প্রতিনিধি, ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ছিল আম্পান। রাত ১০টা থেকে শুরু হয়ে সকাল পর্যন্ত তাণ্ডব চালায় আম্পান। ভেঙেছে গাছপালা ও বাড়িঘর। ভেসে গেছে খামার ও পুকুরের মাছ। সেইসঙ্গে নষ্ট হয়ে গেছে মাঠের পর মাঠের ফসল।
ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, জেলার ছয় উপজেলায় প্রায় দুই লাখ ২৭ হাজার কৃষক আম্পানের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। জেলায় দেড় হাজার হেক্টর জমির কলা, এক হাজার ২৫ হেক্টর শাকশবজি, এক হাজার ৯৫০ হেক্টর মুগডাল, দুই হাজার ২০ হেক্টর তিল, ৭৫০ হেক্টর মরিচ, ১০০ হেক্টর বোরো ধান, দেড় হাজার হেক্টর পান বরজ, দুই হাজার ৮৭৫ হেক্টর আম ও ৪১৮ হেক্টর জমির লিচু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাকার অঙ্কে ফসলের ক্ষতি হয়েছে ৮৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।

ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের কৃষক রাশেদুল ইসলাম জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে তার দেড় বিঘা জমির পান বরজ নষ্ট হয়ে গেছে। বরজে প্রায় আড়াই লাখ টাকার পান ছিল। বিধ্বস্ত পান বরজ মেরামত করতে এখন প্রায় এক লাখ টাকা খরচ হবে।
সদর উপজেলার হলিধানী গ্রামের কলাচাষি কাদের মিয়া বলেন, এ বছর তিনি আড়াই বিঘা জমিতে কলা চাষ করেছিলেন। কয়েক দিন হলো অল্প কিছু কলা বিক্রি করতে পেরেছেন। কলা বিক্রি করে তিনি কমপক্ষে তিন লাখ টাকা আয় করতেন। আম্পানের কারণে তার তিন বিঘা জমির কলাগাছ ভেঙে পড়েছে।
মহেশপুর উপজেলার নাটিমা গ্রামের কৃষক শামীম হোসেন বলেন, আম্পানের কারণে তার মাছের খামারগুলো ভেসে গেছে। এছাড়া তার ১০ বিঘা জমির কলাক্ষেত নষ্ট হয়েছে। মূলধন হারিয়ে এখন পথে বসেছেন তিনি। এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা করে সরকারিভাবে সহযোগিতা করার আহবান জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা।

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ফুলহরি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জামিনুর রহমান বিপুল বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে শৈলকুপা উপজেলার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফুলহরি ইউনিয়ন। শুধু এই ইউনিয়ন নয়, জেলার প্রতিটি ইউনিয়নের কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এই কৃষকদের তালিকা করে সরকারিভাবে সহযোগিতা করলে তারা একটু হলেও বাঁচতে পারবে। সরকারের প্রতি আহবান থাকবে, কৃষকদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা যেন করা হয়।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃপাংশু শেখর বিশ্বাস বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করা হয়েছে। পানবরজ, কলাক্ষেত, আম, লিচুসহ অন্যান্য ফসল যা রয়েছে, তা সংরক্ষণ ও বিপণনের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া মাঠে মাঠে গিয়ে কৃষকদের সান্ত¦না দেওয়া হচ্ছে।