Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 1:39 pm

চট্টগ্রাম বন্দরে নৌ-অপরাধ শূন্যের কোঠায়

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: নৌ-নিরাপত্তায় জাপান ও সিঙ্গাপুরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রবেশদ্বার খ্যাত চট্টগ্রাম বন্দরের নৌ-সীমানায় অপরাধ শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। ২০০৭ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে যেখানে ১২টি নৌ-অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল, সেখানে গত ২০১৯ সালে কোনো ধরনের নৌ-অপরাধ সংঘটিত হয়নি। এতে নিজেদের সুনাম আরও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক)। অন্যদিকে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর সহযোগিতায় এ অর্জনে গর্বের বিষয় বলে মনে করেন চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারীরা।

দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে চলাচলকারী জাহাজে জলদস্যুতা প্রতিরোধকারী সংস্থা রিক্যাপ কর্তৃক গত ১৫ জানুয়ারি প্রকাশিত ২০১৯ সালের প্রতিবেদনে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম বন্দরসহ বাংলাদেশের উপকূলীয় সমুদ্র অঞ্চলকে জিরো ইনসিডেন্ট অর্থাৎ শতভাগ নিরাপদ ঘোষণা করেন।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, সদস্যভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ২০১৯ সালে চীনে তিনটি, ভারতে চারটি, ইন্দোনেশিয়ায় ২০টি, মালয়েশিয়ায় আটটি, ফিলিপাইনে ছয়টি এবং ভিয়েতনামে দুটি নৌচুরি এবং জলদস্যুতার ঘটনা সংঘটিত হলেও বাংলাদেশ শূন্যের কোঠায় রয়েছে।

২০০৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত গত ১২ বছরে চট্টগ্রাম বন্দরের নৌ-সীমানায় মোট ১২৫টি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এর মধ্যে ২০০৭ সালে ১২টি, ২০০৮ সালে ১০টি, ২০০৯ সালে ১৫টি, ২০১০ সালে ২১টি, ২০১১ সালে ১৪টি, ২০১২ সালে ১১টি, ২০১৩ সালে ছয়টি, ২০১৪ সালে ১৬টি, ২০১৫ সালে ১০টি, ২০১৬ সালে একটি, ২০১৭ সালে ১১টি এবং ২০১৮ সালে ৯টি নৌ অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।

অন্যদিকে, ২০০৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত গত ১৩ বছরে চীনে সাতটি, ভারতে ১০৩টি, ইন্দোনেশিয়ায় ৪৬৪টি, মালয়েশিয়ায় ১০৬টি, ফিলিফাইনে ৭৮টি, ভিয়েতনামে ১০৬টি, সিঙ্গাপুরে সাতটি, শ্রীলঙ্কায় একটি নৌ-অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।

এদিকে, গত সোমবার সকালে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) সঙ্গে রিক্যাপের ডেপুটি ডিরেক্টর নিকোলাস লিওসহ পাঁচ সদস্যের একটি টিম ও বন্দর ব্যবহারকারীদের মধ্যে একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে নিকোলাস লিও চবক সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমডোর শফিউল বারীকে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে জলদস্যুতা মুক্ত করার বিশেষ কৌশল অবলম্বনের জন্য অভিনন্দন জানান। একই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশ কোস্টগার্ড বাহিনী ও বাংলাদেশ নৌবাহিনীকেও উপকূলীয় অঞ্চলে জলদস্যুতা প্রতিহত করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার জন্য ধন্যবাদ জানান। এছাড়া বন্দরের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা আধুনিকায়ন করার জন্য এবং আইএসপিএস বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখার জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের প্রশংসা করেন নিকোলাস লিও।

এ সময় নিকোলাস লিও বলেন, ‘২০১৯ সালে নৌ-নিরাপত্তায় বাংলাদেশের অর্জন জাপান ও সিঙ্গাপুরের পর্যায়ে রয়েছে; যা যে কোনো মূল্যে অক্ষুন্ন রাখতে হবে।’

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক মামুনুর রশিদ বলেন, ‘২০০৪ সালে চট্টগ্রাম বন্দর আইএসপিএস কোড বাস্তবায়ন করে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ধীরে ধীরে সাফল্য অর্জন করেছে; যা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।’

বাংলাদেশ ফ্রেট ফরওয়ার্ডস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন মানে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের নৌবাণিজ্য সেবার উন্নয়ন। ২০২১ সালে প্রধানমন্ত্রীর ৬০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি বাণিজ্যের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিশ্বমানের এ নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখবে।’

নৌ-অপরাধ বা জলদস্যুতার ঘটনা না ঘটলেও চট্টগ্রাম বন্দরে লোডিং-আনলোডিংয়ের সময় ব্যবসায়ীদের মালামাল চুরির কিছু ঘটনা ঘটে এবং এ বিষয়টি প্রতিরোধ করা উচিত বলে মনে করেন পোর্ট ইউজার্স ফোরাম ও চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম। চট্টগ্রাম বন্দরে নৌ-অপরাধ শূন্যের কোটায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটি ভালো খবর। জলদস্যুতা নেইÑএটা অর্থনীতির জন্য খুবই ভালো ব্যাপার। ব্যবসায়ীরা নির্বিঘেœ তাদের মালামাল আনতে পারে। কিন্তু শূন্যের কোঠায় বললে হবে না, জলদস্যুতা না হলেও মালামাল লোডিং-আনলোডিংয়ের সময় চুরি হয়। জলদস্যুতা নেই, চুরি আছে কিন্তু।’

এ বিষয়ে চবকের সচিব মো. ওমর ফারুক শেয়ার বিজকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের সিকিউরিটি সিস্টেম অনেক উন্নত হয়েছে। নদী ও স্থলপথ এবং বন্দরের সংরক্ষিত এলাকায় ইউএস কোস্টগার্ডের রিকোয়ারমেন্ট অনুযায়ী, আইএসপিএস কোড শতভাগ অনুসরণ করে যাচ্ছি। ইউএস কোস্টগার্ড আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখে খুবই সন্তুষ্ট। বহির্নোঙরে চট্টগ্রাম বন্দরের পাশাপাশি কোস্টগার্ড, নেভি সবারই এক্ষেত্রে অবদান রয়েছে। এটা দেশের ও চট্টগ্রাম বন্দরের সুনাম অনেকাংশে বৃদ্ধি করেছে।’

তিনি জানান, ভেসেল ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (বিটিএমআইএস) মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর ও আউটার রিং রোডসহ পুরো এলাকাটা আমরা মনিটরিং করি। বিটিএমআইএসের ক্যামেরা আউটার রিং রোড পর্যন্ত বিস্তৃত। সবগুলো জাহাজকে আমরা কন্ট্রোল রুম থেকে দেখতে পারি, গতিবিধি দেখতে পারি। কোনো জাহাজের পাশে কোনো কান্ট্রি বোট গেল কি না, জলদস্যু গেল কি না বা পাইরেসি হচ্ছে কি না, সবকিছু আমরা কন্ট্রোলরুমের মাধ্যমে মনিটরিং করতে পারি। যে কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটার আগেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে তাৎক্ষণিক বলতে পারি, যেটা আগে ছিল না।’