করোনার প্রভাব

চট্টগ্রাম কাস্টমসে ফেব্রুয়ারিতে বিল অব এন্ট্রি কমেছে ৪৩১১টি

সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম: করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতি শ্লথ হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় অর্থনীতির সব সূচক এখন নিম্নমুখী। মাস ব্যবধানে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে বিল অব এন্ট্রি (বি/ই) কমেছে প্রায় সাড়ে চার হাজার। জানুয়ারি মাসে দেশের বৃহৎ শুল্ক স্টেশন দিয়ে বি/ই খালাস হয়েছে ২৫ হাজার ৩০৯টি। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে চীনসহ কয়েকটি দেশে করোনাভাইরাসের প্রভাব ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এতে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানিতেও মারাত্মক ভাটা পড়ে। তাতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে বি/ই খালাস হয় মাত্র ২০ হাজার ৯৯৮টি।

এদিকে আমদানি-রপ্তানি কমে যাওয়ায় রাজস্ব আহরণ খাতেও ধস নামে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসও তাদের রাজস্ব আহরণের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। এতে পিছিয়ে পড়েছে প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা থেকে। জানুয়ারি মাসে ৯২ লাখ ১৮ হাজার ৯২২ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে, যা ফেব্রুয়ারি মাসে কমে দাঁড়ায় ৭৬ লাখ ৭৩ হাজার ৭৬ মেট্রিক টনে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, ফেব্রুয়ারি মাসে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে চার হাজার ৭৭১ কোটি টাকা। বিপরীতে রাজস্ব আহরণ করতে পারে তিন হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৭৭৬ কোটি টাকা কম। অপরদিকে গত আট মাসের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪০ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা। কিন্তু আদায় হয়েছে ২৮ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। এতে রাজস্ব ঘাটতি রয়েছে ১১ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রবৃদ্ধির হার ২৮ দশমিক ৯২ শতাংশ কম। তবে চলতি অর্থবছরের সব মাসে বিগত বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধির হার ঋণাত্মক থাকলেও চলতি মাসে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটি। ফেব্রুয়ারি মাসে গত বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি অর্জন করে শূন্য দশমিক ৩৩ শতাংশ, যা জানুয়ারি মাসে ছিল দুই দশমিক ১৪ শতাংশ ঋণাত্মক।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের গত আট মাসের পণ্য আমদানির তুলনামূলক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরে ৫৪ লাখ ১২ হাজার মেট্রিক টন পণ্য আমদানি বেড়েছে। তবে আমদানি পণ্যেও শুল্কায়নযোগ্য মূল্য কমেছে দুই হাজার ৬৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে দুই লাখ ছয় হাজার ৪২৮ কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়েছে। আর চলতি অর্থবছরের একই সময়ে আমদানি হয়েছে দুই লাখ চার হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা।

এদিকে চলতি মাসে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হওয়ার পর থেকে দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্য শ্লথ হয়ে পড়ে। পাশাপাশি এ দুই মাসে রপ্তানি আদেশও আগের তুলনায় কমেছে। ফলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে আগের মতো লোক সমাগম দেখা যাচ্ছে না।

ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, চীনে পরিস্থিতির উন্নতি হলেও বিশ্বজুড়ে ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। এর আগে ইউরোপ-আমেরিকার দেশসহ প্রায় ১৫০টি দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। এতে বাংলাদেশের রপ্তানি খাত ক্ষতির মুখামুখি দাঁড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার ফখরুল আলম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘চীন করোনায় আক্রান্ত হলেও জানুয়ারি মাসে আমাদের দেশে আমদানি-রপ্তানিতে তেমন প্রভাব পড়েনি। কারণ আগের শিপমেন্ট করা পণ্যগুলো দেশে এসেছে। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে আমদানির পরিমাণ অনেক কমে যায়। এতে আমাদের রাজস্ব আহরণে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ফলে লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৭৭৬ কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০