নিজস্ব প্রতিবেদক: দীর্ঘদিন ব্যাংক খাতের লেনদেন পুঁজিবাজারকে গতিশীল রেখেছিল। কিন্তু গত এক মাসে এ খাতের লেনদেনের হার অনেকটা পিছিয়েছে। তবে লেনদেন কমলেও মোট লেনদেনে শীর্ষ স্থানে রয়েছে খাতটি। অন্যদিকে জুন ক্লোজিংয়ের কোম্পানিগুলোর লেনদেনের হার অনেকটা বেড়েছে। একই সঙ্গে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় রয়েছে বিমা খাতের কোম্পানিগুলো। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেনের তথ্য পর্যালোচনায় এমনটিই জানা গেছে।
তথ্যমতে, গেল সপ্তাহে মোট লেনদেনে ব্যাংক খাতের দখলে ছিল ২০ শতাংশ। এ সময় খাতটির দৈনিক গড় লেনদেন হয়েছে ৮৬ কোটি টাকা। এক মাস আগে এ খাতটির দখলে ছিল ৩৫ শতাংশ। ওই সময় মোট লেনদেনের মধ্যে ব্যাংক খাতের দৈনিক গড় লেনদেন ছিল ২৪৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে ব্যাংক খাতের লেনদেন হার কমেছে ১৫ শতাংশ।
গেল সপ্তাহে মোট লেনদেনে প্রকৌশল খাতের অংশগ্রহণ ছিল ১৩ শতাংশ। খাতটির দৈনিক গড় লেনদেন ছিল ৫৪ কোটি টাকা। এছাড়া মোট লেনদেনে বস্ত্র খাতের দখলে ছিল ১২ শতাংশ। খাতটির দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৫০ কোটি টাকা। এছাড়া মোট লেনদেনে বিমা খাতের অংশগ্রহণ চার শতাংশ। খাতটির দৈনিক গড় লেনদেন হয়েছে প্রায় ১৮ কোটি টাকা।
গত মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে মোট লেনদেনে প্রকৌশল খাতের অংশগ্রহণ ছিল ১৭ শতাংশ। ওই সময় খাতটির দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১১৯ কোটি টাকা। এছাড়া বস্ত্র খাতের দখলে ছিল ছয় শতাংশ। ওই সময় খাতটির দৈনিক গড় লেনদেন হয়েছিল ৩৯ কোটি টাকা। এছাড়া বিমা খাতের লেনদেনের হার ছিল দুই শতাংশ। ওই সময় খাতটির দৈনিক গড় লেনদেন হয়েছিল সাত কোটি টাকা। এক মাসের ব্যবধানে ব্যাংক খাতের পাশাপাশি প্রকৌশল খাতের লেনদেনও কমেছে। তবে বেড়েছে বস্ত্র খাতের লেনদেন। একই সঙ্গে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে বিমা খাত।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারই বাজারের বিপরীত চিত্র লক্ষ করা যাচ্ছে। বর্তমানে ব্যাংক, নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিমা খাতের ডিসেম্বর ক্লোজিংয়ের সময় ঘনিয়ে আসছে। কিন্তু এসব শেয়ারের দর কমছে। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকেও অসময়ে আলোচিত কোম্পানিগুলোর দর বাড়তে দেখা গেছে।
তারা বলছেন, দেশের ব্যাংক খাতের যে পরিমাণ খেলাপি বাড়ছে তাতে বাজারে প্রভাব পড়ছে। তাই বিনিয়োগকারীরা এসব শেয়ারে বিনিয়োগে আগ্রহ হারাচ্ছে। এসব কারণে ব্যাংক খাতের লেনদেনেও প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন তারা।
এ সম্পর্কে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বাজারে বিপরীত চিত্র লক্ষ করা যাচ্ছে। যখন ব্যাংকের শেয়ার বাড়ার কথা তখন কমছে, আবার যখন কমার কথা তখন বাড়ছে। আসলে কী কারণে এমনটি হচ্ছে, বোঝা যাচ্ছে না।
এদিকে ব্যাংক খাতের পিই রেশিও ১০ দশমিক তিন পয়েন্টে অবস্থান করছে। এরপরই জ্বালানি ও বিমা খাতের পিই রেশিওর অবস্থান। গেল সপ্তাহে জ্বালানি খাতের পিই রেশি ১২ দশমিক ৯ পয়েন্টে এবং বিমা খাতের পিই রেশিও ১৩ দশমিক এক পয়েন্টে।
এক মাস আগে ব্যাংক খাতের পিই রেশিও ছিল ১০ দশমিক চার পয়েন্টে। এছাড়া জ্বালানি খাতের পিই রেশিও ছিল ১৩ পয়েন্টে এবং বিমা খাতের পিই রেশিও ১২ দশমিক ৯ পয়েন্টে ছিল। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে ব্যাংক খাতের পিই রেশিও সামান্য কমেছে, তবে বেড়েছে বিমা খাতের পিই রেশি। বিশ্লেষকরা বলছেন, শেয়ারদর বাড়ার-কমার সঙ্গে পিই রেশিও ওঠানামা করে। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত পিই রেশিও ১৫-এর ঘরে অবস্থান করে তখন বিনিয়োগ নিরাপদবান্ধব বলে মনে করেন তারা। সেই হিসেবে ব্যাংকের পাশাপাশি বিমা ও জ্বালানি খাতের পিই রেশিও তুলনামূলক কম।
উল্লেখ্য, বাজারে ব্যাংক খাতের ৩০টি প্রতিষ্ঠান ও বিমা খাতের ৪৭টি। ব্যাংক, নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিমা খাতের কোম্পানিগুলোর হিসাববছর শেষ হবে ডিসেম্বরে। এছাড়া অন্যান্য কোম্পানির হিসাববছর শেষ হয়েছে জুনে।