Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 4:13 am

চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য খালাসে ব্যবস্থা নিন

তিনটি সমুদ্রবন্দর থাকলেও দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য তথা আমদানি-রপ্তানির ৮০ শতাংশ এখনও সম্পন্ন হয় চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে। কিন্তু এ বন্দরের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এ বন্দরে জাহাজ ভিড়তে এবং পণ্য খালাস করতে বেশি সময় লাগে। কাস্টমসের ঝামেলাও অনেক ও ধীর গতিসম্পন্ন। এ অবস্থায় গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘আমদানিকৃত পণ্য নিয়ে সাগরে ভাসছে ৫৪ জাহাজ’ শীর্ষক প্রতিবেদন পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে।

এতে বলা হয়েছে, দেশে চলমান আন্দোলন ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়ে। বর্তমানে বন্দরে কনটেইনার ইয়ার্ডে কনটেইনার রাখার জায়গার স্বল্পতার কারণে ৫৪টির বেশি পণ্যবাহী জাহাজ সাগরে বসে রয়েছে। এর মধ্যে কনটেইনার জাহাজ ১৮টি, সাধারণ কার্গো জাহাজ ১৯টি, তেলবাহী ট্যাংকার পাঁচটি, ফুড গেইন জাহাজ পাঁচটি, ক্লিংকারবাহী জাহাজ চারটি, চিনিবাহী দুটি এবং সারবাহী একটি জাহাজ রয়েছে।

আমদানিপণ্যের চালান সময়মতো ডেলিভারি না হলে বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। সেই সঙ্গে পণ্যের দাম বৃদ্ধি, দেশীয় শিল্পোৎপাদনে ব্যাঘাত সৃষ্টি হলে রপ্তানিতেও ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে পোশাকশিল্পের পণ্য জাহাজীকরণ বিঘ্নিত হলে বিদেশি ক্রেতারা ক্রয়াদেশ বাতিলও করতে পারে।
জেটি সংকট থাকায় নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি জাহাজকে একসঙ্গেভেড়ানো যায় না। ফলে বহির্নোঙরে দীর্ঘ সময় অলস বসে থাকতে হয় আমদানি পণ্যবোঝাই অনেক জাহাজকে। আবার বহির্নোঙরে পণ্য খালাসেও সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই জেটি সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন।

খোলা পণ্যের একটি বড় অংশ বহির্নোঙরে লাইটারের (ছোট আকারের জাহাজ) মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। একটি মাদার ভেসেলকে (সমুদ্রগামী বড় আকারের জাহাজ) একদিন অতিরিক্ত সময় অবস্থানের জন্য প্রায় ১০ হাজার ডলার জরিমানা দিতে হয়। জাহাজ মালিক ও এজেন্টরা এ অর্থ নেন আমদানিকারকদের থেকে। এতে পণ্যের আমদানি ব্যয় বেড়ে যায়। আমদানিকারকরা নিজের পকেট থেকে ওই টাকা দেন না। পণ্যের দামের সঙ্গে সমন্বয় করেন।

তাই ওই বাড়তি অর্থ শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদের ঘাড়েই চাপে। বহির্নোঙরে অপেক্ষমাণ মাদার ভেসেলের সংখ্যা বেড়ে গেলে সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় লাইটার জাহাজ একসঙ্গে পাওয়া যাবে না।
এ অবস্থায় জট ভয়াবহ হয়ে ওঠে। পণ্য খালাস সক্ষমতা বাড়াতে আধুনিক যন্ত্রপাতি, পর্যাপ্ত লোকবলের ব্যবস্থা করা আবশ্যক। চট্টগ্রাম বন্দর দেশের প্রধান বন্দর। জাতীয় উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় এর অবদান ও গুরুত্ব বিবেচনা করে এটির সক্ষমতা বাড়তে হবে। পরিচালন প্রক্রিয়ার কোনো দুর্বলতায় বন্দরের অদক্ষতার পরিণামে সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কোনো ধরনের অনিয়ম-অব্যবস্থাপনায় আমদানি পণ্য যথাসময়ে খালাস করা না গেলে সেটি দেশের শিল্প ও অভ্যন্তরীণ বাজারে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। তাই চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাসে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।