নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে ২০২৩ সালে কর্মরত অবস্থায় মারা গেছেন বিভিন্ন পেশার ১১৮ শ্রমিক। নিহতদের মধ্যে সর্বাধিক ৩৩ জন নির্মাণ খাতের, পরিবহন খাতের ২৪ ও কৃষি খাতের ১১ শ্রমিক রয়েছেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) সূত্রমতে, চট্টগ্রামে ২০২৩ সালে ১১৮ কর্মরত শ্রমিক নিহত হয়েছেন। ২০২২ সালে নিহত হওয়া শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ২৩৮ জন। এর মধ্যে বিএম ডিপোয় বিস্ফোরণের ঘটনায় ২০২২ সালে ৪৯ শ্রমিক নিহত হয়েছিলেন। এ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে চট্টগ্রামে জানুয়ারি-মার্চে মারা গেছেন ৪১ ও আহত হয়েছেন ৫৩ জন শ্রমিক। এপ্রিল-জুনে নিহত হয়েছেন ২১ ও আহত হয়েছেন ১৫ জন। জুলাই-সেপ্টেম্বরে নিহত হয়েছেন ২৪ জন। আহত হয়েছেন ১৭ এবং অক্টোবর-ডিসেম্বরে নিহত হয়েছেন ২৫ এবং আহত হয়েছেন ১৯ জন। নিহতদের মধ্যে সর্বাধিক ৩৩ জন নির্মাণ খাতের, পরিবহন খাতের ২৪, কৃষি খাতের ১১ শ্রমিক এবং জাহাজভাঙা শিল্পের সাত নিহত এবং ৩০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। এছাড়া অক্সিজেন কারখানায় বিস্ফোরণে ছয়, দোকানের কর্মচারী তিন, এনজিওকর্মী তিন, নিরাপত্তাকর্মী তিন, ইপিজেডে দুই, গৃহকর্মী দুই, মৎস্য শ্রমিক চার, চা-শ্রমিক দুই, পোশাক শ্রমিক এক, সরকারি জেটিতে এক, কাগজ কারখানায় এক, স্টিল মিলে এক এবং অন্যান্য খাতে ১৪ শ্রমিক মারা গেছেন। এছাড়া ২০২৩ সালে অক্সিজেন কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় ৩০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। জাহাজভাঙা শিল্পে ৩০, ইপিজেডে ১৫, নির্মাণ খাতে ১১, পরিবহন খাতে ১৫, কৃষি খাতে চার, চা-শ্রমিক আটসহ বিভিন্ন খাতে ১৩৪ জন শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে আহত হয়েছেন।
মারা যাওয়ার কারণ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৩৩ শ্রমিক, যা মোট নিহতের ২৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ। আর কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন বিভিন্ন খাতের ২৮ জন শ্রমিক। অর্থাৎ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শ্রমিক মৃত্যুর হার ২৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ। অর্থাৎ চট্টগ্রামে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট এবং সড়ক দুর্ঘটনায় ৫১ দশমিক ৭০ শতাংশ শ্রমিক নিহত হয়েছেন।
শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতারা বলছেন, কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের ন্যূনতম নিরাপত্তা ব্যবস্থা পূরণ হচ্ছে না। এমনকি যারা নিরাপত্তা সরঞ্জাম দিচ্ছে সেগুলোও পর্যাপ্ত নয়। যে কারণে শ্রমিকরা কাজের ভালো পরিবেশ পাচ্ছেন না।
এ বিষয়ে বিলসের সহকারী প্রোগ্রাম অফিসার ফজলুল করিম শেয়ার বিজকে বলেন, বেশির ভাগ ভারী শিল্প-কারখানায় শ্রমিকরা যথাযথ সেফটি নিয়ে কাজ করেন না। ভারী বা ঝুঁকিপূর্ণ কাজের জন্য শ্রমিকদের যেসব পোশাক দরকার সেগুলো সেই প্রতিষ্ঠানের সরবরাহ করার কথা থাকলেও কিছু ক্ষেত্রে অনেক প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করে না। আবার কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদেরও গাফিলতিও আছে। ফলে কর্মপরিবেশ নিশ্চিত না হলে শ্রমিকদের কাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না। সেজন্য প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি শ্রমিকদেরও নিরাপত্তা নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আর শিল্পঘন এলাকা হওয়ার কারণে চট্টগ্রামে শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠছে।