প্রতিনিধি, মুন্সীগঞ্জঃ অবৈধদের বেড়াজালে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার একাংশ বৈধ গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে নিয়েছে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ।
এ বছরের গেলো ২৭ এপ্রিল সকাল থেকে গজারিয়া উপজেলার বাউশিয়া ও তবেরচর ইউনিয়নে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয় তিতাস।
তিতাস গ্যাসের একটি সূত্র জানিয়েছে, অবৈধ গ্রাহকদের শায়েস্তা করতেই এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তবে এনিয়ে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ কোন ধরনের গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেনি। কি কারণে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে তা নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোন বক্তব্যও দেয়নি তিতাস।
বুধবার (১৫ মে) সরেজমিনে বাউশিয়া ও তবেরচর ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সমগ্র গজারিয়া উপজেলায় তিতাসের বৈধ সংযোগের সংখ্যা দুই হাজার তবে গজারিয়ায় অবৈধ গ্যাস ব্যবহারকারীদের দৌরাত্ম কমাতে কোন প্রকার ঘোষণা বা নোটিশ প্রদান ছাড়া গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয় তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ।
শিল্প-কারখানার মালিক, শ্রমিক ও আবাসিকগ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে আনা গেছে, গজারিয়া উপজেলায় ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৩০ টির মতো শিল্প-কারখানা রয়েছে।
আর এসব শিল্প কারখানায় অন্তত ২০ হাজার শ্রমিক কর্মচারী কাজ করে। গ্যাস না থাকায় অধিকাংশ কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে কারখানার মালিকদেয়।
অপরদিকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় মাটি দিয়ে চুলা বানিয়ে রান্নাবান্না করছে আবাসিক গ্রাহকরা। তারা বিল পরিশোধ করে গ্যাস ব্যবহার করতে না পারছে না। অনতিবিলম্বে গ্যাস সরবরাহ চালু না করলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধসহ বৃহৎ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন তিতাসের বৈধ গ্রাহকরা।
এবিষয়ে কথা হয় ভিটিকান্দি এলাকায় গড়ে উঠা সুপারস্টার গ্রুপের ডেপুটি ম্যানেজার মোহাম্মদ আরিফুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন, কোন ঘোষণা না দিয়ে গ্যাস সরবরাহ বন্ধে সিদ্ধান্তটি একটি হঠকারী সিদ্ধান্ত। গরমে ফ্যানসহ ইলেকট্রনিক্স পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায় বহুগুণ। গ্যাস না থাকায় আমাদের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। শিল্প কারখানা টিকিয়ে রাখতে অনতিবিলম্বে শিল্প কারখানা গুলোতে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক করতে সরকারের প্রতি দাবি জানান তিনি।
উপজেলার আনারপুরা এলাকায় গড়ে উঠা আধুনিক পেপার মিলস লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, হঠাৎ করে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেওয়ায় আমাদের উৎপাদন একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে।
দেশি-বিদেশি ক্রেতারা বারংবার করছেন আমরা কিছু বলতে পারছি না। গত কয়েক দিনে আমাদের কয়েক কোটি টাকার মালামাল নষ্ট হয়েছে। দ্রুত বিষয়টির সমাধান না করলে আমাদের কারখানা বন্ধ করে দিতে হবে। আমাদের মত একই অবস্থা বসুন্ধরা টিস্যু পেপার মিল, জেএমআই ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, পলি কেবল ইন্ডাস্ট্রি, প্যাসিফিক ডেনিমসসহ আরও কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের। আমরা দ্রুত এর সমাধান চাই।
নয়াকান্দি গ্রামের বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমি একজন বৈধ গ্রাহক। দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত বিল পরিশোধ করে গ্যাস ব্যবহার করছি আমি। গত ২৭ এপ্রিল সকাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছি আমরা। কোন রকমে মাটি দিয়ে চুলা বানিয়ে রান্নাবান্না করছি এভাবে আর কয়দিন? অবৈধ গ্রাহকদের জন্য কেন বৈধ গ্রাহকদের কষ্ট করতে হবে। আমাদের ভোগান্তি দেখারও কেউ নেই। অবৈধদের শায়েস্তা করতে গিয়ে সবাইকে আসামি করাকে কাণ্ডজ্ঞানহীন বলেছেন তিনি।
গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কোহিনুর আক্তার বলেন, ‘কোনরকম ঘোষণা ছাড়া গ্যাস সংযোগ বন্ধ করার বিষয়টি অসংখ্য মানুষ আমাকে জানিয়েছে। বিষয়টি আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি’। তবে গজারিয়া উপজেলায় হাজার হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগ থাকায় প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার গ্যাস চুরি করা হচ্ছে। সমগ্র গজারিয়া উপজেলায় বৈধ গ্রাহকের সংখ্যা মাত্র ২ হাজারের মত তবে অবৈধ সংযোগ রয়েছে ১৩ হাজারের বেশী। দ্রুত অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে বৈধ গ্যাস সংযোগ দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের মেঘনা আঞ্চলিক বিপণন অফিসের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান বলেন, আপনাদের এবিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস করা থাকলে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জানতে হবে। আমি এ ব্যপারে কিছু বলতে পারবো না।