সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: দেশে চলমান আন্দোলন ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে কনটেইনার জমে স্তূপ হয়েছে ৪২ হাজার ৬৩৮ একক। এসব কনটেইনার দ্রুত সময়ে ডেলিভারি শুরু না হলে ৫০ হাজার কনটেইনার ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে দেশের আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম অস্বাভাবিকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কনটেইনার ডেলিভারির সংখ্যা কমে যায়। আর রোববার দেশব্যাপী কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতা ও অস্থিরতায় সড়ক যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ ছিল।
অপরদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগে সোমবার ও মঙ্গলবার কার্যত অচল হয়ে যায় সবকিছু। ফলে গত পাঁচ দিনে প্রায় ছয় হাজারের অধিক কনটেইনার জমে যায়। গতকাল বেলা ২টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে ছিল ৪২ হাজার ৬৩৮ একক, যা গতকাল একই সময়ে ছিল ৪৪ হাজার ১৭৭ একক কনটেইনার। আর পহেলা আগস্টে ছিল ৩৬ হাজার ৩৫৮ একক কনটেইনার। অর্থাৎ ছয় দিনের ব্যবধানে বেড়েছে ছয় হাজার ২৮০ একক কনটেইনার।
গতকাল বেলা ১টায় পরিবহন শাখার কর্মকর্তারা বলেন, আগের দিন বেলা ২টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত দুই হাজার ২৩৮ একক কনটেইনার ডেলিভারি হয়েছে। এর আগের দিন মাত্র ৩১৯ একক কনটেইনার ডেলিভারি হয়েছে। সবকিছু চালু হলে ডেলিভারি আগের মতো স্বাভাবিক হতে কমপক্ষ ১২ থেকে ১৩ দিন লাগবে। কর্মকর্তারা আরও বলেন, জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনে শাটডাউনে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকার সময় বন্দর থেকে কনটেইনার ডেলিভারি কার্যক্রমে গতিশীল থাকলেও গত ছয় দিন ধরে আবার সেøা হয়েছে। আর এখন তো দেশব্যাপী চলমান অস্থিরতায় কনটেইনার ডেলিভারি নেয়া অনেকটা বন্ধ হয়ে পড়েছে। এতে জাহাজ থেকে কনটেইনার নামানো ও ওঠানো বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক শেয়ার বিজকে বলেন, গত কয়েক দিন কনটেইনার ডেলিভারি তেমন হয়নি, যার নেতিবাচক প্রভাবে বন্দর ইয়ার্ডে কনটেইনার জমেছে। আমরা ডেলিভারি দিতে প্রস্তুত। কিন্তু সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের তো ডেলিভারির জন্য আসতে হবে। আমরা সবাইকে অনুরোধ করছি, দ্রুত সময়ে কনটেইনার ডেলিভারি নিতে। তবে আমাদের জাহাজ থেকে পণ্য খালাস কার্যক্রম স্বাভাবিক আছে।
গতকাল চট্টগ্রাম মহানগরের বিভিন্ন বাণিজ্যিক এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত কিছু এলাকায় ব্যাংকের শাখা চালু থাকলেও তেমন গ্রাহকের উপস্থিত নেই। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলেন, সকাল থেকে কিছু লোক টাকা উত্তোলন করার জন্য এসেছিলেন। তেমন আমদানি ও রপ্তানি-বিষয়ক কাজ হয়নি। আগের কাজগুলো চলছে। কর্মীরা অনেকটা অলস সময় পার করছেন। সেভেন রিংস সিমেন্ট বিক্রয় কর্মকর্তা ইফতেখার হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন ও চলমান অস্থিরতার কারণে আমাদের কারখানা থেকে সিমেন্ট ডেলিভারি অনেক বন্ধ রয়েছে। আর পণ্য পরিবহনের জন্য গাড়িও পাওয়া যাচ্ছে না। বলা যায়, পুরোপুরি পণ্য পরিবহন অচল হয়ে পড়ে। নতুন করে কোনো বিক্রয় আদেশও পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ রিটেল সেলাররা নিরাপত্তার জন্য দোকান বন্ধ রাখছেন।
এ অবস্থা চললে তো লোকসান নিশ্চিত হবে। এ বিষয়ে চট্টগ্রামের কয়েক ব্যবসায়ী শেয়ার বিজকে বলেন, কোটা আন্দোলন ও চলমান অস্থিরতায় ব্যবসায় পরিবেশ চরমভাবে নষ্ট হচ্ছে। এমনিতে ব্যবসায়ীরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। তাই সরকারের উচিত হবে তাড়াতাড়ি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন করে সবকিছুকে গতিশীল করা।