গত কয়েক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে, উচ্চাভিলাষী বাজেট ঘোষণা করা হচ্ছে। বাজেটে উচ্চাভিলাষ থাকা দোষের নয়। কিন্তু বড় বাজেট ঘোষণা করে যদি সেটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা না যায়, তাহলে বাজেটের গুণগত দিক নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। একসময় ঘোষিত বাজেটের প্রায় শতভাগই বাস্তবায়ন হতো। বিগত ১০ বছর ধরে এ বাস্তবায়ন ৯০ শতাংশও সম্পন্ন হয়নি। একটি বাজেট ঘোষণার পর যদি সেটি আবার সংশোধন করে ছোট করে ফেলতে হয়, তাহলে বড় বাজেট ঘোষণার গুরুত্ব হ্রাস পায়। এমন পরিস্থিতিতে বাজেট যাতে পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়, সে বিষয়ে নজর দেয়া আবশ্যক।
দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাব: প্রতি বছর বাস্তবায়িত হয় না বাজেটের ১৫-২০ শতাংশ’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, ২০০৯-১০ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে বাজেটের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বাস্তবায়িত হচ্ছে না। এর মধ্যে সবচেয়ে কম বাস্তবায়িত হয়েছে ২০১৬-১৭ অর্থবছর। ওই অর্থবছর বাজেটের প্রায় ৭৯ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছিল। বাস্তবায়িত না হওয়ার হার ছিল ২০ দশমিক ৮৮ শতাংশ। আর বাজেট সর্বোচ্চ বাস্তবায়িত হয় ২০১০-১১ অর্থবছর। ওই অর্থবছর বাস্তবায়ন হার ছিল প্রায় ৯৭ শতাংশ।
উপরের তথ্য থেকে স্পষ্ট যে, সরকার প্রতিবছর যে বাজেট ঘোষণা করে, সেটি বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত অর্থের সংস্থান থাকে না। যে কারণে বড় আকারের বাজেট নেয়া হলেও সেটি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বাজেট ঘোষণার আগে সম্ভাব্য রাজস্ব আয় ও বাজেট ঘাটতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ঋণের প্রক্ষেপণ করা হয়। সেই অনুযায়ী বাজেট ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়। বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশ হওয়ায় এখানে প্রতিবছর রাজস্ব আহরণে কিছু না কিছু প্রবৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রাজস্ব আহরণে বড় ধরনের লক্ষ্যমাত্রা ধরে তা অর্জনের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) দায়িত্ব দেয়া হয়। এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের আগে সংস্থাটির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কোনো ধরনের পরামর্শ করা হয় না বলেই জানা যায়। ফলে সংস্থাটির সক্ষমতা সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা ব্যতিরেকেই তাদের ওপর একটি লক্ষ্যমাত্রা চাপিয়ে দেয়া হয়। এতে ফলাফল যা হওয়ার ঠিক তাই হয়। এনবিআর শেষ পর্যন্ত তাদের জন্য ধার্যকৃত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারে না। ফলে উন্নয়ন ব্যয়সহ নানা ক্ষেত্রে ব্যয় সংকোচন করে বাজেট সংশোধনের উদ্যোগ নিতে হয়। এভাবেই চলে আসছে গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে।
বাজেটে বিভিন্ন সংস্থার জন্য যে বরাদ্দ প্রাক্কলন করা হয়, সেই অনুযায়ী তারা ব্যয় পরিকল্পনা গ্রহণ করে। কিন্তু বছরের মাঝামাঝি যদি হঠাৎ করে বরাদ্দ কমিয়ে দেয়া হয় তাহলে সংস্থাগুলোর নানা উদ্যোগ বাস্তবায়নে ছেদ পড়ে। এক্ষেত্রে পরের বছর আবার বেশি অর্থের প্রয়োজন হয়। এতে সরকারি অর্থের গুণগত বিনিয়োগ বিঘ্নিত হয়। কাজেই সরকারের রাজস্ব আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের পরিকল্পনার সামঞ্জস্য বিধান করা আবশ্যক।