সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন সেবাপ্রদানকারী সংস্থার প্রধান অফিস করছেন না। মূলত দেশের চলমান অস্থিরতায় জনপ্রতিনিধিরাসহ অফিস প্রধান আতঙ্কে আত্মগোপনে রয়েছে। ফলে এসব অফিস পরিচালনায় নেতৃত্বে শূন্যতা দেখা দিয়েছে। এতে সেবাপ্রাপ্তি অনিশ্চিত হওয়ায় জনভোগান্তি বাড়ছে।
জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, সিডিএ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুস, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়াম্যান এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম, ওয়াসার চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফয়জুলল্লাহ, বিভিন্ন উপজেলা পরিষদের চেয়ারমান ও মেম্বার, চট্টগ্রাম মহানগরের বিভিন্ন থানার পুলিশ, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতিসহ সেবাপ্রদানকারী সংস্থার প্রধান অফিস করছেন না। মূলত দেশের চলমান অস্থিরতায় জনপ্রতিনিধিরাসহ অফিস প্রধানরা আক্রমণের শিকারের আতঙ্কে আত্মগোপনে রয়েছেন। ফলে এসব অফিস পরিচালনায় নেতৃত্বে শূন্যতা দেখা দিয়েছে। প্রয়োজনীয় বিষয়ে সভা বা নির্দেশ না পেয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া যাচ্ছে না বলে জানান এসব অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
সূত্রে জানা যায়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত সোমবার বিকাল থেকে বন্দরনগরী অনেক থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পুড়িয়ে দেওয়া হয় থানা-পুলিশের কাজে ব্যবহƒত গাড়ি। অনেক জায়গায় অস্ত্রসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম ও নথি লুট হয়। এরপর পুলিশি ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়ে। যেসব থানায় হামলা হয়নি বা কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেসব থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগরের ১৬ থানার মধ্যে ১১টির কার্যক্রম গত শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে শুরু হয়েছে। কার্যক্রম শুরু হওয়া থানাগুলো হচ্ছেÑচান্দগাঁও, বায়েজিদ বোস্তামী, খুলশী, পাঁচলাইশ, সদরঘাট, চকবাজার, বাকলিয়া, পাহাড়তলী, আকবরশাহ, কর্ণফুলী ও বন্দর। আর যেসব থানায় হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, সেসব থানায় পুলিশ সদস্যরা এলেও সেখানে পুলিশের বসার মতো অবস্থা ছিল না। তাই সিএমপির ৫ থানায় এখনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। এছাড়াও মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের অভিযানের কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও কর্মকর্তারা অফিস করছেন।
এ বিষয়ে সিএমপি কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, সিএমপির ৫ থানায় হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, এখনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। তিনি বলেন, আমাদের ট্রাফিক পুলিশের কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এখনো কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
অপরদিকে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত সোমবার থেকে সিটি মেয়রসহ ৪১টি ওয়ার্ড কার্যালয়ের কাউন্সিলররা অফিস করছে না। এ বিষয়ে চসিকের মেয়র মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে সংযোগটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে একাধিক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মেয়র গত সোমবার থেকে অফিসে আসছেন না।
এ বিষয়ে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক দিন আমরা পুরোদমে কাজ করতে পারিনি ফলে নগরীতে প্রায় ১০ হাজার টন ময়লা-বর্জ্য জমে গেছে। আমাদের প্রতিটি ওয়ার্ড কার্যালয়ই কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমে ব্যবহƒত যন্ত্রপাতি ওয়ার্ড কার্যালয়ে থাকে। এসব যন্ত্রপাতির প্রায় অর্ধেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে আমাদের লোকবল অক্ষত আছে। আমরা আমাদের কাছে থাকা সচল যন্ত্রপাতি দিয়ে কাজ করছি। আশা করছি, কয়েক দিনের মধ্যেই নগরীকে পরিচ্ছন্ন করতে পারব। চসিক যেসব নাগরিক সেবা দেয় সেগুলোকে পুরোদমে সচল করতে আমরা মাঠ পর্যায়ে তদারকি করছি। ইতোমধ্যে চসিকের বিভাগীয় প্রধানদের নিয়ে সভা করে চসিকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি ও দায়িত্বপালন নিশ্চিত করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।