চট্টগ্রামভিত্তিক কোম্পানিগুলো নিয়ে হতাশ বিনিয়োগকারীরা

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চট্টগ্রামভিত্তিক একাধিক কোম্পানির উৎপাদন ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার প্রধান লক্ষ্য ছিল উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানো, বাণিজ্যিক সম্প্রসারণ এবং মুনাফা বৃদ্ধি করা। অথচ কোম্পানিগুলো উল্টো রথে চলছে, যা নিয়ে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা চরম হতাশায় রয়েছেন। এক্ষেত্রে অনেকটা নীরব ভূমিকা পালন করছে বাংলাদেশে সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো।

জানা যায়, দেশের প্রথম গ্লাস উৎপাদন কারখানা উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরি লিমিটেড। ৬২ বছর বয়সী এ কোম্পানিটি একদিকে পুরোনো প্রযুক্তির কারখানা। এটির দুটি উৎপাদন ইউনিটের একটি বন্ধ, উৎপাদন ব্যয় বেশি, বাজারে অসম প্রতিযোগিতা, অদক্ষ নেতৃত্ব, বিনিয়োগ ও উদ্যোগের অভাবে কোম্পানিটি গত পাঁচ বছরে লোকসান করেছে ৪৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা। ফলে গত পাঁচ বছরে ফ্যাক্টরিটিকে বড় ধরনের আর্থিক সংকটে থাকার জন্য এফডিআর (স্থায়ী আমানত) ভেঙে ফেলতে হয়। পাশাপাশি করোনার প্রভাবে বিক্রিও তেমন নেই। একই অবস্থা ইস্টার্ন কেব্লস লিমিটেডের। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে কেব্লস ও কন্ডাক্টর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল চার হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। এর বিপরীতে উৎপাদন করা হয়েছে মাত্র এক হাজার ৯৪১ মেট্রিক টন। অর্থাৎ সক্ষমতার প্রায় ৪৩ শতাংশ। আর বিক্রিতে ছিল দুই হাজার ৭২ মেট্রিক টন, যা আগের অর্থবছরে বিক্রিতে ছিল দুই হাজার ৫১ মেট্রিক টন। কোম্পানির সক্ষমতার তুলনায় বিক্রি কম হওয়ায় নিট লোকসান হয়েছে ১২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এভাবে গত চার অর্থবছরের পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩১ কোটি ১৭ লাখ টাকা।

এছাড়া চলতি অর্থবছরের ছয় মাস লোকসানে থাকায় পুঞ্জীভূত লোকসান আরও বেড়েছে চার কোটি ৭৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ইস্টার্ন কেব্লের নিট পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ ৩৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। গত ২০১৯-২০ শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ছয় টাকা ৪৬ পয়সা। এরপর অর্থবছরের কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে চার টাকা ৬৮ পয়সা। চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে শেয়ারপ্রতি লোকসান (ইপিএস) হয়েছে এক টাকা ৯১ পয়সা।

রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি ইস্টার্ন কেব্ল কিছুটা কমাতে পারলেও লোকসান থেকে বের হতে পারছে না। আর ধারাবাহিক লোকসানের কারণে গত দুই বছর কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ না দিতে পারেনি।

অন্যদিকে ইস্পাত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেড দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। মূলত ব্যাংকঋণ জটিলতা, সাবস্টেশন, কাঁচামাল সংকট প্রভৃতি কারণে বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এমনকি ২০১৯-২০ অর্থবছরের ঘোষিত ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দিতে পারেনি।

ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে জানা যায়, দেশের দুই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চট্টগ্রামভিত্তিক বাংলাদেশে শিপিং করপোরেশন, পদ্মা অয়েল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, যমুনা অয়েল, ইস্টার্ন লুব, আরামিট লিমিটেড, ইস্টার্ন কেব্লস, উসমানিয়া গ্লাস, বিএসআরএম স্টিল, বিএসআরএম লিমিটেড, জিপিএইচ ইস্পাত, কেডিএস অক্সেসরিজ, প্রিমিয়ার সিমেন্ট, আরএসআরএম, আরামিট সিমেন্ট, হাক্কানি পোর অ্যান্ড পাল্প, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, হোটেল পেনিনসুলা, রিজেন্ট টেক্সটাইল, কাট্টলী টেক্সটাইল, ফ্যামিলি টেক্সটাইল, সিএনএ টেক্সটাইল, গোল্ডেন সন, সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল, অ্যাসোসিয়েট অক্সিজেন, লুব রেফ, ইমাম বাটন, মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডাইং ইত্যাদি। এরমধ্যে  ইস্টার্ন কেব্লস, উসমানিয়া গ্লাস, ইমাম বাটন, হাক্কানি পেপার অ্যান্ড পাল্প, মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডাইং, আরএসআরএম, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, রিজেন্ট টেক্সটাইল, ফ্যামিলি টেক্সটাইল এবং সিএনএ টেক্সটাইলের অবস্থা খুবই খারাপ। এসব কোম্পানি নিয়মিত বিনিয়োগকরীদের লভ্যাংশ প্রদান করতে পারে না। যদিও মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডাইং, আরএসআরএম, রিজেন্ট টেক্সটাইল এবং সিএনএ টেক্সটাইলের বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ।

অপরদিকে ইস্টার্ন কেব্লস, উসমানিয়া গ্লাস, ফ্যামিলি টেক্সটাইল এবং ওয়েস্টার্ন মেরিনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালু থাকলেও দীর্ঘদিন মুনাফা করতে পারে না। 

বিনিয়োগাকারীরা বলেন, চট্টগ্রামভিত্তিক পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত বেশ কয়েকটি কোম্পানির কার্যক্রম নিয়ে বিনিয়োগকারীরা সন্তুষ্ট নয়। আরএসআরএম, সিএনএ, ফ্যামিলি টেক্সটাইল, রিজেন্ট টেক্সটাইল, ওয়েস্টার্ন মেরিন, ইমাম বাটন, উসমানিয়া গ্লাস, ইস্টার্ন কেব্লসসহ বেশিরভাগ কোম্পানির অবস্থা খারাপ। কোনো কোনো কোম্পানি নানা অনিয়মে জড়িত। অথচ বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এবং চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জ এসব দেখে না।

এ বিষয়ে উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরি লিমিটেড কোম্পানির সচিব বিপ্লব কুমার মজুমদার শেয়ার বিজকে বলেন, কারখানার দুই নম্বর ফার্নেসের উৎপাদন চলতি অর্থবছরের শুরুতে চালু হয়েছে। এখন উৎপাদন ও বিক্রি হচ্ছে। যদিও করোনার প্রভাবে বিক্রি কম হওয়ায় স্টক জমে আছে। আর নতুন ৪০০-৫০০ কোটি টাকার কনটেইনার গ্লাস ইউনিট করার জন্য ফিজিবিলিটি স্টাডি ও মার্কেট স্টাডি হয়েছে।

এ বিষয়ে জানার জন্য ইস্টার্ন কেব্লস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ শেয়ার বিজকে বলেন, ইস্টার্ন কেব্লস লিমিটেড কখনোই লোকসানে থাকতে পারে না। কারণ আমাদের তৈরিকৃত কেব্ল মানে এক নম্বর। কিন্তু বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, পল্লী বিদ্যুৎসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর উদাসীনতা ও অসহযোগিতার কারণে আমরা লোকসানে আছি। তাদের বছরের কয়েকশ কোটি টাকার কেব্ল কিনতে হয়। এক্ষেত্রে সরাসরি পণ্য কেনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাও আছে। এছাড়া আমাদের পণ্য কেনার জন্য আমরা দপ্তরগুলোর প্রধানদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, তবুও কিনছে না। অথচ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্য কিনলে আমাদের উৎপাদন সক্ষমতা দ্বিগুণের বেশি করতে হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০