Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 7:00 pm

চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী করতে চাই কার্যকর

এসএম নাজের হোসাইন

অতি সাম্প্রতিককালে গ্যাস ও পানি সংকট ভয়াবহ আকার রূপ নিয়েছে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও মিডিয়ায় ফলাও করে প্রতিবেদন প্রকাশ হচ্ছে। এ সংকটের পেছনে কেন্দ্র্রীয় সরকারের চট্টগ্রামের প্রতি অবহেলা ও সুদৃষ্টির অভাব বললেও সত্যিকার অর্থে আরও কিছু কারণ অন্তর্নিহিত আছে। কারণ সরকারিভাবে চট্টগ্রামের জন্য বরাদ্দ বাড়ালেই কি সমস্যার সমাধান? নাকি এর বাইরে আরও কিছু করণীয় আছে? বিষয়টি নিয়ে নাগরিক সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে। অনেকে অনেক মতপ্রকাশ করেছেন। তাদের সঙ্গে কোনোভাবেই দ্বিমত নয়, অধিকন্তু কিছু বিষয়কে তুলে ধরার জন্য আমার এ প্রয়াস।
প্রাথমিকভাবে সরকারি সেবা সংস্থা গ্যাস, ওয়াসা, বিদ্যুৎ, বিটিসিএল, হাসপাতাল, সিডিএ, রেল, বিআরটিএ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি সেবা প্রদান সংস্থাগুলোয় গ্রাহক স্বার্থ বা জনস্বার্থ রক্ষায় যারা দায়িত্ব পেয়েছেন তারা জনস্বার্থ রক্ষার চেয়ে নিজের আঁখের গোছানোই মুখ্য হয়ে উঠেছে। যার কারণেই এসব সেবা সংস্থাগুলোয় বোর্ড মেম্বার, চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পেতে বড় আকারের লেনদেন হচ্ছে বলে বাজারে প্রচলিত আছে। আবার ওইসব প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিতে বা পোস্টিং পেতেও বিশাল অঙ্কের টাকা গুনতে হচ্ছে। যার কারণে যারাই চাকরিতে যোগদান বা ব্যবস্থাপনা বোর্ডে নিয়োগ পান, তারা প্রথমে এসেই লগ্নিকৃত অর্থ সুদে-আসলে উদ্ধারে মরিয়া হয়ে ওঠেন। যার খেসারত গুনতে হয় সাধারণ ভোক্তাদের অর্থাৎ যারা এর সেবাগ্রহণকারী। সম্প্রতি চট্টগ্রামের কারাধ্যক্ষ বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়ে পুলিশের কাছে ধরা পড়ার পর নতুন করে প্রশ্নের জš§ দিয়েছে। যেখানে সরকারি-বেসরকারি অনেক কারা পরিদর্শক রয়েছেন, যারা নিয়মিতভাবে কারাগারের কার্যক্রম তদারকি করে থাকেন। তাহলে কারাগারে এতদিন ধরে ঘুষের লেনদেন, অনিয়ম চলমান থাকলেও কারও নজরে পড়েনি? বিপুল পরিমাণ ঘুষের লেনদেন ও অনিয়ম হয়ে এলেও সরকারি-বেসরকারি কারা পরিদর্শকরা তাহলে কি ঘুমিয়ে ছিলেন?
