সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম :অর্থনৈতিক মন্দার কারণে কমেছে কোরবানিদাতার সংখ্যা, যার প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রামে। আড়তদারেরা লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চামড়া সংগ্রহ করতে পারেননি। এবারের চার লাখ কোরবানির কাঁচা চামড় সংগ্রহের প্রস্তুতি থাকলেও গতকাল দুপুর পর্যন্ত প্রায় তিন লাখ ২০ হাজার চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে গরু-মহিষের চামড়া দুই লাখ ৫৫ হাজার, বাকিগুলো ছাগল ও ভেড়ার।
আড়তদার ও চামড়া সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম জেলায় এ বছর আট লাখ ৭৪ হাজার পশু কোরবানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, যার মধ্যে গরু পাঁচ লাখ ২৬ হাজার ৩২৫টি ও মহিষ ৭১ হাজার ৩৩৩টি। কিন্তু এর বিপরীতে গতকাল দুপুর পর্যন্ত প্রায় তিন লাখ ২০ হাজার চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে গরু-মহিষের চামড়া দুই লাখ ৫৫ হাজার, বাকিগুলো ছাগল ও ভেড়ার। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ২০ শতাংশ কম।
মৌসুমি চামড়া সংগ্রহকারী আলাউদ্দিন জানান, এবার কোরবানিদাতার সংখ্যা কমেছে। ফলে চাহিদার তুলনায় চামড়া সংগ্রহ কম। তবে চামড়ার দাম গতবারের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। বড় গরুর চামড়া ৪৫০-৬০০ টাকা ও মাঝারি গরুর চামড়া ৩৫০-৪০০ টাকায় কিনে আড়তে বিক্রি করছি। এদিকে নগরের মুরাদপুরের জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া কামিল মাদ্রাসার মাঠে সংরক্ষণ করা হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার চামড়া। এসব চামড়া সংগ্রহ করেছে আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট ও গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ। এছাড়া আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় (হাটহাজারী মাদ্রাসা) সাড়ে পাঁচ হাজার চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন বলেন, এবার গরুর দাম ছিল বেশি। অনেকেই একাধিক গরু কোরবানি দিতেন। এখন দু-তিনজন মিলে একটি গরু কোরবানি দিয়েছেন। এজন্য লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। এ বছর চার লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু গরু, ছাগল ও ভেড়া মিলিয়ে তিন লাখ ২০ হাজারের মতো চামড়া সংগ্রহ হয়েছে।
গাউসিয়া কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার বলেন, এবার দেড় লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও সংগ্রহ হয়েছে মাত্র এক লাখ চামড়া। কোরবানি কম হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চামড়া পাওয়া যায়নি। আমাদের চামড়া কিনতে হয়নি। কোরবানিদাতারা বিনা মূল্যে চামড়া আমাদের কাছে দিয়ে গেছেন। আমরা শুধু সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। তিনি আরও বলেন, অতীতে চামড়া ব্যবসা সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি ছিল। এতে মৌসুমি চামড়া সংগ্রহকারীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কয়েক বছর আগে চামড়ার দাম না পেয়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিতে দেখা যায়। এবছর এই পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
হাটহাজারী মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক মুফতি জসিম উদ্দিন বলেন, আমাদের যে পরিমাণ চামড়া সংগ্রহ হয়েছে, তা সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো ক্রেতা যোগাযোগ করেনি। চামড়া বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থ মাদ্রাসার অসহায় দুস্থ শিক্ষার্থীদের সহায়তায় ব্যয় করা হবে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামে এ বছর আট লাখ ৭৪ হাজার পশু কোরবানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, যার মধ্যে গরু পাঁচ লাখ ২৬ হাজার ৩২৫টি এবং মহিষ ৭১ হাজার ৩৩৩টি।
জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. মো. আলমগীর বলেন, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ শতাংশ কম কোরবানি হয়েছে বলে ধারণা করছি।
