Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 8:39 pm

চট্টগ্রামে কোকেনের চালানের নেপথ্যে ‘নাইজেরীয় চক্র’: অধিদপ্তর

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ধরা পড়া কোকেনের চালানের নেপথ্যে ‘নাইজেরীয় একটি চক্র’ জড়িত রয়েছে বলে তথ্য পেয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। গতকাল মঙ্গলবার অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে এসে এ তথ্য দিয়েছেন। সোমবার সকালে প্রায় চার কেজি কোকেনসহ বিমানবন্দরে বাহামার এক নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মোস্তাফিজুর রহমান বলছেন, এ চালানের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকায় অবস্থান করা দুই নাইজেরীয়কে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। কারণ কোকেনসহ গ্রেপ্তার নারীর সঙ্গে তাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ছিল। এ ঘটনায় চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানায় একটি মামলা করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। মামলার তথ্য অনুযায়ী, গ্রেপ্তার স্টাসিয়া শাতে রোলি নামের ৫৪ বছর বয়সী ওই নারী বাহামার নাগরিক। তার কাছ থেকে তিন কেজি ৯০০ গ্রাম কোকেন উদ্ধার করা হয়। পরে তাকে নিয়ে অভিযান চালায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ জানুয়ারি ঢাকায় আট কেজি ৩০০ গ্রাম কোকেন উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় ছয় বিদেশি ও দুই বাংলাদেশিকে। তখন তাদের কাছ থেকে নতুন চালানের বিষয়ে তথ্য পেয়েছিল অধিদপ্তর। ডিএনসি জানাচ্ছে, শাতে রোলি গত ১২ জুলাই ব্রাজিলের সাওপাওলো থেকে রওনা দিয়ে দুবাই হয়ে ১৩ জুলাই চট্টগ্রামে আসেন। আগে থেকে তার পাসপোর্ট নম্বর, ছবি ও বিভিন্ন তথ্য অধিদপ্তরের কাছে থাকা এপিবিএসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা তাকে নজরদারিতে রেখেছিল।

চালানটি ধরতে পূর্বপ্রস্তুতির বিষয়ে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শাতে রোলিকে ধরতে ডিএনসির একটি দল ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে এসে অবস্থান নেয়। আর গত ১২ জুলাই থেকে ডিএনসি ও এপিবিএনের একটি দল ঢাকা বিমানবন্দরে অবস্থান নেয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে ঢাকার বদলে মাদক পাচারকারীরা চট্টগ্রাম বিমানবন্দরকে বেছে নেয় বলে অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের ধারণা।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ১৩ জুলাই সকাল ৮টায় যখন শাতে রোলি চট্টগ্রামে নামেন, তখন তার সঙ্গে কোনো লাগেজ ছিল না। তবে সোমবার তিনি তার লাগেজ আনতে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান। তখন বিমানবন্দর কাস্টমসের সহযোগিতায় তাকে আটক করা হয়। মামলার পর তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। শাতে রোলির লাগেজ স্ক্যানিং করার সময় মাদকের কোনো নমুনা শনাক্ত হয় না। তখন লাগেজ খোলা হয়। দেখা যায়, তার লাগেজের মধ্যে একটি আইপিএস। সেই আইপিএসের মধ্যে একটি কার্টন, যার ভেতরে সাতটি পলিব্যাগ। তাতে সাদা বর্ণের কোকেনসদৃশ পদার্থ। ডিএনসির একটি টিম রাসায়নিক পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়, সেগুলো কোকেনই।

ডিএনসির কর্মকর্তারা বলছেন, শাতে রোলিকে আটকের পরই তার কাছ থেকে মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। মোবাইলের কল রেডর্ক থেকে জানা যায় তার সঙ্গে কারা যোগাযোগ করেছে। সে অনুযায়ী, ঢাকায় অবস্থান করা দুই নাইজেরীয়কে নজরদারির আওতায় আনা হয়। মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, শান্তে রোলি অবিবাহিত। তিনি দাবি করছেন, চিকিৎসার জন্য একটি চক্র কাগজপত্র স্বাক্ষর করাতে তাকে বাংলাদেশে আসতে বলেছিল। এ সময় তারা তাকে একটি বাক্স দিয়ে সেটি বাংলাদেশে নিয়ে আসতে বলেছিল। তাই সেটি তিনি নিয়ে এসেছেন।

অভিযানের নেতৃত্বে থাকা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক দেওয়ান মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমাদের পূর্বঅভিজ্ঞতা বলছে, বাংলাদেশে কোকেন ব্যবহারকারী মাদকসেবীর সংখ্যা প্রায় শূন্যের কোঠায়। এ কারণে দেশে কোকেনের চাহিদাও নেই। ‘এখন আন্তর্জাতিক মাদক পাচারকারীরা বাংলাদেশকে রুট হিসেবে ব্যবহার করছে। এখান থেকে তারা ইউরোপ, আমেরিকাসহ অন্যান্য উন্নত দেশে কোকেন পাচার করে।’

ডিএনসি কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন, শাতে রোলি বাহামার নাগরিক হলেও তিনি বাংলাদেশে এসেছেন ব্রাজিলের সাওপাওলো বিমানবন্দর হয়ে। এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি বিমানে প্রথমে দুবাই, সেখানে থেকে ফ্লাই দুবাইয়ের একটি ফ্লাইটে চট্টগ্রামে এসে পৌঁছান।
চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ হোটেলে অবস্থান নিয়েছিলেন শাতে রোলি। নাইজেরিয়া থেকে অনলাইনে তার জন্য হোটেল বুক এবং বিলও পরিশোধ করা হয়।