চট্টগ্রামের গ্যাস সংকটের কথায় আসি, বলা হচ্ছে চট্টগ্রামের গ্যাসের চাহিদা হলো ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বিপরীতে জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে ২০০-২২০ মিলিয়ন ঘনফুট। আর যেহেতু চট্টগ্রাম একটি শিল্প ও বাণিজ্যিক নগরী। সে কারণে অনেক কল-কারখানা, গার্মেন্টস শিল্প ও স্টিল মিল গ্যাসচালিত। এর বাইরে চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ও বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহের কারণে চট্টগ্রামের জন্য বরাদ্দকৃত গ্যাসের সিংহভাগই ওখানে চলে যায়। ফলে চট্টগ্রামের গ্যাসের সংকট প্রকট হয়েছে। যদি চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ও বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্যাস জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ করা হতো, তাহলে এ সমস্যা খানিকটা লাগব হতো বলে অনেকেই মতপ্রকাশ করেছেন। কিন্তু এই মতের সঙ্গে আমি যোগ করতে চাই, যেটা আমরা প্রায়ই দেখি গ্যাস সংযোগের জন্য লাখ লাখ টাকা নিচ্ছে ঠিকাদারদের একটি গ্রুপ। গ্যাস কোম্পানির সদর দফতরে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বা গ্যাসের বিল কমিয়ে দেওয়ার একটি বিশাল চক্র গড়ে উঠেছে। যাদের মূল কাজ হলো বাসা বা শিল্প-কারখানায় গ্যাস সংযোগ দেওয়া ও বিল কমানো। আর সংকটের কথা উঠলেই প্রথমে বলা হয়, ‘বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দিতে হবে’। অবৈধ সংযোগ এবং মিটারের বাইরে লাখ লাখ ঘনফুট গ্যাস হজম করছে নানা শিল্প-কারখানার মালিকরা। এগুলো নিয়মিত তদারকির কোনো ব্যবস্থা গ্যাস কোম্পানির নেই। সিস্টেম লসের নামে বিপুল পরিমাণ গ্যাস চুরি করা হলেও সরকারি কোনো নজরদারি এখানে নেই। যার কারণে বিগত ১/১১-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যাদের বিরুদ্ধে বেশি মামলা হয়েছে তারা হলেন গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কর্মকর্তা ও কর্মী। এই সিস্টেম লস কমানো না গেলে জাতীয় গ্রিড বা এলএনজি থেকে যতই সরবরাহ বাড়ানো হোক না কেন, সবকিছুই কিন্তু তলাবিহীন ঝুড়ির মতো খালি হয়ে যাবে। সে জন্য আগে প্রয়োজন ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি দূরীভূত করা। এছাড়া কেজিডিসিএলের একটি ব্যবস্থাপনা পর্ষদ আছে, যার চেয়ারম্যান হলেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান এবং বোর্ডে যারা আছেন সবাই সরকারি কর্মকর্তা। যাদের সঙ্গে সাধারণ জনগণের কোনো সংযোগ নেই। সবচেয়ে মজার কাহিনী হলো, যাদের জন্য এই গ্যাস কোম্পানি সেই ভোক্তা বা গ্রাহকের কোনো প্রতিনিধি সেখানেই নেই। হয়তো যদিও থাকেন, সেখানে তিনি আবার ক্ষমতাসীন সরকারের মনোনীত, যা তিনি কোনো দলীয় নেতার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন। এছাড়া তাৎক্ষণিকভাবে কোনো গ্রাহক সমস্যায় পড়লে গ্রাহকদের জন্য কোনো হটলাইন সার্ভিস নেই। যদিও গ্রাহকসেবা নামে কতগুলো বিটিসিএল নাম্বার দেওয়া থাকে, যেগুলোয় ফোন করলে উত্তর পাওয়া দুষ্কর। ফলে গ্রাহকসেবা পুরোটাই হয়ে পড়েছে ঠিকাদারনির্ভর। তারা তাদের ইচ্ছামতো লাইন সংযোগ দেন আবার কাটেন। চট্টগ্রামের অনেক গ্যাসনির্ভর শিল্প-কারখানায় প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা বিল এলেও কেজিডিএলের এক শ্রেণির কর্মকর্তাদের সঙ্গে শিল্পমালিকের অবৈধ চুক্তির কারণে কোটি কোটি টাকার সরকারি রাজস্ব ফাঁকি হচ্ছে। যাকে তাদের ভাষায় সিস্টেম লস। এই সিস্টেম লস কমানো গেলে গ্যাসের সুষ্ঠু বিতরণ ব্যবস্থাপনায় উন্নতি করা গেলে বিপুল রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট থেকে রেহাই পাবে।