চট্টগ্রামে ২৫ শতাংশ নমুনা পরীক্ষায় বিলম্ব

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম জেলায় অসংখ্য মানুষের বসবাস। বন্দর, শিল্প ও বাণিজ্যিক কর্মচাঞ্চল্যের কারণে শুধু মহানগরেই আছে ৭০ লাখেরও বেশি মানুষ। আর প্রতিনিয়ত বাড়ছে করোনভাইরাসের সংক্রমণ। চট্টগ্রাম জেলায় প্রতিদিন গড়ে ৮০০ নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এর মধ্যে চারটি ল্যাবে ৬০০ নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। বাকি ২০০ নমুনা জমে যাচ্ছে। অর্থাৎ ২৫ শতাংশ নমুনা পরীক্ষায় বিলম্ব হচ্ছে। অপরদিকে আক্রান্তদের চিকিৎসা পেতে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে নগববাসীর উদ্বেগ বাড়ছে।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম জেলায় প্রতিদিন গড়ে ৮০০ থেকে ৮৫০টি নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এর মধ্যে গত ২ জুন চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) ২৫২টি, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটিতে (সিভাসু) ১১১টি, চট্টগ্রাম মেডিকেল  কলেজ ও হাসপাতালে ২৫১টি এবং কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে সাতটি নমুনা পরীক্ষা করা হয়।

এর মধ্যে বিআইটিআইডি’র ৫৯টি, সিভাসুর ৫৯টি, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ৮৭টি এবং কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে একটি রয়েছে। অর্থাৎ মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৬২১টি। এতে নমুনা পজিটিভ আসে ২০৬টি। করোনায় আক্রান্তের হার ৩৩ শতাংশের বেশি। একইভাবে আগের দিনও এসব ল্যাবে ৬৩১টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল। আর নমুনা পজিটিভ হয় ২০৮টি। পরীক্ষাকৃত নমুনায় আক্রান্তের হার ৩৩ শতাংশের কাছাকাছি।

জানা যায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) জীববিজ্ঞান অনুষদে কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ ল্যাব চালু করা হয়েছে। তবে প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত, নমুনা পরীক্ষার তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়া বেসরকারিভাবে করোনা শনাক্ত করার জন্য শেভরন ও ইমপেরিয়াল হাসপাতালকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে শেভরন ক্লিনিক্যাল ল্যাব ও হাসপাতালের পরিচালক (প্রশাসন) রাশেদুল হাসান আদনান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমাদের আগে থেকে একটি পিসিআর মেশিন আছে এবং আরও তিনটি মেশিন সংগ্রহ করা হয়েছে। আমরা হালিশহর, বন্দরটিলা, কালুরঘাট ও পটিয়ার মানুষের নমুনা পরীক্ষার জন্য গোল্ডেন টার্চ কমিউনিটি হলে নমুনা সংগ্রহের জন্য বুথ করব। আরও অন্যান্য এলাকায় চালু করার চিন্তা-ভাবনা আছে। তবে নন-টেকনিক্যাল ঝামেলার কারণে দেরি হচ্ছে। আশা করছি ১৫ জুন থেকে শুরু করতে পারব।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রাম দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর হওয়ার পরও স্বাস্থ্য নানাভাবে অবহেলিত। এক সপ্তাহ আগে নমুনা দিয়েও ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না। আবার নমুনা প্রদানে আগ্রহীদের নানা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আগের দিন গিয়ে সিরিয়াল নিতে হচ্ছে। এসব কারণে তারা ভয়ে আছেন। আর চিকিৎসা ও ওষুধ প্রাপ্তিতে নানা বিশৃঙ্খলার অভিযোগ তো রয়েছেই। প্রশাসনের এসব কঠোরভাবে দমন করা উচিত বলে তারা মনে করছেন। অন্যথায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে বলে আশঙ্কা তাদের।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটির (সিভাসু) ল্যাব সমন্বয়কারী ও অধ্যাপক ড. জুনায়েদ সিদ্দিকী শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমাদের ল্যাবে দুটি পিসিআর মেশিন আছে। এতে ৪০০ পরীক্ষার করার সক্ষমতা আছে। তবে জনবল সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যা থাকায় আমরা এক শিফটে কাজ করছি। দিনের যা দেওয়া হয় তা দিনেই পরীক্ষা করার চেষ্টা করি। আমরা এক দিনে সর্বোচ্চ ১৫৩টি নমুনা পরীক্ষা করেছি।’

চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন শেখ ফজলে রাব্বী শেয়ার বিজকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম জেলায় প্রতিদিন গড়ে ৮০০ নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৬০০ নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। বাকি ২০০ নমুনা জমে যাচ্ছে। এর মধ্যে ফৌজদারহাটে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) কিছুটা নমুনা জমে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামের সংক্রমণ বাড়ছে, তাই আমরা নমুনা সংগ্রহের জন্য আরও কিছু বুথ চালু করার

জন্য কাজ করছি। দ্রুত সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা শুরু হবে। এছাড়া শেভরন ও ইমপেরিয়ালে বেসরকারিভাবে পরীক্ষা করার জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি অনুসারে কাজ করার আমরা চেষ্টা করছি।’

উল্লেখ্য, গতকাল বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত চট্টগ্রামে মোট তিন হাজার ৩৯৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে দুই হাজার ৫৪৯ পুরুষ ও ৮৪৩ নারী। আর মৃত্যুবরণ করেছে ৮৩ জন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০