সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম : দেশের আমদানি-রফতানির প্রায় ৯২ শতাংশ সম্পাদিত হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। বিভিন্ন দেশ থেকে আশা কনটেইনারগুলো তিনটি মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দেশের অন্যত্র পাঠানো হয়। সড়ক, রেল ও নদীÑএ তিন পথে কনটেইনার পরিবহন হলেও রেলপথে মাত্র তিন শতাংশ পরিবহন হয়। এ পরিবহনকে আরও গতিশীল করতে গত এপ্রিলে ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে চীন থেকে আমদানিকৃত একটি রেল মাউন্টেড গ্যান্ট্রি ক্রেন (আরএমজি) স্থাপন করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে আরএমজি স্থাপনের পর থেকে দক্ষ অপারেটর না থাকায় আইসিডিগামী কনটেইনার লোডিং-আনলোডিং হতে সময় আগের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি লেগে যায়। এখন আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারে সময় লাগছে ১০ থেকে ২৩ ঘণ্টা পর্যন্ত। যদিও বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে এ সমস্য বেশি দিন থাকবে না।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, আরএমজি স্থাপনের পর থেকে আইসিডিগামী কনটেইনার লোডিং-আনলোডিং হতে সময় বেশি লাগছে। অতিরিক্ত সময় ব্যয়ের বিষয় অবগত করে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল থেকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে গত ১৪ মে একটি চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে বলা হয় চট্টগ্রাম এমপিবিতে আরএমজি স্থাপনের ফলে আইসিডিগামী কনটেইনার লোডিং-আনলোডিং মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। প্রায় সময় ঢাকা হতে আসা ইনওয়ার্ড কনটেইনার আনলোডিংয়ের জন্য সিজিপিওয়াইতে অপেক্ষায় থাকছে। গত মাসে প্রায় ২০০টি ইইউএস কনটেইনার এখনও আনলোডিংয়ের অপেক্ষায় রয়েছে এবং দিন দিন কনটেইনার টার্ন রাউন্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ রেলওয়ের কনটেইনার বহরে ৪৫০/৯০০টি বিএফসিটি ওয়াগন রয়েছে। কিন্তু সুষম ব্যবহারের অভাবে কনটেইনার লায়িং পজিশন প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং জট সৃষ্টি হচ্ছে। তবে ওই চিঠিতে ৪ এপ্রিল থেকে ১২ মে পর্যন্ত কনটেইনার লোডিংয়ের বিলম্বিতার একটি পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছিল।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ৪ এপ্রিল রেক স্থাপনের পর কনটেইনার বোঝাই হতে বিলম্ব হয় ১৩ ঘণ্টা ২০ মিনিট, ১১ এপ্রিল ১৪ ঘণ্টা ২০ মিনিট এবং ১ মে ২৩ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। এভাবে ১৩ দিনের পরিসংখ্যানে দেখা যায় ১০ থেকে ২৩ ঘণ্টা পর্যন্ত বিলম্ব হয়েছে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কর্মকর্তারা জানান, কনটেইনার লোডিং-আনলোডিং হতে বিলম্ব হওয়ার ফলে কনটেইনার পরিবহনে বাংলদেশ রেলওয়ের সুনাম ক্ষুণœ হচ্ছে। এতে আমদানিকারকরা রেলপথে কনটেইনার পরিবহনে আগ্রহ ও উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে।
জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলম শেয়ার বিজকে বলেন, চট্টগ্রাম এমপিবিতে আরএমজি স্থাপনের ফলে আইসিডিগামী কনটেইনার লোডিং-আনলোডিং হতে সময় বেশি লাগছে। তাই রেলওয়ে থেকে বন্দর চেয়ারম্যানসহ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। এর পর কিছুটা উন্নতিও হয়েছে। ৩১ মে পর্যন্ত লায়িং পজিশন ৮৯০ থেকে নেমে ৬৯০ দাঁড়িয়ে। আশা করি বন্দর কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক শেয়ার বিজকে বলেন, ‘কিছু কনটেইনার জমা হয়ে গেছে সত্য। কারণ চীন থেকে আমদানি করা নতুন রেল মাউন্টেড গ্যান্ট্রি ক্রেন পরিচালনার অপারেটর নতুন। তাই সমস্যা হচ্ছে। এতে কিছুটা সময়ও বেশি লাগছে। কিছুদিন পর সেটা থাকবে না। তাছাড়া বর্তমানে কোনো ধরনের সিরিয়াল মানা হচ্ছে না। যেটা সামনে পাচ্ছে দ্রæত তুলে দিচ্ছে রেকে। ফলে কারও কনটেইনার পরের সিরিয়ালে থাকলেও আগে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। আশাকরি কিছুদিনের মধ্যে স্বাভাবিক সময়ের মধ্যে ফিরে আসবে।
চট্টগ্রাম বন্দরে আরএমজি দক্ষ অপারেটর না থাকায় লোডিংয়ে ধীরগতি
