চট্টগ্রামের বাজারে বাড়ছে ভোগ্যপণ্যের দাম

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেল, গম, ডাল, সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিংকার, ইস্পাতের কাঁচামাল স্ক্র্যাপসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়মিত কমেছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত ডলার মূল্যে এসব পণ্যের আমদানি ব্যয় পরিশোধ করতে পারছেন না আমদানিকারকরা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারিত বিনিময় হারের তুলনায় ১০ থেকে ১২ টাকা বেশি দামে ডলার কিনে এলসির মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে। আবার পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় আমদানির ঋণপত্র খোলার হারও কমেছে। ফলে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ছে।

খানতুগঞ্জ পাইকারি বাজারের সর্বশেষ তথ্য বলছে, গত এক মাসের ব্যবধানে ভোজ্যতেলের দাম মণপ্রতি ১ হাজার টাকারও বেশি বেড়ে গেছে। গত বুধবার প্রতিমণ পাম অয়েল বিক্রি হয় ৫ হাজার ৫০০ টাকায়। যা এক মাস আগে চার হাজার ৪০০ থেকে চার হাজার ৫০০ টাকা ছিল। অন্যদিকে সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ছয় হাজার ১৫০ টাকায়। যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছিলো ৫ হাজার ৪০০ টাকা। যদিও বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম গত কয়েক মাসের তুলনায় সর্বনি¤œ অবস্থানে রয়েছে। খোলাবাজারে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ভোজ্যতেল। তাছাড়া মিল পর্যায়ে সরবরাহ ঘাটতি, পাইকারি বাজারের ট্রেডিং প্রতিষ্ঠান ও ডিও ব্যবসায়ীদের মজুত প্রবণতায় ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিরতা কোনোভাবেই দমন করা যাচ্ছে না।

একই অবস্থা গমের ক্ষেত্রেও। বিশ্ববাজারে গমের দাম কমেছে ধারাবাহিকভাবে। যুদ্ধ শুরুর পর গত মে মাসে যেখানে প্রতি টন গম ৫০০ ডলারের বেশি দামে বিক্রি হচ্ছিল। এখন প্রতি টন গম বিক্রি হচ্ছে ৩১০ থেকে ৩২৫ ডলারে। দুই মাস ধরে বিশ্ববাজারে গমের দাম কমলেও এর প্রভাব নেই ভোগ্যপণ্যের অন্যতম বাজার খাতুনগঞ্জে। গত মাসের তুলনায় প্রতি মণে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা দাম বেড়েছে। জুনে যেখানে প্রতিমণ ভারতীয় গম বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ৩৫০ থেকে ১ হাজার ৪৫০ টাকায়। এখন ওই গম প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকায়। আর অস্ট্রেলিয়ার গম বিক্রয় হচ্ছে এক হাজার ৮৭৫ টাকায়, যা এক মাস আগে ছিল এক হাজার ৬০০ টাকা।

ইনভেস্টিং ডট কমের তথ্য মতে, আন্তর্জাতিক বাজারে গত বুধবার প্রতি টন স্টিল স্ক্র্যাপ বিক্রি হয়েছে ৩৬৫ ডলারে। গত ৭ মার্চ স্ক্র্যাপের বুকিং দর উঠেছিল ৭০০ ডলারে। সেই হিসাবে, গত পাঁচ মাসে পণ্যটির দাম কমেছে টনে ৩৬৫ ডলার বা ৩১ হাজার ৮২৫ টাকা।

স্থানীয় বাজারে দাম বৃদ্ধির বিষয়ে নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক ভোজ্যতেলের একজন পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, সরকার নির্ধারিত দামে ভোজ্যতেলের সরবরাহ আদেশ (এসও) কিনেছিলেন ব্যবসায়ীরা। প্রায় এক মাস আগে বিক্রি হওয়া এসব এসওর বিপরীতে এসব ভোজ্যতেল মিল থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই সংগ্রহ করার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে পাইকারি বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় পুরনো এসব এসও দিয়ে ভোজ্যতেল সংগ্রহ করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। এর বিপরীতে বেশি দামে সরাসরি উত্তোলনযোগ্য নতুন এসও ছেড়ে বাজার থেকে ফের টাকা তুলছে প্রতিষ্ঠান। এতে বেশি দামে তেল কিনতে হচ্ছে।

এ সম্পর্কে খাতুনগঞ্জ আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, বিশ্ববাজারে দাম কমলেও খাতুনগঞ্জে এর কোনো প্রভাব নেই। ডলারের মূল্য ও আমদানির ঋণপত্র খোলার হার কম হওয়ায় উল্টো এখন বাজারে গমের দাম বাড়ছে। তবে বাজারে বিক্রি নেই বললেই চলে। তবে বড় বড় আমদানিকারকের কাছে পণ্য মজুত আছে। এখানে যারা (আমদানিকারকেরা) গম সরবরাহ করেন, তারা যদি দাম না কমান, তাহলে দাম কমার সুযোগ নেই।

চট্টগ্রামের বিভিন্ন পর্যায়ের আমদানিকারকরা বলেন, দেশের আমদানিকারকরা বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত ৯৫ টাকায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ডলার পাচ্ছে না। বরং এর চেয়ে ১০-১২ টাকা বেশি দামে এলসি নিষ্পত্তি করতে হচ্ছে। আর খোলাবাজারে তো ১১৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এতে অল্পসময়ে আমদানিকৃত পণ্যের ব্যয় প্রায় ১০ শতাংশের মতো বাড়ছে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারের খাদ্যপণ্যসহ তেল, জ্বালানি, গ্যাসসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম হ্রাস পাচ্ছে। এসব বিষয় নিয়ে আমদানিকারকদের দুশ্চিন্তা বাড়ছে। এতে আমদানিকারকরা আর্থিক সংকটে পড়তে পারেন। এ কারণে আমদানি ঋণপত্র খোলার হার কমছে। এতে শিল্পের কাঁচামাল, নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য, চিকিৎসা সামগ্রী ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে ব্যয় অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার দায়ভার শেষ পর্যন্ত ভোক্তা সাধারণকেই বহন করতে হবে। এর মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কারণে পণ্য পরিবহন ব্যয় বাড়ছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০