প্রতিনিধি, মীরসরাই (চট্টগ্রাম) : বঙ্গোপসাগরের সন্দ্বীপ চ্যানেলের মীরসরাই অংশে বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত একটি ড্রেজার ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং প্রভাবে সাগরে ডুবে যায়। এসময় ড্রেজারে নিয়োজিত চালক ও শ্রমিকসহ ৮জন নিখোঁজ হয়। এদের মধ্যে দুইজন আপন সহোদর। গত সোমবার (২৪ অক্টোবর) দিবাগত রাত ১০টার নাগাদ ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে ড্রেজার ডুবির ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় নিখোঁজ কারোরই সন্ধান মেলেনি।
পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা ও নিখোঁজ শ্রমিকদের এক সহকর্মীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার দিবাগত রাতে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে সাগর উত্তাল হয়ে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে সৈকত-২ নামের ড্রেজারটি ডুবে যায়। যাতে অবস্থান করছিলেন ৮ শ্রমিক। ডুবে যাওয়া ড্রেজারটি বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরের মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভরাট কাজে বালু উত্তোলনে ব্যবহার হতো।
নিখোঁজরা হলেন, দুই সহোদর শাহীন মোল্লা (৩৮), ড্রেজার চালক ইমাম মোল্লা (২৫), পিতা আনিস মোল্লা, মাহমুদ মোল্লা (২৬) পিতা আব্দুল হক মোল্লা, আল আমিন হাওলাদার (২৫), পিতা মোকুমদার হাওলাদার, বশর হাওয়ালাদার (৩৫), পিতা ইউসুপ আলী হাওলাদার, জাহিদুল ফকির (২২) পিতা লোকমান ফকির, আলম সরকার (৩৮), পিতা নুরু সরকার, তারেক মোল্লা (২০), পিতা রহমান খান। তাদের সকলের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার চর জৈনকাঠি এলাকায়।
বালু উত্তোলনের কাজে নিয়োজিত ড্রেজারে থাকা শ্রমিক আব্দুস সালাম জানান, ডুবে যাওয়া ড্রেজারে তিনিসহ ৯ শ্রমিক নিয়মিত থাকতেন। সোমবার সন্ধ্যার পর তিনি ড্রেজার থেকে নেমে নিরাপদ স্থানে চলে যান। রাত ১০টার পর তিনি জানতে পারেন ড্রেজার ডুবে গেছে। তার সঙ্গে ড্রেজারে থাকা তার সহকর্মীরাও নিখোঁজ রয়েছেন।
ডুবে যাওয়া ড্রেজারের ম্যানেজার রেজাউল করিম জানান, ঘটনাস্থলে আরো ৬টি ড্রেজার রাখা ছিল। ঘূর্ণিঝড়ের সতর্ক সংকেত পাওয়ার পর অন্য ড্রেজারের শ্রমিকেরা নিরাপদ স্থানে চলে গেলেও ডুবে যাওয়া ড্রেজারের ৯ শ্রমিকের মধ্যে একজন ছাড়া বাকিরা ড্রেজারেই ছিলো।
মীরসরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কবির হোসেন বলেন, সাগরে ড্রেজারসহ ৮ শ্রমিক নিখোঁজের খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। পরে ফায়ার সার্ভিসকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। তারা মঙ্গলবার দিনভর উদ্ধার চেষ্টা চালিয়েও নিখোঁজ শ্রমিকদের সন্ধান পায়নি। তবে সাগরের পানি কমে যাওয়ায় ডুবে যাওয়া ড্রেজারটির সন্ধান মিলেছে। মঙ্গলবার বিকালের নাগাদ চট্টগ্রাম থেকে ফায়ার সার্ভিসের ৫ সদস্যের একটি ডুবরী দল ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধার কাজে যোগ দেয়।
মীরসরাই ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা ইমাম হোসেন পাটোয়ারি বলেন, মঙ্গলবার বিকাল ৫টা নাগাদ জানান, আমরা মঙ্গলবার সকাল থেকে উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত রেখেছি। এখনো পর্যন্ত কাউকে উদ্ধার করা যায়নি। তবে সাগরের পানি কমে যাওয়ায় ডুবে যাওয়া ড্রেজারটির সন্ধান পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম থেকে ৫ সদস্যের একটি ডুবরী দল আমাদের সাথে উদ্ধার কাজে যোগ দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ডুবরী দল আসার পর আমরা ড্রেজারের ভেতরে প্রবেশ করার চেষ্টা করছি এবং নিখোঁজ শ্রমিকদের উদ্ধারে তৎপরতা চালাচ্ছি।’
এদিকে মঙ্গলবার বিকালে পটুয়াখালী থেকে নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজনরা ঘটনাস্থলে আসেন। এসময় নিখোঁজ দুই সহোদর শাহীন মোল্লা ও ইমাম মোল্লার ভাই এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘আমরা ঘটনা শুনে পটুয়াখালী থেকে এখানে এসেছি মঙ্গলবার বিকাল ২টার পর। তখনও ডুবরী দল আসেনি। সময় মতো তারা উদ্ধার কাজ শুরু করেনি।’