভ করতে পারছে না। শেয়ার বিজের প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, ২০১০ সালে কোম্পানিটি সাড়ে ১৭ কোটি টাকার বেশি লাভ করলেও ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত দেড় বছরে মাত্র আট কোটি টাকার কিছু বেশি লাভ করেছে। এটি উদ্বেগের বিষয়। শেয়ারবাজারেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বলা হচ্ছে, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণেই কোম্পানির লাভের পরিমাণ কমছে। এ বিষয়ে কোম্পানির কর্তাব্যক্তিরা অবশ্য একমত হননি। তবে লাভ কম হচ্ছে কেন, সে বিষয়ে তারা সদুত্তরও দিতে পারেননি। চায়ের আবাদ করে যেখানে পঞ্চগড় ও দিনাজপুরের মতো জায়গায় কোম্পানিগুলো লাভবান হচ্ছে, সেখানে অনুকূল পরিবেশে কেন ন্যাশনাল টি কোম্পানির মতো বড় কোম্পানির লাভ কমে যাচ্ছে, তা অনুসন্ধানের বিষয়।

ন্যাশনাল টি কোম্পানির বাগান সবচেয়ে পুরোনো। তুলনামূলক নতুনটির বয়সও ৯২ বছরের বেশি। বাগানের বয়সের সঙ্গে চা উৎপাদন ও মানের সম্পর্ক রয়েছে বলে জানা যায়। বাগান পরিচালনা ও পর্যালোচনা-সম্পর্কিত সমস্যা থাকলে আশা করবো, বাগান কর্তৃপক্ষ এ-বিষয়ে যথাযথ সংস্কার-পরিকল্পনা গ্রহণ করবে। প্রয়োজনে ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে কয়েক বছর উৎপাদন বন্ধ রেখে বাগান পরিচর্যার মাধ্যমে নতুন করে বাগান তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া যেতে পারে। দেশে-বিদেশে ন্যাশনাল টি কোম্পানির যে সুনাম রয়েছে, তা যেন অব্যাহত থাকে, আমরা সে আশাবাদ ব্যক্ত করতে চাই।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০