নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামকেন্দ্রিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সানম্যান গ্রুপ, সাদ মুসা গ্রুপ ও টিকে গ্রুপসহ ১৬টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে শ্রম অসন্তোষের আশঙ্কা করেছে কলকারখান ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর চট্টগ্রাম। তবে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) করা তালিকায় এমন ৮০টি কারখানা রয়েছে বলে জানা যায়।
প্রায় প্রতি বছর ঈদের আগে বেতন ও উৎসব ভাতার দাবিতে পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে শ্রম অসন্তোষের ঘটনা ঘটে। আসন্ন ঈদুল ফিতরের আগে যেসব কারখানায় বেতন, উৎসব বোনাস এবং ছুটি-সংক্রান্ত শ্রম অসন্তোষের আশঙ্কা রয়েছেÑএমন কারখানাগুলোর তালিকা করেছে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর। এতে বিভিন্ন ব্যক্তির একাধিক কারখানাসহ চট্টগ্রামে ১৬টি প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে আসে।
অধিদফতরের করা তালিকায় দেখা যায়, সাবেক সংসদ সদস্য ও ৪১টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক সানম্যান গ্রুপের চেয়ারম্যান মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের চট্টগ্রামের পাঁচটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ গ্রুপের চট্টগ্রামে যে পাঁচটি কারখানায় শ্রম অসন্তোষের সম্ভাবনা আছে সেগুলো হলোÑচান্দগাঁও কালুরঘাট ভারী শিল্প এলাকায় ‘গোল্ডেন হাইটস প্রাইভেট লিমিটেড’, নাসিরাবাদ শিল্প এলাকায় বায়েজিদ বোস্তামী রোডে ‘শিরিনা গার্মেন্টস অ্যান্ড টেক্সটাইলস লিমিটেড’, ষোলশহর এলাকায় ‘গ্লোরী ইন্ডাস্ট্রিজ শিমিটেড’ ও ‘পাইওনিয়ার ড্রেসেস লিমিটেড’ এবং খুলশীর বায়েজিদ বোস্তামী রোডে ‘গোল্ডেন হরাইজন লিমিটেড’।
চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী মুুহাম্মদ মোহসিনের প্রতিষ্ঠান সাদ মুসা গ্রুপের দুটি কারখানা রয়েছে এ তালিকায়। বায়েজিদের জালালাবাদ কুলগাঁও খাজা রোডে ‘সাদ মুসা ফেব্রিকস লিমিটেড’ ও ‘সাদ মুসা হোমটেক্স অ্যান্ড ক্লথিং’ তালিকায় রয়েছে।
চট্টগ্রামের বৃহৎ শিল্প গ্রুপ, টিকে গ্রুপের দুটি কারখানাও রয়েছে শ্রম অসন্তোষের আশঙ্কায়। টিকে গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠানই কর্ণফুলী নদীর পূর্ব পাড়ে বোয়ালখালীর চরখিদিরপুরে। এ দুটি প্রতিষ্ঠান হলো ‘এমএএফ নিউজপ্রিন্ট মিলস লিমিটেড’ ও ‘টি কে কেমিক্যাল কমপ্লেক্স লিমিটেড’।
এছাড়া আরও যেসব কারখানা শ্রম অসন্তোষের আশঙ্কার মধ্যে আছে সেগুলো হলোÑচান্দগাঁও বহদ্দারহাট এলাকায় কামালের পরিচালিত ‘মার্ক ফ্যাশন ওয়্যার লিমিটেড (ইফনিট-২)’, ডবলমুরিং মুনসুরাবাদ এলাকায় মো. রুস্তমের পরিচালিত ‘তায়্যেবা ফ্যাশন লিমিটেড’, সীতাকুণ্ড ফৌজদারহাট এলাকায় সরকারি প্রতিষ্ঠান ‘জলিল টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড’। যদিও এ মিলটি ২০০৪ সাল থেকে বন্ধ। নুরুল কাদেরের পরিচলিত পাহাড়তলীর সাগরিকা রোডে ‘স্পেসিও অ্যাপারেলস লিমিটেড’। ওয়াহিদুল ইসালাম চৌধুরীর পরিচালিত হালিশহর ছোটপুল এলাকায় ‘কার্ডিনাল অ্যাপারেলস লিমিটেড’। মো. সাজ্জাদের পরিচালিত কালুরঘাট এলাকায় ‘বেজ টেক্সটাইল লিমিটেড’ এবং আবদুল হামিদ পরিচালিত পাহাড়তলী এলাকায় ‘এমঅ্যান্ডএস সোয়েটার লিমিটেড’।
গত রোববার জেলা প্রশাসক এবং কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর চট্টগ্রামের আয়োজনে আঞ্চলিক ক্রাইসিস প্রতিরোধ কমিটির ১০ম সভায় অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের উপ-মহাপরিচালক মো. আবদুল হাই খানসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিধি ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় সিএমপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় শ্রম অসন্তোষের আশঙ্কা রয়েছে এমন ৮০টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা করেছে মহানহর পুলিশ।
সভায় সানম্যান গ্রুপের প্রতিনিধি ও সাদ মুসা গ্রুপের প্রতিনিধির কাছে জানতে চাওয়া হয় শ্রমিকদের বেতন ও উৎসব বোনাস কবে পরিশোধ করা হবে। সানম্যান গ্রুপের কর্মকর্তা ১০ তারিখে বেতন ও ১৩ তারিখে উৎসব বোনাস পরিশোধের কথা জানান। সাদ মুসা গ্রুপের প্রতিনিধি ১২ তারিখে বেতন ও ১৩ তারিখে বোনাস দেওয়ার কথা জানান।
শ্রম পরিদর্শক রাজু বড়–য়া বলেন, আমরা চাই কোনো প্রতিষ্ঠানে শ্রম অসন্তোষ না হোক। তাই আমরা শ্রমিক প্রতিনিধি ও কারখানা মালিকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছি। আশা করি, মালিক পক্ষ যথাসময়ে বেতন ও উৎসব ভাতা পরিশোধ করে দেবে।
চট্টগ্রামের ১৬ প্রতিষ্ঠানে শ্রম অসন্তোষের শঙ্কা
