নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: আন্তর্জাতিক বাজারের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে ঈদের পরপর দেশের বাজারে লিটারপ্রতি সয়াবিনের দাম বাড়ানো হয় ৩৮ টাকা। এ বাড়তি দামেও সয়াবিন বাজারে মিলছে না। বাজারে গুজব চলছে, যুদ্ধের কারণে দাম আরও বাড়বে। আর বাড়তি দামে বিক্রির জন্য খুচরা পর্যায়ের দোকানদাররা আগের দামে কেনা বিপুল পরিমাণ সয়াবিন তেল গুদামে মজুদ করে রেখেছেন। গত দুই দিনে চট্টগ্রামে তিন দোকানে প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধার করা হয়েছে। এমন তথ্য পাওয়া গেল জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, নতুন করে দাম বাড়ানোর আগে কেনা তেল বাড়তি দামে বিক্রির জন্য খুচরা পর্যায়ের দোকানদাররা আগের দামে কেনা বিপুল পরিমাণ সয়াবিন তেল গুদামে মজুত করে রেখেছেন। গত দুই দিনে চট্টগ্রামে তিন দোকানে প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীতে গতকাল এক মুদি দোকানির তিন গুদামে মজুত অবস্থায় ১৫ হাজার লিটার সয়াবিন তেল পেয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। বাজারে তেলের সংকটের মধ্যে ওই দোকানি বোতলজাত সয়াবিনগুলো বিক্রি না করে গুদামে তালাবদ্ধ করে রেখেছিল বলে জানিয়েছেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
গতকাল দুপুরে নগরীর পাহাড়তলী বাজারের বিল্লি লেইনে জনৈক সিরাজ সওদাগরের দোকানে অভিযান চালায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের টিম। এর আগে গত রোববার দুপুরে নগরীর ষোলশহরে কর্ণফুলী মার্কেটের ‘মেসার্স খাজা স্টোরে’ অভিযান চালিয়ে একটি গোপন কুঠুরিতে রাখা এক হাজার ৫০ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল উদ্ধার করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আগের রাতে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার বাগানবাজার এলাকার দক্ষিণ গজারিয়া গ্রামে মুদি দোকানি আকতার হোসেনের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ২ হাজার ৩২৮ লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধার করে স্থানীয় প্রশাসন। জব্দ তেল সরকারিভাবে নতুন দর নির্ধারণের আগে অর্থাৎ ঈদুল ফিতরের আগে কিনে গুদামজাত করা হয়েছিল বলে অভিযানকারী টিমের কাছে দোকানি স্বীকার করেছেন।
নগরীর চকবাজারে বাজার করতে আসা শাহেদ সরওয়ার বলেন, বোতেলের গায়ে লিখা আছে ৭৮০ টাকা। আর দোকানদাররা ৯০০ টাকার কমে বিক্রয় করছে না। এ নিয়ে অনেক তর্ক করলাম। কিন্তু লাভ হলো না। তাদের ইচ্ছা মতো দাম কিনতে হলো; উপায় নেই। তাদের লোভ মেটাতে গিয়ে তারা দেশের যে কোনো সংকটকে আরও জটিল করে তোলে। অনিয়মের জন্য ১০ হাজার বা এক লাখ জরিমানা না করে তাদের আজীবন ব্যবসা নিষিদ্ধ করা উচিত। তাদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আলাদা সংস্থা করা উচিত।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, জনগণের নিত্যব্যবহার্য ভোজ্যতেল লুকিয়ে রেখে যারা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনুনাগ ব্যবস্থার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।
এদিকে গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ভোজ্যতেলের বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে সিটি গ্রæপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান বলেন, ৩৮ টাকা তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে, সিদ্ধান্ত হয়েছে ১৯৮ টাকা, যেটি গত ৫ তারিখে নির্ধারিত হয়েছে। আজকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন তেলের দাম ২ হাজার ৫০ ডলার টন। গত শুক্রবার এই দামে ক্লোজ হয়েছে। সেটার কস্টিং অ্যাভারেজ করলে ২২২ টাকা লিটারপ্রতি দাম পড়ে। বাড়ানোর সময় খুব মন্থরগতিতে বাড়ে, এটা ব্যবসার ধর্ম। যখন কমে সেটা মিল মালিকদের ওপর এবং পাইকারি ব্যবসায়ীদের ওপর পড়ে। তেলের দাম শুক্রবার থেকে বাড়ানো হয়েছে। অথচ তেল নেই, দোকানদাররা তেল সরিয়ে রেখেছে। সেটার জন্য তো মিল মালিক দায়ী নয়। আর আজকে মিল মালিকরা জবাবদিহি করছেন। কিন্তু যারা তেল কেনেন তারা আন্তর্জাতিক বাজারে কার কাছ থেকে কিনছেন, কে বিক্রি করছে, তারা শুধু কোম্পানির পরিচয়টাই জানে। তিনি আরও বলেন, তেলের দাম যখন কম তখন সরকার যদি ৫-৭ লাখ টন কিনে এনে রেখে দেয়, আর বাজার যখন ঊর্ধ্বমুখী হবে তখন সরকার তার স্টক থেকে কিছু তেল রিফাইনারিকে দিয়ে দেয়, তাহলে বাজার স্থিতিশীল থাকে।
এ বিষয়ে অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজউল্লাহ বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা সিরাজ সওদাগরের মুদি দোকানে অভিযান চালাই। সেখানে সামান্য তেল বিক্রির জন্য রাখা হয়েছিল। আমরা তার তিনটি গুদাম একে একে পরিদর্শন করি। তালাবদ্ধ গুদামগুলো থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বোতলজাত ১৫ হাজার লিটার সয়াবিন তেল পেয়ে সেগুলো জব্দ করি। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ঈদুল ফিতরের আগে কেনা দামে তেলগুলো খুচরা দোকানিদের কাছে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া তেল মজুত করায় সিরাজ সওদাগরকে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ নিয়ে গত দুই দিনে চট্টগ্রামে প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধার করা হয়েছে, যেগুলো বাজারে সংকটের মধ্যে বিক্রি না করে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল।’