Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 10:39 am

ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সুদহার হিসেবে পরিচিত রেপোর সুদের হার শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে সাড়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এ নীতি সুদহার বৃদ্ধি পাওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ধার করতে ব্যাংকগুলোকে এখন বেশি সুদ দিতে হবে। এতে করে ব্যাংকঋণের ওপর প্রভাব পড়বে। উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসায় বিনিয়োগে আগ্রহ হারাবে। অষ্টম পঞ্চমবার্ষিক পরিকল্পনায় বিনোয়োগে জোর দেয়া হলেও মুদ্রানীতিতে তার প্রতিফলন তেমন দেখা যাচ্ছে না।

রাজধানীর সিএ ভবনে গতকাল দি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) আয়োজিত ‘চলমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে মুদ্রানীতি ২০২২-২৩’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। বক্তব্য দেন আইসিএবির প্রেসিডেন্ট মো. শাহাদাৎ হোসেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট এনকেএ মবিন, ফৌজিয়া হক, সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান, বিল্ডের নির্বাহী পরিচালক ফেরদৌস আরা বেগম, বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনস্টিটিউট নির্বাহী প্রেসিডেন্ট ড. মাহমুদা আক্তার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. আব্দুল মজিদ এবং আইসিএবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শুভাশীষ বসু।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতির ওপর অর্থনীতির সাফল্য নির্ভর করে। কভিডকালে পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ সারাবিশ্বে পঞ্চম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম হয়েছে। আমরা সফলভাবে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি। এখন মূল্যস্ফীতি ও বেকারত্ব মোকাবিলা বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, অধিক আমদানির কারণে আমাদের দেশে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দিচ্ছে; যার প্রভাব আমাদের দেশে পড়েছে। আমাদের অর্থনীতি দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। তাই ছয় মাস পরপর সব স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা উচিত।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ডলারের বিপরীতে টাকার মান ধরে রাখতে সরকার সংকোচন মূলক মুদ্রানীতি প্রণয়ন করেছে। অপ্রয়োজনীয় বিলাস জাত আমদানি পণ্য সুনির্দিষ্টায়ন সবার কাছে নেতিবাচক বার্তা যাবে। তাই এখন এ নিয়ে সরকার ভাবছে না। বাংলাদেশে বাজার প্রতিযোগিতামূলক নয়, সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য সরকার ব্যাংকঋণের সুদের হার নির্ধারণে হস্তক্ষেপ করেছে। সুদের হার বাজারে ছেড়ে দিলে মূলধন ব্যয় বাড়বে। ফলে পণ্যের দামও বাড়বে। তাই বর্তমানে এক অঙ্কের সুদের হার উঠিয়ে দেয়ার কথা সরকার চিন্তা করছে না।

শাহাদাৎ হোসেন বলেন, রাজস্ব নীতির মতোই মুদ্রানীতির বিস্তৃত উদ্দেশ্য হলো উৎপাদনে পূর্ণ-কর্মসংস্থান স্তরে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা, মূল্যের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করা। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে পূর্ণ কর্মসংস্থানের পাশাপাশি শিল্প ও কৃষি উভয় ক্ষেত্রেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত এবং উৎসাহিত করতে একটি গ্রহণযোগ্য মুদ্রানীতি প্রণয়ন জরুরি।

ড. সেলিম রায়হান বলেন, ব্যাংক খাতে সুশাসনের ওপর জোর দিতে হবে। সুদের হার কামিয়ে কোনো লাভ হয়নি। ব্যাংকঋণের সুদের হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া দরকার বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে ভবিষ্যৎতে মূলস্ফীতির চাপ আগামীতে বাড়তে পারে। মূলস্ফীতির নিয়ন্ত্রণ করা বর্তমানে অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

ড. মাহমুদা আক্তার বলেন, কৃচ্ছ্ব অবলম্বন করে সরকার সংকোচনমূলক নীতি গ্রহণ করেছে। পুঁজিবাজার সহায়ক নীতিমালা গ্রহণ করা দরকার। সামগ্রিক অর্থনীতি উন্নতি হলে পুঁজিবাজার উপকৃত হবে। নীতি করের সুদ বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে তিনি মনে করেন। কভিড-পূর্ববর্তী নীতিগুলো অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান তিনি।

ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, প্রবৃদ্ধি অর্জন, মুদ্রানীতি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ মাথায় রেখে মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে বিলাসজাত পণ্যে আরোপিত করের পরিমাণ প্রায় আগের মতোই আছে। ফলে বিলাসজাত পণ্য আমদানি রোধ হবে বলে মনে হচ্ছে না। সুদের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৫ করা হয়েছে। এতে করে ব্যাংকঋণের ওপর প্রভাব পড়বে। উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগ কমে যাবে। অষ্টম-পঞ্চম পরিকল্পনায় বিনোয়োগে জোর দেয়া হলেও মুদ্রানীতিতে তার প্রতিফলন তেমন দেখা যাচ্ছে না।