Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 10:06 pm

চট্টগ্রাম কাস্টমসের সিপাহী নিয়োগে ‘জালিয়াতি’

নিজস্ব প্রতিবেদক : লিখিত পরীক্ষা দিয়েছেন টাকার বিনিময়ে। চুক্তি করা হয় ১০ থেকে ৮০ হাজার টাকায়। লিখিত পরীক্ষায় পাস করেছেন। মৌখিক পরীক্ষার সময় প্রার্থীকে কিছু লিখতে দেয়া হয়। আর সেই লেখা মেলানো হয় লিখিত পরীক্ষার খাতার সঙ্গে। আর তাতেই ধরা পড়ে যায় আসল প্রার্থী। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সিপাহী নিয়োগে এমন জালিয়াতি ধরা পড়েছে। তাও আবার এক, দুইজন নয়-১৮ জনকে আটক করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) মৌখিক পরীক্ষা নেয়ার সময় তাদের আটক করা হয়। আটক করা সবাই চুক্তিতে লিখিত পরীক্ষায় পাস করার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। পরে তাদের বিরুদ্ধে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ চৌধুরী বাদী হয়ে চট্টগ্রাম পাহাড়তলী থানায় মামলা করেছেন। ১৭ জনকে পুলিশে দেয়া হয়েছে। একজন অসুস্থ হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট ট্রেনিং একাডেমিতে মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

কাস্টম হাউসের একাধিক কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। অপরদিকে, ১৮ জন লিখিত পরীক্ষায় জালিয়াতি করার পরও ধরা পড়েনি। কতজন এমন প্রক্সি দিয়ে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে তা জানতে পারেনি কাস্টম হাউস। ফলে লিখিত পরীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রার্থীরা।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস সূত্রমতে, হাউসের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের লক্ষ্যে ২০১৪ ও ২০১৭ সালে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। আদালতে মামলা থাকায় নিয়োগ সম্পন্ন হয়নি। সম্প্রতি নিয়োগ সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেয় কাস্টম হাউস। সে অনুযায়ী নিয়োগ কমিটি গঠন করা হয়। দেয়া হয় বিজ্ঞপ্তি। আবেদন করা প্রার্থীদের প্রবেশপত্র দেয়া হয়। এর মধ্যে সিপাহী পদে প্রার্থীদের শারীরিক যোগ্যতা পরীক্ষা ১১-১৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট ট্রেনিং একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৩ হাজার ৩৪৪ জন শারীরিক যোগ্যতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। ২৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে সিপাহী ও মালি পদে প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সিপাহী পদে ৩৫০ জন ও মালি পদে ৭ জন উত্তীর্ণ হয়। লিখিত পরীক্ষার সময় সিপাহী পদের প্রার্থীদের প্রক্সির বিষয়ে জানতে পারেনি বিভাগীয় নির্বাচন কমিটি। ২৬ ডিসেম্বর একাডেমিতে মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

অপরদিকে মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট ট্রেনিং একাডেমির প্রশাসনিক ভবনে সিপাহী পদে উত্তীর্ণদের মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ৯টার দিকে বিভাগীয় নির্বাচন কমিটির সভাপতি ও চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অতিরিক্ত কমিশনার ড. আবু নুর রাশেদ আহমেদ মৌখিক পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু করেন। এসময় বিভাগীয় নির্বাচন কমিটির সদস্য ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব তারেক মোহাম্মদ জাকারিয়া, সদস্য ও বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের উপপরিচালক (সিনিয়র সহকারী সচিব) মোছাম্মৎ সাবিনা ইয়াছমিন, সদস্য ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যািলয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার এসএম আলমগীর, বিভাগীয় নির্বাচন কমিটির সদস্য সচিব ও উপ কমিশনার ব্যারিষ্টার মো. বদরুজ্জামান মুন্সী উপস্থিত ছিলেন। লিখিত পরীক্ষায় প্রকৃত পরীক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেছেন কিনা এবং পরীক্ষার খাতায় তাদের সই আছে কিনা-তা যাচাই করা হয়। এছাড়া প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষায় আসা বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়। এসময় বেশ কিছু প্রার্থীর আচরণ সন্দেহ হয় নিয়োগ কমিটির। পরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ইস্যু করা মূল প্রবেশপত্রের ছবির সঙ্গে কয়েকজনের ছবির মিল না পাওয়ায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এতে দেখা যায় ১৮ জনের প্রবেশপত্রের ছবির সঙ্গে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেয়া প্রার্থীর ছবির মিল নেই। মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেয়া প্রার্থীদের খাতায় কিছু লিখতে দেয়া হয়। এতে দেখা যায়, লিখিত পরীক্ষার হাতের লেখার সঙ্গে মৌখিক পরীক্ষায় লেখা হাতের লেখার মিল নেই। একে একে ১৮ জনকে সনাক্ত করে বিভাগীয় নির্বাচন কমিটি। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সবাই জানায়, ১০ থেকে ৮০ হাজার টাকা চুক্তিতে তাদের লিখিত পরীক্ষা অন্যরা দিয়েছে। ফলে মূল প্রবেশপত্রে তাদের ছবি নেই।

১৮ জন হলেন-মো. আবুল বাশার (রোল-১১০৯৯), মো. এনামুল হক (রোল-১২৭৫২), মো. শহীদুল ইসলাম (রোল-১০৮৩২), মো. রফিকুল ইসলাম (রোল-১৩৭৬২), মো, আব্দুর রশিদ (রোল-১৫০১১), সবুজ চন্দ্র (রোল-১৩০৭৬), জয় চন্দ্র দে (রোল-১১২৩৪), আবুল মিয়া (রোল-১২৪১৬), মো. মোবারক হোসেন (রোল-১২৫৬৬), মো. আক্তারুজ্জামান (রোল-১৭০৭৭), মো. খলিলুর রহমান (রোল-১৪১৭২), মো. আরিফুর রহমান (১৫১৫৩), মো. সূজন সরকার (রোল-১৬৪৮৯), নিতোষ চাকমা (রোল-১৭০৭৪), মো, সোহেল রানা (রোল-১৯৯১৭), মো. ইলিয়াছ (রোল-১৯৭৬০), কাজী দেলোয়ার হোসেন (রোল-১৯৯৮৯), মো. মহি উদ্দিন (রোল-১০২০৬)।

বিভাগীয় নির্বাচন কমিটি তাদের থেকে জালিয়াতির বিষয়ে লিখিত বিবৃতি নেয়। পরে রাত ১১টার দিকে বিভাগীয় নির্বাচন কমিটি জালিয়াতিতে অংশ নেয়া ১৮ জনের লিখিত পরীক্ষার মূল খাতা, যাচাই করা হাতের লেখা, বিবৃতি ও বির্তকিত কাগজপত্র জব্দ করে। ১৮ জনের মধ্যে মো. মহিউদ্দিন অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বাকি ১৭ জনকে পাহাড়তলী থানা পুলিশে সোপর্দ করা হয়। তবে এই ১৮ জনের হয়ে যারা লিখিত পরীক্ষা দিয়েছেন-তাদের নাম, পরিচয় জানতে পারেনি কমিটি।