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম ওয়াসার বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য। চট্টগ্রাম ওয়াসা সমস্যার মূল সমস্যা হলো ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি। আমরা অনেকবার গ্রাহক ও ওয়াসার সঙ্গে সহজে সংযোগ স্থাপনের দাবি করেছিলাম। এ বছরের প্রথম দিকে দুদক কর্তৃক গণশুনানিতে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রতি সপ্তাহে গণশুনানি হবে, কিন্তু তার কোনো বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। ওয়াসা কর্তৃপক্ষ পানি উৎপাদনের চেয়ে নতুন প্রকল্প নিতে বেশি আগ্রহী। আমাদের বক্তব্য ছিল পানি বিতরণ ও ব্যবহারে ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন করা গেলে পানি সংকট অনেকখানি সমাধান হতো। কারণ চট্টগ্রাম শহরে যেখানে পানি আছে, সেখানে প্রচুর পানি অচপচয় হচ্ছে, আর যেখানে নেই, সেখানে শুধুই হাহাকার। বেশ ক’দিন আগে পুরো পানি সরবরাহ লবণাক্ত হয়ে পড়েছিল। চট্টগ্রাম ওয়াসার নীতিনির্ধারকদের হাতে সে খবর ছিল না। পরে গণমাধ্যমে লেখালেখির কারণে কর্তৃপক্ষের গোচরীভূত হয়। এটাতে প্রমাণিত হচ্ছে, ওয়াসা কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম তদারকি ও কাজের গুণগত মানোন্নয়নে কোনো তৎপরতা নেই। আর অবৈধ সংযোগ, পানির লাইনে লিকেজ, মিটার রিডারদের কারসাজি, মিটার নষ্টের নামে গড় বিল ইত্যাদি সিস্টেম লস পুরোটা খামছে ধরেছে চট্টগ্রাম ওয়াসাকে। অনেক জায়গায় ওয়াসার পানির লাইনে লিকেজ থেকে বিপুল পরিমাণ পানি নিঃসরণ হয়ে সোয়ারেজের লাইনে চলে গেলেও ওয়াসা কর্তৃপক্ষ কোনো খবরই রাখে না। রাস্তায় প্রতিনিয়তই ওয়াসার পানির লাইন পানি বের হচ্ছে। দেখার কেউ নেই। আর এ খবর ওয়াসাকে জানানোর সহজ উপায়ও নেই। ওয়াসা কর্তৃপক্ষ নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণে যেভাবে আগ্রহী। তেমনি বিরূপ মনোভাব হলো, চলমান প্রকল্পগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ কাজে। এছাড়া ভোক্তাদের মাঝে পানির অপচয় রোধে সচেতনতা বাড়ানো, পানির লাইনে নিয়মিত নজরদারি ও লাইনের রক্ষণাবেক্ষণ করা, লিকেজ বন্ধ, পানি চুরি, বিল নিয়ে গড়িমসি ও অবৈধ সংযোগ বন্ধ করা গেলে বর্তমান উৎপাদিত পানি দিয়ে নগরবাসীর সিংহভাগ সমস্যা সমাধান সম্ভব। আমাদের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ওয়াসার কোনো সুনির্দিষ্ট পানি বিতরণ পরিকল্পনা নেই। সব সেবা সংস্থারই সংকট বা আপদকালীন একটি পরিকল্পনা থাকে। ওয়াসার ক্ষেত্রে সে পরিকল্পনা আছে কি না জানা নেই। যদি কোনো স্থানে পানির সাময়িক সংকট হয়, সেটা ওয়াসা কীভাবে সমাধান করবে তা নিয়ে কোনো ভাবনা নেই। আছে শুধু নতুন নতুন পরিকল্পনা প্রণয়নের। আর এই ফাঁকে সাধারণ ভোক্তাদের হয়রানির পথ দুর্গম হয়ে যাচ্ছে। ওয়াসার পরিচালনা পর্ষদও সরকারি কর্মকর্তা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মনোনীত একজন এর চেয়ারম্যান। আর তার সঙ্গে কিছু সরকারি কর্মকর্তা ও প্রতিনিধি নিয়ে বোর্ড গঠিত হলেও এখানে ভোক্তাদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। তবে ব্যবসায়ীদের একাধিক প্রতিনিধি আছে। সেবা সংস্থায় ভোক্তাদের প্রতিনিধি না থাকলে ভোক্তা স্বার্থ বরাবরই উপেক্ষিত থাকবে। যারাই প্রশাসনে থাকবে তারাই কোনো না কোনো কায়েমি স্বার্থান্বেষী মহলের স্বার্থ হাসিলে ব্যস্ত থাকবে।
