Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 9:05 pm

ঘোষিত পরিকল্পনার সঙ্গে বাজেট সংগতিপূর্ণ হোক

বর্তমানে বেশকিছু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের অগ্রযাত্রার পথে এগোচ্ছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে রয়েছে ২০৪১ সালে উন্নত দেশে উন্নীত হওয়া, ২০৩১ সালে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া, ২০৩০ সাল নাগাদ এসডিজির অভীষ্টসমূহ বাস্তবায়ন করা এবং সার্বিক উন্নয়ন টেকসই করার জন্য শতবর্ষী ‘বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা, ২১০০’ বাস্তবায়ন করা। আর এসব মাইলস্টোন অর্জিত হবে প্রতিবছরের বাজেট বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায়। সেজন্য বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে এসব লক্ষ্যমাত্রা সংযুক্ত করা জরুরি। কিন্তু সরকারের বাজেটে এসব লক্ষ্যমাত্রা প্রতিফলিত হচ্ছে না বলে মনে করছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)। বিষয়টি পর্যালোচনার দাবি রাখে বৈকি। যদি প্রকৃতপক্ষে সরকারের নীতি-পরিকল্পনার সঙ্গে বাজেট সংগতিপূর্ণ না হয়, তাহলে ঘোষিত মাইলস্টোনগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। এজন্য বিষয়টি খতিয়ে দেখে বাজেটকে সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ করে তোলা আবশ্যক।

দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘সানেমের পর্যালোচনা: প্রস্তাবিত বাজেট সরকারের নীতি ও পরিকল্পনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, সানেম মনে করে, একটি বাজেট ভালো নাকি মন্দ, তা বিচার করতে হবে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাসহ সরকারের ঘোষিত বিভিন্ন নীতি দলিলের মানদণ্ডের ভিত্তিতে। সেই বিবেচনায় দেখা যায়, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বিভিন্ন বছরভিত্তিক যেসব প্রক্ষেপণ দেয়া আছে, সরকারের বাজেট সে ঘোষণাকে সমর্থন করছে না। উদাহরণ হিসেবে সংগঠনটি বিভিন্ন সামাজিক খাতে বিনিয়োগের অপর্যাপ্ততার কথা উল্লেখ করেছে। এসব সামাজিক খাতের মধ্যে রয়েছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা। এ খাতগুলোয় বাজেট বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করছে সানেম। বিশেষ করে এসব বরাদ্দ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় বলে মনে করছে সানেম।

সানেম যেসব পর্যবেক্ষণ দিয়েছে, তা বিবেচনার দাবি রাখে বৈকি। কেননা পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাই মূলত সরকারের প্রধান পরিকল্পনা দলিল। এটির মানদণ্ডের ভিত্তিতেই দেশের সার্বিক অগ্রগতি বিচার করা উচিত। কাজেই পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় যেসব প্রক্ষেপণ নির্দেশ করা হয়েছে, সেগুলোর প্রতিফলন বাজেটে হওয়া অত্যাবশ্যক। তা না হলে ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশ গড়ার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে বৈকি। এছাড়া বাংলাদেশ দ্বৈত বিবর্তনের মধ্য দিয়ে সময় অতিক্রম করছে। এর একটি হচ্ছে, বাংলাদেশ ২০২৬ সালের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে, বাংলাদেশ ধীরে ধীরে নি¤œমধ্যম আয়ের দেশের তালিকা থেকে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশের পথে ধাবিত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে নির্দিষ্ট পরিকল্পনামাফিক অগ্রসর হওয়া আবশ্যক। তাই সরকারের পরিকল্পনাগুলোয় যেভাবে নির্দেশনা দেয়া আছে, সেই মোতাবেক বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে মনে করি। সরকার বিষয়টি বিবেচনায় নেবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।