Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 1:03 am

চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিনিয়োগ নিবন্ধন কমেছে আড়াই হাজার কোটি টাকা

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: সাম্প্রতিক কয়েক বছরে দেশের প্রধান বন্দর ও বাণিজ্যিক শহর খ্যাত চট্টগ্রামে বাণিজ্যিক কর্মচাঞ্চল্যতা বাড়ানোর জন্য স্থাপন করা হচ্ছে একাধিক অর্থনৈতিক অঞ্চল। এছাড়া দেশের প্রথম টানেলসহ অনেকগুলো অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে বাণিজ্যিক নগরীতে। পাশাপাশি বিনিয়োগ সহায়ক মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর এবং চট্টগ্রাম বন্দর সক্ষমতা ও সুবিধা বাড়ানোর কাজ চলছে। এত সব সম্ভাবনার পরও গত (২০১৯-২০) অর্থবছরের চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিনিয়োগ নিবন্ধন কমেছে আগের অর্থবছরের তুলনায় আড়াই হাজার কোটি টাকা।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সূত্র মতে, সদ্য বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরের চট্টগ্রাম অঞ্চলে শিল্প, বাণিজ্য ও ট্রেডিং ব্যবসায় বিনিয়োগ করার জন্য বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ, শতভাগ বিদেশি ও যৌথ বিনিয়োগ নিবন্ধনের পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৯৬২ কোটি টাকা; যা আগের অর্থবছরের ছিল ছয় হাজার ৫২০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে কমেছে দুই হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিনিয়োগের জন্য ২০১৯-২০ অর্থবছরে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের জন্য ৮৭টি প্রকল্পের বিনিয়োগ নিবন্ধন করায়। এসব প্রকল্পের বিপরীতে সম্ভাব্য বিনিয়োগের পরিমাণ তিন হাজার ২২৭ কোটি টাকা। এতে কর্মসংস্থান ১২ হাজার ৮৫৮ জন। আর শতভাগ বিদেশি ও যৌথ বিনিয়োগ নিবন্ধন ছিল ৭৩৫ কোটি টাকা। এতে কমসংস্থান সৃষ্টি হবে এক হাজার ৪১৮ জনের; যা আগের অর্থাৎ ২০১৮-১৯ অর্থবছরের স্থানীয় বিনিয়োগের জন্য ১৬১টি বিনিয়োগ প্রকল্প নিবন্ধ হয়েছিল। এসব প্রকল্পের বিপরীতে মোট বিনিয়োগের সম্ভাব্য পরিমাণ ছিল ছয় হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা। আর কর্মসংস্থান ১৪ হাজার ৮৭ জন। অন্যদিকে শতভাগ বিদেশি ও যৌথ বিনিয়োগ নিবন্ধন প্রকল্প ছিল ১১টি। এতে বিনিয়োগের লক্ষ্য ছিল মাত্র ৫২ কোটি টাকা। এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এক হাজার ৪১৫ জনের।

চট্টগ্রাম অঞ্চলে শিল্প, বাণিজ্য ও ট্রেডিং ব্যবসায় নিয়োজিত ব্যবসায়ীরা জানান, ২০১০ সালের পর থেকে চট্টগ্রামের শিপব্রেকিং, আবাসান, শিল্প, ভোগ্যপণ্যের বড় ব্যবসায়ীরা অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক দরপতনের কারণে ধীরে ধীরে খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে থাকে। এর মধ্যে বড় বড় কয়েকটি গ্রুপ ব্যাংকে ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়। শুধু ব্যবসায়িক কারণে যে ঋণখেলাপি হয়েছিল তা কিন্তু নয়, অন্য কারণও আছে। যদিও তাদের রক্ষা তেমন ভূমিকা ছিল না। শুধু ব্যাংকিং সহযোগিতার অভাবে তারা শেষ হয়ে যায়। তাদের তো সব ধরনের সক্ষমতা ছিল। বর্তমানে এসব বাণিজ্যিক কিংবা শিল্প গ্রুপগুলোর অবস্থার পরিবর্তন হয়নি।

এছাড়া চট্টগ্রামে গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং বন্দরসহ অবকাঠামোগত সংকট ছিল এবং আছে। এছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ঋণ অনুমোদনের জটিলতার কারণে অনেক সময় বিনিয়োগ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়নি। ফলে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা ঢাকার তুলনায় অনেকটা পিছিয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নীতিনির্ধারকরা বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে।

এ বিষয়ে সিকম গ্রুপ ও প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আমিরুল হক শেয়ার বিজকে বলেন, চট্টগ্রামের বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হলে অবশ্যই আইনের সুশাসন, বন্দর সুবিধা, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ অবকাঠামোগত সুবিধা বাড়াতে হবে। যে বন্দরের ৪০ হাজার কনটেইনার জমে গেলে বন্দর অচল হয়ে যায়, সেখানে কীভাবে বিনিয়োগ বাড়বে? গত দশ বছরের বিনিয়োগ উল্টো কমেছে। এবারের বাজেটে লক্ষ্য করলাম বে-টার্মিনাল নির্মাণে বরাদ্দ রাখা হয়নি কিংবা গত পাঁচ বছরের এ প্রকল্পে অগ্রগতিই হয়নি। এখন বেসরকারি শিল্পোদ্যোক্তাদের নিজস্ব অর্থায়নে প্রাইভেট পোর্ট কিংবা জেটি নির্মাণ করার সক্ষমতা আছে। তাদের সেই সুযোগ দিতে হবে। বিনিয়োগ বাড়াতে হলে অবশ্যই আগে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সচিব মোহাম্মদ সলিম উল্লাহ বলেন, নব্বই দশকের পর চট্টগ্রাম ছিল বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় জায়গা। তখন শিল্পের জন্য জমি ছিল, দক্ষ ব্যবসায়ী ছিল, বন্দরসহ সব ধরনের সেবা ছিল এবং নগরায়ণ ছিল কম। আর এখন শিল্পের জন্য জমি সংকট, জমির উচ্চমূল্য, নগরবাসীর সংখ্যা বেড়েছে, কমেছে সেবা প্রদানকারী সংস্থার সক্ষমতা। এখনও গ্যাস সংকট ও অবকাঠামোগত সংকট আছে। এছাড়া বনেদি ব্যবসায়ী পরিবারগুলো বেকাদায় আছে। পাশাপাশি লগ্নি প্রতিষ্ঠানগুলোসহ নীতিনির্ধারকদের উদাসীনতা আছে। ফলে সব মিলিয়ে চট্টগ্রামে বিনিয়োগ কম হচ্ছে।