Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 4:12 pm

চট্টগ্রামে বিএসআরএমের কারখানায় মিলল গ্রেনেড

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: ইস্পাত খাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলস (বিএসআরএম) লিমিটেডের চট্টগ্রামের মীরসরাই সোনাপাহাড়ের কারখানা থেকে একটি গ্রেনেড উদ্ধার হয়েছে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যরা সেটি উদ্ধারের পর নিষ্ক্রিয় করেছেন।

গত বুধবার বিকালে বিএসআরএম স্টিল মিলস লিমিটেডের কারখানায় গ্রেনেডটি পাওয়া যায়। এ সময় কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীসহ সবার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিষ্ঠানটি জাপান থেকে ইস্পাত উৎপাদনের জন্য স্ক্র্যাপ আমদানি করেছিল, যা স্ক্যানিং ছাড়া বন্দর থেকে খালাস করে নেওয়া হয়েছিল বিএসআরএম স্টিল মিলস লিমিটেডের কারখানায়। মূলত এর সঙ্গেই গ্রেনেডটি এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ইস্পাত কারখানায় বিদেশ থেকে আমদানিকৃত স্ক্র্যাপ থেকে বিভিন্ন ধরনের রড ও অ্যাঙ্গেল তৈরি হয়। গত ২১ জুন থেকে ১ জুলাইয়ের মধ্যে জাপান থেকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আসা ১০ হাজার মেট্রিক টন স্টিল স্ক্র্যাপ কারখানায় ঢোকে। এই স্ক্র্যাপের ভেতরে গ্রেনেডটি ছিল বলে তাদের ধারণা। তবে পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, চট্টগ্রাম বন্দরের গেট দিয়ে বের হওয়ার সময় স্ক্যানিং মেশিনে বিষয়টি অবশ্যই শনাক্ত হতো। বিএসআরএম কারখানার গেটেও স্ক্যানার আছে। সেখানেও শনাক্ত হয়নি। বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখছেন।

এ বিষয়ে স্থানীয় জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মফিজ উদ্দিন ভূঁইয়া শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বুধবার বিকাল ৩টার দিকে কারখানা থেকে থানায় একটি বোমা পাওয়ার খবর জানানো হয়। আমাদের একটি টিম গিয়ে দেখে লোহার রড তৈরির কাঁচামালের মধ্যে একটি গ্রেনেডসদৃশ বস্তু বিপজ্জনকভাবে পড়ে আছে। পরে সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের বোম্ব ডিজপোজাল ইউনিটকে খবর দেওয়া হয়। তারা এসে রাতে কারখানার খোলা জায়গায় গ্রেনেডটি নিষ্ক্রিয় করে।’

অন্যদিকে সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপকমিশনার পলাশ কান্তি নাথ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমাদের বোম্ব ডিজপোজাল ইউনিটের একটি টিম গিয়ে গ্রেনেডটি উদ্ধার করেছে। এটি একটি তাজা গ্রেনেড ছিল। পরে কারখানার দক্ষিণে একটি খোলা মাঠে গ্রেনেডটির বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। বিএসআরএমের কারখানার লোকজন আমাদের জানিয়েছে, গত ২১ জুন থেকে ১ জুলাই জাপান থেকে আমদানিকৃত স্ক্র্যাপের সঙ্গে এটি এসেছে। আর এরকম আর কোনো গ্রেনেড কারখানার ভেতরে ছিল কি না, সেটা তল্লাশি করা হয়েছে। তবে কিছুই পাওয়া যায়নি।’

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলেন, বিএসআরএমের কারখানায় গ্রেনেড পাওয়াটা উদ্বেগজনক ও রহস্যজনক! চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা স্ক্র্যাপ যদি স্ক্যানিং না হয় কিংবা স্ক্যানিং ছাড়াই ছাড় দেওয়া হয়, তাহলে তো বন্দরসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো উচ্চঝুঁকিকে আছে। এ ধরনের গ্রেনেড পিন ছাড়াও উচ্চ তাপমাত্রা বিস্ফোরিত হয়। তখন তাদের কারখানা কিংবা জাহাজে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। আর এভাবে স্ক্যানিং ছাড়া তো সহজে আন্তর্জাতিক মাফিয়া ও জঙ্গি গোষ্ঠী কিংবা অন্য কোনো গোষ্ঠী অতীতের মতো অস্ত্র ও গোলা-বারুদ আনতে পারে। তাই জাতীয় নিরাপত্তা ও শিল্পের স্বার্থে এ ধরনের পণ্য স্ক্যানিং ছাড়া ছাড়করণের সুযোগ বন্ধ উচিত। এক্ষেত্রে কাস্টমস হাউস ও বন্দরকে আরও সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। যেহেতু এটা দেশের ভাবমূর্তির বিষয়।

এ বিষয়ে বিএসআরএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আলী হোসাইন আকবর আলী শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বুধবার বিকালে আমাদের শ্রমিকরা স্ক্র্যাপ ইয়ার্ডে একটি গ্রেনেডসদৃশ বস্তু পড়ে থাকতে দেখে নিজেরাই স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে খবর দেন। তারা এসে এটা উদ্ধার করে নিষ্ক্রিয় করেন। সাধারণত আমরা ইরাক, সিরিয়া তথা মিডল ইস্ট থেকে স্ক্র্যাপ আমদানি করে থাকি। এখানে কী থাকে, তা অনেক সময় স্ক্যানারেও ধরা পড়ে না। আর এ স্ক্র্যাপ কখন, কীভাবে আনা হয়েছে তা আমার জানা নেই।’

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) জাফর আলম বলেন, ‘বন্দর দিয়ে আমদানিকৃত বাল্ক স্ক্র্যাপের স্ক্যানিং হয় না। আর স্ক্যানিংয়ে গ্রেনেডের উপস্থিতি ধরা পড়ে কি না সেটা আমার জানা নেই।’

অন্যদিকে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার ফখরুল আলম বলেন, ‘সাধারণত ইস্পাতের কারখানার স্ক্র্যাব বাল্ক ও কনটেইনারের মাধ্যমে আসে। বাল্ক ও কনটেইনার আন স্টাফিং পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা চেক করে দেখেন। তবে কনটেইনারে থাকলে স্ক্যানিংয়ের সময় গ্রেনেড বা বিস্ফোরক জাতীয় কিছু থাকলে অবশ্যই ধরা পড়ার কথা। আর এ ধরনের বিষয় আমাদের জন্য উদ্বেগজনক। বিষয়টি নিয়ে আমাদের আরও সতর্ক হতে হবে।’