নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের বেসরকারি ক্লিনিকে সাধারণ রোগী ভর্তি করা, করোনাসহ সব ধরনের রোগের চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তিতে ভোগান্তি দূর করা ও বিনা চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু বন্ধের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করা হয়েছে। গতকাল চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রামে করোনা প্রতিরোধে নাগরিক সমাজের উদ্যোগে এ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করা হয়। চট্টগ্রামে সব বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সব ধরনের চিকিৎসা নিশ্চিতের দাবিতে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
এতে বক্তারা বলেন, চিকিৎসাসেবা নাগরিকের মৌলিক অধিকার কারও দয়া নয়। পুরো চট্টগ্রামজুড়ে রোগীদের বাঁচার হাহাকার। এ হাহাকার শুধু জীবন বাঁচানোর, চিকিৎসাসেবা পাবার অধিকারের হাহাকার। চট্টগ্রাম দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী এবং দেশের বৃহত্তম শিল্প ও বাণিজ্যিক নগরী হলেও সরকারি-বেসরকারি কোনো চিকিৎসাসেবা গড়ে উঠেনি। ফলে করোনা মহামারিকালে হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত আইসিইউ
সুবিধা নেই, অক্সিজেন নেই ও সিট নেই। করোনা পরীক্ষার ফল ছাড়া বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি করছে না। ফলে মানুষ সাধারণ রোগের চিকিৎসা না পেয়ে মরছে।
ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরীর সভাপতিত্বে ও ক্যাব ডিপিও জহুরুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভায় সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য মুহাম্মদ মহররম হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আবদুল মান্নান, ক্যাব মহানগরের সহসভাপতি হাজী আবু তাহের, চট্টগ্রাম মহানগর যুগ্ম সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগ নেতা হাসান মনসুর, ক্যাব যুব গ্রুপের সভাপতি চৌধুরী কেএনএম রিয়াদ, চান্দগাঁও থানা সভাপতি মোহাম্মদ জানে আলম, যুব নেতা ইমতিয়াজ মোর্শেদ খান, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আজিম রনি, সাংবাদিক ওসমান জাহাঙ্গীর প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না পাবার মূল কারণ তারা একদিকে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক আবার অন্যদিকে বেসরকারি ক্লিনিকের মালিক। কিছু চিকিৎসকদের দুই ধরনের ভূমিকার কারণে মানুষ সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পায় না, আর বেসরকারি ক্লিনিকে গিয়েও জিম্মি। সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালে সব রোগীদের সেবা নিশ্চিতের নির্দেশনা দিয়েছেন।
তারা বলেন, চট্টগ্রামের কিছু বেসরকারি ক্লিনিকের মালিক ও কতিপয় বিএমএ নেতারা যোগসাজশে প্রশাসনকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করে কভিড পরীক্ষার রেজাল্ট প্রদর্শন, করোনা সেবা দিলে সাধারণ রোগীদের অসুবিধা হবে প্রভৃতি অজুুহাতে কোনো রোগী ভর্তি না করে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে পুরো চট্টগ্রাম নগরজুড়ে চিকিৎসাসেবার জন্য হাহাকার।
বক্তারা আরও অভিযোগ করে বলেন, ক্লিনিকে সেবা পেতে এসব সমস্যা নিত্যদিনের চিত্র হলেও কার্যত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণে মন্ত্রণালয় সফল হয়নি। সেবার মান বৃদ্ধি ও রোগীদের ভোগান্তি নিরসনে ঢাকায় অধিদপ্তর ছাড়া স্থানীয়ভাবে কোনো তদারকির ক্ষমতা নাই। আবার চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার অফিস বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীদের ভোগান্তি নিরসনে তদারকি কমিটিতে ভোক্তাদের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ফলে কিছু সরকারি কর্মকর্তা, বেসরকারি ক্লিনিক মালিক এবং বিএমএর নেতারাই মিলে তাদের মতো করেই রোগীদের ভোগান্তি তদারকি করছেন যা অন্তঃসারশূন্য বলে তারা মন্তব্য করেন।
এ সময় তারা কিছু সুনির্দিষ্ট দাবি তুলে ধরেন। এর মধ্যে অবিলম্বে করোনা ও সাধারণ রোগীর চিকিৎসা নিশ্চিতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, ভোগান্তি নিরসন কমিটিকে মাঠপর্যায়ে তদারকি করে তার ফলাফল নগরবাসীকে দৈনিক অবহিতকরণ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে জড়িত সব পক্ষের প্রতিনিধিত্ব ও অংশগ্রহণমূলক জনঅংশগ্রহণমূলক স্বাস্থ্যসেবা বাস্তবায়ন করা, মন্ত্রী, এমপি ও সরকারি উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করা বাধ্যতামূলক দাবি রয়েছে। দবি না মানা হলে বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতাল ঘেরাও, চট্টগ্রামজুড়ে অবস্থান ধর্মঘট, ক্লিনিক বয়কট করার কর্মসূচি গ্রহণ করার হুশিয়ারি দেন তারা।