Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 2:31 am

চট্টগ্রাম ওয়াসার পরিচালন লোকসান সাড়ে ২২ কোটি টাকা

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: সদ্যবিদায়ী (২০১৯-২০) অর্থবছরে চট্টগ্রাম ওয়াসা মোট বিক্রয় রাজস্ব আদায় করে ১১৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। অপরদিকে সংস্থাটির পরিচালন ব্যয় হয়েছিল ১৪১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ ওয়াসার পরিচালন লোকসান হয়েছে ২২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, যা আগের বছরে হয়েছিল ১৩ কোটি ৭১ লাখ টাকা। কয়েক বছর ধরে সংস্থাটির পরিচালন লোকসান ক্রমেই বাড়ছে, যা চলতি অর্থবছরের প্রাক্কলনকৃত বাজেট প্রস্তাবনায় রাষ্ট্রীয় মালিকানার অ-আর্থিক শ্রেণিভুক্ত ৪৯টি প্রতিষ্ঠানের ২০১৯-২০ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে আয় ও ব্যয় হিসাব নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত হিসাবপত্রে রয়েছে।

যদিও ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বলছে, পানির উৎপাদন খরচ বিক্রির তুলনায় বেশি হওয়ায় পরিচালন লোকসান গুনতে হচ্ছে। শিগগিরই গ্রাহক পর্যায়ে পানির বিলের মিটারকে আধুনিক প্রযুক্তির আওতায় আনা হচ্ছে। এজন্য বেশ কয়েকটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে কিছু নন-রেভিনিউ ওয়াটার এক অঙ্কে নেমে আসবে। এতে পরিচালন ব্যয় কমে আসবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত তথ্যানুসারে, চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষের (ওয়াসা) চট্টগ্রাম মহানগরে দৈনিক পানির চাহিদা আছে ৪২ কোটি লিটার। এর বিপরীতে প্রায় ৩৬ কোটি লিটার সরবরাহ করতে পারে ওয়াসা। সে হিসাবে চট্টগ্রাম ওয়াসার গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের মোট আহরণকৃত পানির পরিমাণ ১২ কোটি ৭৭ লাখ ৫০০ লাখ লিটার। এর বিপরীতে বিল করে ৯ কোটি ৫৮ লাখ ১০০ লাখ লিটারের। এতে সংস্থাটির পরিচালন রাজস্ব হয় ১১৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা। অপরদিকে সংস্থাটির পরিচালন ব্যয় হয় ১৪১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ ওয়াসার পরিচালন লোকসান হয় ২২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।

অপরদিকে একই সময়ে ঢাকা ওয়াসার পরিচালন মুনাফা হয় ১৭৮ কোটি টাকা, যা চলতি বছরের অর্থবছরের প্রাক্কলনকৃত বাজেট প্রস্তাবনায় চট্টগ্রাম ওয়াসার গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত হিসাবপত্র থেকে পাওয়া গেছে।

অপরদিকে মন্ত্রণালয় ও ওয়াসার ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট প্রতিবেদন বলা হয়েছে, সংস্থাটির গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মোট আহরণকৃত পানির পরিমাণ ছিল ১১ কোটি ৬৭ লাখ ১০০ লাখ লিটার। এর বিপরীতে বিল করেছে ৯ কোটি ১০ লাখ ৬০০ লাখ লিটারের। এতে সংস্থাটির বিক্রয় রাজস্ব হয়েছিল ১০৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। অপরদিকে সংস্থাটির পরিচালন ব্যয় হয়েছিল ১২৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ ওয়াসার পরিচালন লোকসান ১৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। একইভাবে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রকৃত বাজেটে আহরণকৃত পানির পরিমাণ ১০ কোটি ৪১ লাখ ৪০০ লাখ লিটার। এর বিপরীতে বিল করেছে সাত কোটি ৭৮ লাখ ৭০০ লাখ লিটার। এতে সংস্থাটির পরিচালন রাজস্ব হয়েছিল ৯১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। আর সংস্থাটির পরিচালন ব্যয় হয়েছিল ১০৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ ওয়াসার পরিচালন লোকসান হয়েছিল ১৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। অপরদিকে ঢাকা ওয়াসার ২০১৮-১৯ সংশোধিত অর্থবছরের রাজস্ব হয়েছিল ১০৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা। একইভাবে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রকৃত বাজেটে পরিচালন মুনাফা হয়েছিল ৯১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।

ওয়াসার দায়িত্বপ্রাপ্ত একাধিক কর্মকর্তা জানান, গত কয়েক বছরে চট্টগ্রাম ওয়াসা পানি সরবরাহের বেশ কয়েকটি প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়ন করছে এবং আরও কয়েকটি বাস্তবায়নের পথে রয়েছে। এতে পানি সরবরাহ আগের চেয়ে কয়েক গুণ বেড়েছে। কিন্তু আগের পুরোনো পাইপলাইন, ত্রুটি ও নানা জটিলতায় বেড়েছে নন-রেভিনিউ ওয়াটার। আর সেই তুলনায় জনবল বাড়েনি। ফলে আমাদের পরিচালন লোকসানও বেড়েছে। তবে এটা সাময়িক। আগামীতে আরও ভালো হবে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচলক একেএম ফজলুল্লাহর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি মুঠোফোনে সাড়া দেননি, যদিও তিনি সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত হন। পরে সংস্থাটির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, আমাদের পানির দাম অনেক কম। আমাদের প্রতি কিউবিক উৎপাদন খরচ ১৬ টাকা। আমাদের আবাসিক গ্রাহক পর্যায়ে বিক্রয়মূল্য ১২ টাকা ৪০ পয়সা এবং বাণিজ্যিকে ৩০ টাকা ৩০ পয়সা। এর মধ্যে ৮৮ শতাংশ আবাসিক ব্যবহারকারী এবং ১২ শতাংশ বাণিজ্যিক। অর্থাৎ প্রতি কিউবিক মিটার গড় বিক্রি হয় ১৩ টাকার মতো। ফলে আমরা দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিলাম, যা গত এপ্রিল থেকে কার্যকর হয়েছে। আর আমাদের সরবরাহ লাইনের পাইপগুলো ৫০-৬০ বছরের পুরোনো। ফলে আমাদের পরিচালন লোকসান বেশি।