নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম:চট্টগ্রাম বন্দরের অবকাঠামোগত সক্ষমতা দিয়ে চলতি সময়ে দেশের আমদানি ও রপ্তানির কার্যক্রম সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আর ২০৩০ সালে বর্তমানের চেয়েও অর্থনীতির আকার বাড়বে তিনগুণ এবং ২০৫০ সালে পাঁচগুণ হবে। এ কারণে আমাদের বন্দরকে ঘিরে বিদেশি বন্দর ব্যবস্থাপনায় জড়িতরা পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল, নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনাল, বে-টার্মিনালসহ মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরে পাঁচ থেকে সাত বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েছে। ফলে চট্টগ্রাম বন্দর আগামী কয়েক বছরে দেশের অর্থনীতির গেম চেঞ্জার হবে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী দিকনির্দেশনায়, নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সমন্বয়ের মাধ্যমে বন্দর কর্তৃপক্ষ দেশের সমুদ্রপথে বহির্বাণিজ্য সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর বিশ্ববাণিজ্যে বাংলাদেশের প্রধান গেটওয়ে হিসেবে কাজ করছে। দেশের ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য চাহিদা, আঞ্চলিক যোগাযোগের ভৌগোলিক অবস্থানগত গুরুত্ব এবং বন্দরকেন্দ্রিক উন্নয়ন চিন্তা চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্ব বাড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। এর মধ্যে গত এক যুগে ১০ মিটার ড্রাফট ও ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে জাহাজ ভেড়ানো, ইউরোপের সঙ্গে সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প, পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ, বহির্নোঙরের আওতা বৃদ্ধি, ভিটিএমআইএস, ডিজিটালাইজেশন এবং কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের অত্যাধুনিক কি সাইড গ্যান্ট্রি ক্রেন সংযোজনের মতো উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়েছে। এর ফলে বন্দরের জলসীমা বেড়েছে কয়েক গুণ, সরাসরি ইউরোপ ও আমেরিকায় জাহাজ চালাচল শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর আঞ্চলিক পণ্য পরিবহনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সরকারও চট্টগ্রাম বন্দরের ধারাবাহিক উন্নয়নে তৎপর। আর দেশের জন্য বন্দরের নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করছে। চট্টগ্রাম বন্দরে দিন নেই, রাত নেই, শুক্রবার ছুটির দিন নেই। ২৪ ঘণ্টা সাত দিন সচল থাকে। আমাদের বন্দর সারাবিশ্বে সমাদৃত। বিভিন্ন দেশ ব্যাপক বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করছে। আগামী তিন বছরে পাঁচ-সাত বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হবে আশা করি।
বন্দর চেয়ারম্যান আরও বলেন, কভিড অতিমারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতির প্রত্যাশিত গতিকে মন্থর করলেও চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে তেমন প্রভাব ফেলেনি, বরং কার্গো হ্যান্ডলিং ও আয় বেড়েছে। জুন মাসে এ বন্দর দিয়ে ৫০ শতাংশ রপ্তানি বেড়েছে, যার ৮৪ শতাংশ তৈরি পোশাক।
তিনি বলেন, ডিসেম্বরে বন্দরের নতুন কেমিক্যাল শেড চালু করা সম্ভব হবে। পিসিটি পরীক্ষামূলক চলছে। বে টার্মিনাল ও ব্রেক ওয়াটারের ডিজাইনের কাজ চলছে। প্রশস্ত চ্যানেলে ১২-১৩ মিটার ড্রাফটের জাহাজের ২৪ ঘণ্টা অপারেশন করা সম্ভব হবে। আগামী অক্টোবরে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রথম জেটি নির্মাণের কাজ শুরু হবে। আগামী তিন বছরের মধ্যে এ জেটির নির্মাণ শেষ হবে। এতে এক লাখ টন ওজনের জাহাজ ১০-১২ হাজার কনটেইনার নিয়ে ভিড়তে পারবে। বড় জাহাজে পণ্য আনা হলে ভোক্তা পর্যায়ে সুবিধা পাবে। অপরদিকে কর্ণফুলী নদীতে অনেক বাঁক আছে। এটি প্রাকৃতিক চ্যানেল। আগামী বছরের মধ্যে ১১ মিটারের জাহাজ জেটিতে ভেড়ানো সম্ভব হবে আশা করি। এর জন্য নদীতে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করতে হবে।
সভায় বন্দরের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মো. শহীদুল আলম, পরিচালক মো. মমিনুর রশিদ, সচিব মো. ওমর ফারুক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের মোট আমদানি ও রপ্তানিবাহী কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়েছিল ৩০ লাখ সাত হাজার ৩৪৪ টিইইউএস। আর সাধারণ কার্গো ওঠানামা করা হয়েছিল ১১ কোটি ৮২ লাখ ৯৬ হাজার ৭৪৩ মেট্রিক টন এবং জাহাজ হ্যান্ডলিং করা হয়েছিল চার হাজার ২৫৩টি।