সরকারি নীতিনির্ধারক মহলের দৃষ্টিভঙ্গি আরেকটি সমস্যা। ক্ষমতাসীন সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, ঢাকা মানে বাংলাদেশ আর বাংলাদেশ মানে ঢাকা। যার কারণে সবকিছু ঢাকাকেন্দ্রিক। চট্টগ্রামকে আরও ৮-১০টি জেলার সঙ্গে তুলনা করা হয়। অথচ তারা কোনোভাবেই চিন্তা করে না, চট্টগ্রাম শুধু চট্টগ্রামবাসীর নয়। চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন। এই বন্দর দিৃয়ে যা আমদানি-রফতানি হয় তা শুধু চট্টগ্রামের জন্য হয় না। পুরো দেশের জন্য হয়ে থাকে। আবার একই সঙ্গে চট্টগ্রামে শুধু চট্টগ্রামের বাসিন্দারা ব্যবসা করেন না, পুরো দেশের মানুষ ব্যবসা করেন। বন্দর দিয়ে যেসব পণ্য আমদানি-রফতানি হয় তাও শুধু চট্টগ্রামবাসীর নয়। যে রাজস্ব চট্টগ্রাম বন্দর, কাস্টম আয় করেন তার পুরাটাই জাতীয় রাজস্ব তহবিলে যোগ হচ্ছে। গবেষণায় উঠে এসেছে, ৭৫-৮০ শতাংশ আমদানি-রফতানি চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে হয়ে থাকে। দেশের ৪০ শতাংশ ভারী শিল্প কারখানা চট্টগ্রামে। আর জাতীয় রাজস্বের ৬০ শতাংশ জোগান দেয় চট্টগ্রাম এবং জিডিপিতে এর অবদান ১২ শতাংশ। তারপরও চট্টগ্রামের জন্য কোনো বরাদ্দ বললেই নীতিনির্ধারক মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। তাই চট্টগ্রামের জন্য বরাদ্দ মানেই জাতীয় অর্থনীতির জন্য বরাদ্দ। বিষয়টি সেভাবেই ভাবতে না শিখলে হয়তো অদূর ভবিষ্যতে জাতীয় অর্থনীতি পুরোটাই বিকল হয়ে পড়বে।
দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আরেকটি জটিল সমস্যা হলো, শাসন ব্যবস্থায় সমাজের সব শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিত্ব ও অংশগ্রহণের অভাব। যদিও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মালিক সব জনগণ বলা হলেও বর্তমানে শাসন ব্যবস্থায় সমাজের সব পর্যায়ের নাগরিকের প্রতিনিধিত্ব ও অংশগ্রহণের সুযোগ সীমিত। শুধু জনপ্রতিনিধি নির্বাচন বা ভোট দেওয়া ছাড়া আর কোনো ভূমিকা নেই। যদিও এর আগে সে অধিকারও ছিল না। এখন ভোট নেওয়ার পর জনপ্রতিনিধিরা আর জনগণের তোয়াক্কা করে না। কথায় কথায় তারা বলেন, আমরা পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত। এটা সত্যিকারের গণতান্ত্রিক আচরণ নয়। একজন জনপ্রতিনিধি যে কোনো সময় তার কাজের জন্য জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য। জনপ্রতিনিধিরা জনগণের কাছে জবাবদিহির আওতায় না এলে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরাও জবাদদিহিতায় অভ্যস্ত হবে না, যা সত্যিকারের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বড় অন্তরায়। এজন্য সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক চর্চা আবশ্যক। এই সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক চর্চার বিষয়টি রাজনীতিতে অনুপস্থিতির কারণে সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে অনিয়ম, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, অবজ্ঞা ও সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত মূল্যহীন হয়ে পড়েছে। যার প্রভাব পড়েছে রাষ্ট্রীয় সেবাদানকারী সংস্থার ব্যবস্থাপনায়। যেখানে অনেকগুলো খাতে শুধু সরকারি কর্মকর্তারাই নীতিনির্ধারণ করে থাকেন আবার অনেক জায়গায় সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা মিলে নীতিনির্ধারণ করেন। অথচ এখানে নাগরিকদের অংশগ্রহণ বা যাদের জন্য এই সেবা সার্ভিস তাদের কোনো প্রতিনিধিত্ব থাকে না। তবে অনেক জায়গায় এসব পদগুলোও সমাজের ওপর তলার লোকজন দখল করে নেন। নীতিনির্ধারক মহল চিন্তাও করে না, যার জন্য এই সেবা বা বিধান তাদের কোনো মতামতের প্রতিফলন দরকার আছে কি না? ব্রিটিশ আমলের ঘুণে ধরা আমলাতন্ত্র সংস্কার ব্রিটিশরা করতে পারলেও বাংলাদেশ তা এখনও পারেনি। যার কারণে সেবাদানকারী সংস্থা ও নাগরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট কমিটিতে এখনও সেই ব্রিটিশদের নির্দেশিত পথেই হাঁটছে। যার কারণে ভোক্তা ও নাগরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট কমিটি ও সেবাদানকারী সংস্থায় এখনও সত্যিকারের ভোক্তা প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়নি। যদিও কোনো জায়গায় নাগরিকদের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকে, সেখানে সভাপতি কর্তৃক মনোনীত বলে আরও খাটো করা হচ্ছে। যার ফলে সত্যিকারের নাগরিকদের বৃহত্তর অংশের প্রতিনিধিত্বের চেয়ে সমাজের উপর তলার মানুষ বা ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর আশীর্বাদপুষ্টদের পুনর্বাসনের সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
তাই এখন সময় এসেছে নতুন করে চিন্তা-ভাবনা করার। বিশেষ করে সরকারি সেবাদানকারী সংস্থাগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের প্রশাসনিক ও আর্থিক জবাবদিহিতাকে নাগরিক পরীবিক্ষণের আওতায় আনতে হবে। নাগরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিয়োজিত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নাগরিক সংগঠনগুলোকে সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি নাগরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট কমিটি ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দান করতে হবে এবং এসব নাগরিক প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। একই সঙ্গে জাতীয় অর্থনীতি ও উন্নয়নের বৃহত্তম স্বার্থে চট্টগ্রামকে সত্যিকারের বাণিজ্যিক রাজধানীতে পরিণত করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। চট্টগ্রামকে অন্যান্য জেলার আদলে চিন্তা না করে জাতীয় অর্থনীতির হƒৎপি- হিসেবে বিবেচনা করে গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আবাসন, গণপরিবহন, নগর ব্যবস্থাপনা, শিল্প ও বাণিজ্য ইত্যাদি নাগরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে সরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও দক্ষতা বাড়ানো, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, নাগরিকদের সত্যিকারের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা, নাগরিকবান্ধব সেবা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। না হলে সরকারি প্রতিষ্ঠান বিটিসিএলের মতো সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রতিষ্ঠান হারিয়ে যাবে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

ভাইস প্রেসিডেন্ট
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)
পধননফ.হধুবৎ-মসধরষ.পড়স