Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 12:26 pm

চট্টগ্রামে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ‘কিছু অসংগতি’ পেয়েছে তদন্ত কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রামে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে গঠিত কমিটি ‘কিছু অসংগতি’ পাওয়ার কথা জানিয়েছে।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি গঠিত উপকমিটির আহŸায়ক সংসদ সদস্য এম এ লতিফ ও মজিবুর রহমান মনজু গতকাল বৃহস্পতিবার এক্সপ্রেসওয়ে পরিদর্শন শেষে এ বিষয়ে কথা বলেন।

দুপুর ১২টার দিকে পতেঙ্গা প্রান্ত থেকে পরিদর্শন শুরু করে কমিটি। পরে তারা লালখান বাজার মোড়ে এসে পরিদর্শন শেষ করেন। লালখান বাজার অংশে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কয়েকটি পিলারে ফাটল বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিল।

এম এ লতিফ বলেন, আমরা পতেঙ্গা অংশ থেকে বিভিন্ন পয়েন্টে দেখেছি। এক্সপ্রেসওয়ের ওপরে দুপাশের সীমানা দেয়ালে যে ক্লাম লাগানো হয়েছেÑসেগুলো মানসম্মত নয়। ফিনিশিংয়ে কিছু সমস্যা আছে। দুয়েক জায়গায় রডও বেরিয়ে আছে। এসব অসংগতি প্রকল্প পরিচালক ও কনসালট্যান্টকে দেখিয়েছি।”

ফাটলের বিষয়ে এম এ লতিফ বলেন, কিছু ফাটল এখানে (লালখান বাজার অংশের পিলারে) দেখেছি। আমাদের তিন মাস সময় আছে। নির্মাণকাজে কোথাও কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না তা সব দেখে প্রতিবেদন দেব। “

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হয়েছিল। সেই সব অভিযোগ তদন্ত এবং নির্মাণকাজের গুণগত মান যাচাইয়ে উপকমিটি গঠন করে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনের পাশাপাশি প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে সভা করবেন উপ-কমিটির সদস্যরা। এ ছাড়া চট্টগ্রামে নিজেদের মধ্যেও বৈঠক করবে কমিটি।

নগরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে যৌথভাবে কাজ করছে বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ও চীনের র‌্যাঙ্কিন।

জানতে চাইলে পরিদর্শক দলের সঙ্গে থাকা সিডিএ’র প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান বলেন, এখানে যা আছে তা ফাটল নয়, এয়ার ক্র্যাক। এ ধরনের স্ট্রাকচারে এরকম ক্র্যাক থাকে। তার পরও এখানে গাড়ি তুলে যাচাই করা হয়েছে, কোনো ফাটল নেই।

ফিনিশিং এ কিছু ছোটখাটো বিষয় আছে। সেগুলো আমরা কনসালট্যান্ট ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বলেছি। এগুলো অল্প সময়ে সংশোধন যোগ্য।”

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচারের ব্যবস্থাপক মনির হোসেন বলেন, ওয়েট লিফটিং করে আমরা যাচাই করেছি, এগুলো ফাটল নয়। আর যেসব অসংগতির কথা বলা হচ্ছে সেগুলো মেজর কিছু নয়। অল্প সময়ে ঠিক করা যাবে।”

নগরীর লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রায় ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ উড়াল সড়ক নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে একনেকে অনুমোদন হওয়ার সময় ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটি তিন বছরের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল।

পরে ২০২২ সালে নকশা ‘সংশোধন’ করে আরও এক হাজার ৪৮ কোটি টাকা (আগের ব্যয়ের চেয়ে ৩২ শতাংশ) ব্যয় বাড়িয়ে মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

ইতোমধ্যে সিডিএ বোর্ড সভায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটির নাম প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে করার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে।

২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে কাজ শুরু হলেও ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রæয়ারি প্রধানমন্ত্রী নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

সবশেষ ২০২২ সালের সংশোধিত প্রস্তাবে চট্টগ্রাম বন্দরে চলাচলকারী যানবাহনের জন্য রাস্তা উš§ুক্ত রাখতে প্রকল্পের অ্যালাইনমেন্টে পরিবর্তন করা হয়। এছাড়া বন্দরের গাড়ি সহজে চলাচলের জন্য যথাযথ ‘ফাউন্ডেশন, সাব স্ট্র্যাকচার ও সুপার স্ট্র্যাকচার’ তৈরি করে নতুন নকশায় অ্যালাইনমেন্ট করার প্রস্তাব করা হয়।

১৬ কিলোমিটার উড়াল সড়কটি বিমানবন্দর এলাকা থেকে শুরু হয়ে ইপিজেড-বন্দর-বারেকবিল্ডিং-চৌমুহনী হয়ে দেওয়ানহাট রেলসেতুর পশ্চিম পাশ দিয়ে পাহাড় ঘেঁষে টাইগার পাস মোড়ের পর মূল সড়কের ওপর দিয়ে লালখান বাজার মোড় পেরিয়ে ওয়াসার মোড়ে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে গিয়ে মিলবে।

ইতোমধ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মূল কাঠামোর কাজ শেষ হয়েছে। কয়েকটি র‌্যাম্প নির্মাণের কাজও শুরু হয়েছে। বিদ্যুতায়নের কাজ শেষ হলে এটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে র‌্যাম্প থাকবে ১৪টি। এর মধ্যে জিইসি মোড়ে একটি, টাইগারপাসে দুটি, আগ্রাবাদে চারটি, ফকিরহাটে একটি, নিমতলায় দুটি, সিইপিজেডে দুটি এবং কেইপিজেড এলাকায় দুটি র‌্যাম্প থাকবে।

আর আগ্রাবাদ এলাকার চারটি র‌্যাম্পের মধ্যে জাতিতাত্তি¡ক জাদুঘর সড়কে একটি, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার সড়কে একটি এবং আগ্রাবাদ এক্সেস সড়কে হবে দুটি র‌্যাম্প।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নগরীর প্রান্তটি নিচের মূল সড়কের ওপর দিয়ে লালখান বাজার মোড় পেরিয়ে ওয়াসার মোড়ে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে গিয়ে মিলবে।