দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত বন্দরনগরী চট্টগ্রামে গতকাল শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। সরকারি উদ্যোগে প্রতি বছর ঢাকায় বাণিজ্যমেলা হলেও চট্টগ্রামে এ মেলার আয়োজন করে থাকে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (সিসিসিআই)। গতকাল শেয়ার বিজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৫তম বারের মতো আয়োজিত এ মেলার উদ্বোধন করেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। মাসব্যাপী এ মেলা আয়োজিত হয়েছে চট্টগ্রাম মহানগরীর রেলওয়ে পোলো গ্রাউন্ডে। কান্ট্রি পার্টনার হিসেবে থাকছে বন্ধুরাষ্ট্র থাইল্যান্ড। এতে অংশ নিয়েছে ভারত ও ইরান। প্রথমবারের মতো যুক্ত হয়েছে মরিশাস। ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাণিজ্যমেলার পরিসর বড় হলেও চট্টগ্রামের এ মেলায়ও প্রতিদিন লক্ষাধিক দর্শনার্থীর সমাগম হয় বলে জানিয়েছে সিসিসিআই।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য একাধিক রাষ্ট্রের সঙ্গে দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক সুদৃঢ় করার পাশাপাশি দেশি-বিদেশি নতুন নতুন পণ্য ক্রেতাদের সামনে উপস্থাপন করা। দেশি পণ্য সুলভ মূল্যে প্রাপ্তিও এর বড় আকর্ষণ। সেই সঙ্গে আকর্ষণীয় বিদেশি পণ্য এক ময়দানে পাওয়ার বিষয়টিও আকৃষ্ট করে ক্রেতাকে। অতীতে একাধিক বিদেশি পণ্য মেলার মাধ্যমে দেশের মাটিতে পা রেখে পরে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে খুচরা বাজারে প্রবেশ করে স্থায়ী হয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি অনেক প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নিয়ে বাজারে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে পারে জনসাধারণকে। বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলোও মেলা সামনে রেখে বাজারে আনে নতুন পণ্য। চাহিদা যাচাই সাপেক্ষে পরে সেগুলো খুচরা বাজারে নিয়মিত করার সুযোগও সৃষ্টি হয়। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান অবশ্য নিজেদের মৌলিক কিছু পণ্য শুধু মেলায় বিক্রি করে বাড়ায় এর আকর্ষণ। উদ্যোক্তাদের মতে, মেলার মাধ্যমে দেশীয় পণ্যের বাজার সম্প্রসারণের সুযোগের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের বিকাশও ঘটে থাকে।
বড় আয়োজন নিয়ে কিছু অভিযোগও থাকে। চট্টগ্রামের বাণিজ্যমেলা আয়োজকদের অভিযোগ, ২৪ বছর ধরে চললেও আজও এর জন্য স্থায়ী কোনো ময়দান বরাদ্দ হয়নি। পোলো গ্রাউন্ড পেতে দেরি হওয়ায় এবারের মেলা শুরু হতেও বিলম্ব হয়েছে কিছুটা। অন্যদিকে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের অভিযোগ ধুলোবালি ও সঠিক দিকনির্দেশনা নিয়ে। মেলায় প্রবেশ করে অনেকে হারিয়ে যান মাঝে মাঝে। এবারের মেলায় অবশ্য ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। থাকছে মেডিক্যাল টিম। তবে সব মিলিয়ে বাণিজ্যমেলার আয়োজন সুষ্ঠু কাঠামোয় রয়েছে কি না, সে বিষয়ে নজর রাখা প্রয়োজন। যে ধরনের পণ্যের চাহিদা দেশের মানুষের মাঝে রয়েছে, সেগুলো মেলায় খুঁজে না পেলে সন্তুষ্ট করা যাবে না ক্রেতাদের। মেলা উপলক্ষে বিদেশি ব্যবসায়ীরা দেশে অবস্থান করছেন। তাদের নিরাপত্তার দিকগুলোও নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তাদের মাধ্যমে দেশীয় পণ্য রফতানির ব্যবস্থা করা যায় কি না, সেটিও আয়োজকরা ভেবে দেখবেন আশা করি। অভ্যন্তরীণ বাজারের পাশাপাশি বিদেশেও আমাদের পণ্যের বাজার আরও সম্প্রসারিত হোক সে প্রত্যাশা রইলো।
Add Comment