সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: আমদানিকৃত পণ্য বন্দর ইয়ার্ড থেকে খালাস না নিলে ৩০ দিন পর নিলামে তুলে বিক্রি করতে পারে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস। কিন্তু নানা জটিলতায় সেই নিলাম সময়মতো অনুষ্ঠিত হয় না। একদিকে বন্দরের ইয়ার্ডে কনটেইনার রাখার সক্ষমতা কমে, অন্যদিকে রাজস্ব আহরণ কমে। এ প্রক্রিয়া দ্রুত করার জন্য ২০২০ সালের ২৭ অক্টোবর চট্টগ্রাম কাস্টমস অনলাইন-ভিত্তিক ই-অকশন কার্যক্রম চালু করে। অথচ উদ্বোধনের পর থেকে গত তিন বছরে ই-অকশন হয়েছে মাত্র পাঁচটি। আর গত ১০ মাসে অনুষ্ঠিত হয়নি একটিও ই-অকশন।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন সময়ে আমদানিকৃত পণ্য ভর্তি ছয় হাজার ৭৯৫ একক কনটেইনার বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে পড়ে আছে। মূলত অর্থ পাচার, চোরচালানি সংশ্লিষ্টরা এসব কনটেইনার খালাস নেয় না। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় কনটেইনার খালাস না নেয়ার প্রবণতা বেড়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, আমদানিকৃত পণ্য জাহাজ থেকে বন্দর ইয়ার্ডে নামার ৩০ দিনের মধ্যে খালাস না নিলে আমদানিকারককে নোটিশ দেয় কাস্টম কর্তৃপক্ষ। এর ১৫ দিনের মধ্যে পণ্য খালাস না নিলে তা নিলামে তুলতে পারে কাস্টমস। এ ছাড়া মিথ্যা ঘোষণা এবং ঘোষণার বেশি আনা জব্দ পণ্যও নিলামে তোলা যায়। আবার মামলাসহ নানা জটিলতায় বন্দর ইয়ার্ডে বাড়ে কনটেইনারের সারি। তৈরি হয় কনটেইনার জট। দিনের পর দিন কনটেইনার পড়ে থাকলেও বন্দর কর্তৃপক্ষ চার্জ পায় না। এতে পরিচলন কার্যক্রমও ব্যাহত হয়।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের ই-অকশন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ২০২০ সালের ২৮ অক্টোবরের প্রথম ই-অকশনের লট ছিল ১৬টি। সেই ১৬টি লটের মধ্যে ছিল বিভিন্ন ধরনের ফেব্রিকস, স্ক্র্যাপ, প্লাস্টিক হ্যাঙ্গার, খেজুর, আদা, সোডা অ্যাশ, আয়রন পাইপ ইত্যাদি। পরবর্তী ই-অকশন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি। সেই নিলামে ২০ লটের সবগুলোতেই ছিল পেঁয়াজ। এর পরের তিনটি ই-অকশনই অনুষ্ঠিত হয়েছিল বিলাসবহুল কারনেট গাড়ির। এর মধ্যে ২০২১ সালের ৪ নভেম্বর ই-অকশনে ১১২টি লটে ১১২টি কার্নেট গাড়ি নিলামে তোলা হয়েছিল। এরপর গত বছরের ১৩ জুন অনুষ্ঠিত কারনেট গাড়ির ই-নিলামে ১০৮টি গাড়ি রাখা হয়েছিল। সর্বশেষ গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত কার্নেট গাড়ির ই-অকশনে ছিল ৭৮টি গাড়ি। এর পরে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে গত ১০ মাসে আর ই-অকশন হয়নি। ই-অকশন কার্যক্রম নিয়মিত না হওয়ার বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কর্মকর্তারা বলেন, কয়েকটি কারণে ই-অকশনের সুফল এখনো পুরোপুরি পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে অনলাইনে এখনও পুরোপুরি অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারেনি। এছাড়া অনলাইনে নিলামে অংশগ্রহণ করলেও বিডারদের জামানত জমা ও ব্যাংকিং কাজে নিলাম শাখায় আসতে হয়। আবার যদিও অনলাইন নিলামে পণ্যের ছবি দেয়া হয়, তারপরও কেউই চায় না একটি পণ্য না দেখে কিনতে। এসব কারণে ই-অকশন এখনও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। তবে এ পদ্ধতিতে যে কোনো স্থান থেকেই আগ্রহীরা প্রয়োজনীয় কাগজ সাবমিটের মাধ্যমে নিলামে অংশ নিতে পারবেন। ই-অকশন প্রক্রিয়ায় নিলামে অংশগ্রহণকারীরা পণ্যের দর, তালিকা ও পণ্যের ছবি দেখতে পায়। প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত পূরণ করে ঘরে বসেই নিলামে অংশ নেয়া যায়। একইভাবে ঘরে বসেই দেখতে পারবেন, কোন ক্যাটালগের সর্বোচ্চ বিডার কে হয়েছেন। এতে কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই নিলাম কাজ সম্পন্ন করতে পারে। ফলে একদিকে বাঁচবে সময়, অন্যদিকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হবে।
বন্দর ব্যবহারকারীরা বলেন, চট্টগ্রাম কাস্টমসে প্রতি মাসেই কোনো না কোনো সাধারণ নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে গতানুগতিক কাগজের নিলামের দরপত্র কিনে হাতে লেখা সেই নিলামের ফর্ম পূরণ করে জমা দিতে হয়, অথচ অনলাইন-ভিত্তিক সুদূরপ্রসারী চিন্তা করে ই-অকশন চালু করা হয়েছিল।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের মুখপাত্র ও উপ-কমিশনার ব্যারিস্টার বদরুজ্জামান মুন্সি শেয়ার বিজকে বলেন, অনলাইনে নিলাম কার্যক্রম গতিশীল করার জন্য আমরা কাজ করছি। আগে কিছু জটিলতা ছিল। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড একটি নিদের্শনা দিয়েছে। আগামী মাসে ই-অকশন আয়োজন করার জন্য কাজ করছি। এর মধ্যে যে কোনো স্থান থেকেই আগ্রহীরা প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সাবমিটের মাধ্যমে নিলামে অংশ নিতে পারবেন। ফলে একদিকে সময় বাঁচবে সময়, অন্যদিকে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত হবে। এতে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে।