চট্টগ্রামের টেরিবাজারের ৮০ মার্কেটে ঈদবাণিজ্য: হাজার কোটি টাকার কাপড় বিক্রির প্রস্তুতি ব্যবসায়ীদের

 

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: ঈদ আসতে এখনও প্রায় দেড় মাস বাকি। এর মধ্যে চট্টগ্রামের পাইকারি কাপড়ের টেরিবাজার এলাকার ৮০ মার্কেটের দুই হাজার দোকান এখন প্রস্তুত কাপড় বিক্রির জন্য। ঈদকে ঘিরে এসব মার্কেটে এক হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হবে বলে ধারণা করছেন বাজার-সংশ্লিষ্টরা।

এ বাজারের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি দোকান ইব্রাহিম ম্যানসনের ‘মেগামার্ট’ দোকানের ৮০ শতাংশের অধিক পোশাক ভারতীয় বলে জানান ব্যবস্থাপক  মনজুর ইসলাম। তিনি আরও বলেন, এ দোকানে শুধু পুরুষের সব ধরনের কাপড় পাওয়া যায়। এর মধ্যে আছে শেরওয়ানি, স্যুট, ব্লেজার, পাঞ্জাবি, শার্ট, টি-শার্ট, টাই, জিন্স প্যান্ট, সু-সেন্ডেল, সাফারি, প্রসাধনী সামগ্রীসহ রেডিমেড সব আইটেম। প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার ডিজাইনের কাপড় আছে। আরেক বৃহৎ কাপড়ের দোকান ‘মনে রেখো’ নারীদের সব ধরনের পোশাক নিয়ে বসে ঈদ আয়োজনে। ‘মেগামার্টে’ দেখা যায় ৫০ জনের অধিক কর্মী এসব কাপড়ের বর্ণনা তুলে ধরেন আগত ক্রেতাদের কাছে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক সেলিম উদ্দিন শেয়ার বিজকে বলেন, এখন তো নারীরা খুব কমই শাড়ি পরেন। বেশিরভাগ এখন সালোয়ার-কামিজ পরেন। তাই এবারের ৮০ শতাংশ পোশাকই সালোয়ার-কামিজ বিভিন্ন ডিজাইনে রেখেছি। যার অধিকাংশ ভারতীয় পোশাক। তবে আমাদের এখানে সুবিধা হলো তুলনামূলক কম দামে ভালো পোশাকটি পাওয়া যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও কাস্টমস কর্মকর্তারা বলেন, ভারত থেকে বৈধ পথে আমদানি কমে গেছে। অবৈধ পথে শুল্ক না দিয়ে আসছে শত শত কোটি টাকার পণ্য। বিশেষ করে ঈদ সামনে রেখে চলছে রমরমা চোরাই পণ্যবাণিজ্য। বাণিজ্যিক রাজধানীর প্রতিটি ছোট-বড় শপিংমল, মার্কেট, বিপণিবিতানে বেশি পোশাক এখন ভারতীয় পণ্যের দখলে। ভারতীয় লাখ টাকা দামের শাড়ি, লেহেঙ্গা, থ্রিপিস থেকে শুরু করে সব বয়সীর শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি, জুতা, সেন্ডেল প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। বাহারি নামের এসব পোশাকের চাহিদা ও লাভ অনেক বেশি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা এসব পণ্য মজুত ও বিক্রিতে বেশি আগ্রহী। চট্টগ্রাম শহরের বাইরেও প্রতিটি জেলা শহরে অবাধে বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় পণ্য। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে নিয়ে আসা এসব পণ্যের আগ্রাসনে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশি শিল্প। সরকার হারাচ্ছে শত শত কোটি টাকার রাজস্ব। এ বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদ উপলক্ষে এ বছর কয়েক হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়েছে। এর ৮০ ভাগই ভারত থেকে এসেছে। কিন্তু এসব পণ্য বৈধ পথে আসেনি। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবাধে ঢুকছে ভারতীয় পণ্য। আর এসবের মূল্য পরিশোধ করা হচ্ছে হুন্ডিতে। এভাবে কয়েক হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, চোরাই পণ্য বিক্রিতে লাভ বেশি। শুল্ক ছাড়া এসব পণ্যের বাজারমূল্য অনেক কম থাকে। এ কারণে দেশি উৎপাদনমুখী শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভারতীয় পণ্যের কাছে মূল্য ও মানে অনেক দেশি পণ্য মার খাচ্ছে। এছাড়া বৈধ পথে আমদানিকারকরাও নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। বেশি লাভজনক হওয়ায় বৈধ আমদানির চেয়ে অবৈধ আমদানির দিকেই ঝুঁকছেন তারা। চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অভিজাত মার্কেটের ব্যবসায়ীরা এখন থেকেই ভারতীয় শাড়ি, থ্রিপিস থেকে শুরু করে বিভিন্ন ঈদপণ্যের মজুত শুরু করেছেন।

এদিকে বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় মাঝে মাঝে কিছু চোরাচালানিপণ্য জব্দ করা হলেও যে পরিমাণ পাচার হয়, তা তার এক সিকিভাগও নয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। অভিযোগ উঠেছে, সীমান্তে নিয়োজিত কতিপয় আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের যোগসাজশে চোরাচালানি সিন্ডিকেট অবৈধভাবে এসব পণ্য আনছে। অপরদিকে বন্ড সুবিধার আওতায় আনা কাপড় খোলাবাজারে বিক্রি হয় বলে অভিযোগ করেছেন বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী। অভিযোগ উঠেছে, ফ্রিস্টাইলে দেওয়া হয় বন্ড লাইসেন্স। ফলে ভুঁইফোঁড় প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে শত শত বন্ড লাইসেন্স রয়েছে। এসব লাইসেন্স দিয়ে আমদানি করা পণ্য খোলাবাজারে বিক্রি করে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হাতিয়ে নিচ্ছে দুষ্টচক্র।

ফ্যাশন ডিজাইনার ও উদ্যোক্তা নূজহাত কৃষ্টি শেয়ার বিজকে বলেন, ঈদবাজারকে ঘিরে দেখা যায় অধিকাংশ দোকানে ভারতীয় পোশাকের স্তূপ আর স্তূপ। অথচ তার চেয়েও অনেক ভালো দেশি পোশাক ক্রয়ে ক্রেতাদের মনোযোগ নেই। যা দেশি পোশাকশিল্প বিকাশে প্রধান বাধা।

টেরিবাজার দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান শেয়ার বিজকে বলেন, এ বাজার হতে চট্টগ্রামের সব উপজেলায় কাপড় নিয়ে যায় খুচরা ব্যবসা করার জন্য। পাশাপাশি যারা কাপড় বানিয়ে পোশাক তৈরি করেন, তারাও নিয়ে যান। বুটিক হাউজগুলো তাদের প্রয়োজন অনুসারে থান কাপড় নিয়ে যায়। আসন্ন ঈদ ঘিরে এক হাজার কোটি টাকা বাণিজ্যের প্রস্তুতি নিয়ে আছেন এ বাজারের ব্যবসায়ীরা।

তিনি আরও বলেন, এ বাজারের বিক্রেতারা সুনামের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। এখানে কোনো ধরনের অবৈধ কাপড় আসে না। তবে ভারতীয় পোশাকের চাহিদার কারণে ভারতীয় পোশাকের আধিক্য আছে।

 

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০