চট্টগ্রাম মহানগরে নিরাপদ পানি নিশ্চিত করুন

দেশের দ্বিতীয় প্রধান নগরী চট্টগ্রাম ও সংলগ্ন এলাকায় পানি সরবরাহ এবং পয়োনিষ্কাশনের দায়িত্ব চট্টগ্রাম ওয়াসার। তবে ওয়াসার পানি ও পয়োনিষ্কাশনে সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি। লোকসংখ্যার বিপরীতে পানির চাহিদা দৈনিক প্রায় ৫০ কোটি লিটার। বর্তমানে চট্টগ্রাম ওয়াসা দৈনিক ৪৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করে, যা চাহিদার ৮৫ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানটি বিদ্যমান গ্রাহকদের ৯০ শতাংশের মধ্যে পানি সরবরাহ সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে বলে দাবি করছে। গত এক দশকে চট্টগ্রামের পানি সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও অর্জনও কম নয়।

গতকাল শেয়ার বিজের পাঠকরা পেয়েছেন অন্য খবরÑ‘চট্টগ্রাম ওয়াসা: সাড়ে ছয় কোটি লিটার পানির উৎপাদন কমছে, বাড়ছে লবণাক্ততা’।

চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, ওয়াসার পানির উৎস হলো হালদা ও কর্ণফুলী নদী। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ভাটার সময় নদী থেকে পানি নেয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া জোয়ারের সময় লবণাক্ততা বেড়ে যায়। এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য ওয়াসার কাছে বিকল্প কোনো উৎস নেই। এ কারণে মদুনাঘাটের শেখ রাসেল ও মোহরা পানি শোধনাগারের চার কোটি লিটার এবং রাঙ্গুনিয়ার কর্ণফুলী শেখ হাসিনা পানি শোধনাগারের পানি উৎপাদন আড়াই কোটি লিটার কমেছে। অর্থাৎ এখন দৈনিক সাড়ে ছয় কোটি লিটার পানির উৎপাদন কমে গেছে। ফলে নগরীতে রেশনিং করে পানি সরবরাহের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম শহরের পানি লবণাক্ত। পাহাড়ে সুপেয় পানির উৎস সীমিত। পাহাড়ি ছড়া শুকিয়ে যাচ্ছে। উজানে বাঁধ দেয়ার কারণে নদ-নদীর পানিও কমছে। সুপেয় পানি ও সেচের জন্য অত্যধিক মাত্রায় ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতার কারণে পানির স্তরও নিচে নেমে যাচ্ছে দিন দিন। চট্টগ্রাম মহানগরে পানি ব্যবস্থাপনার দুর্বলতায় মিষ্টি পানিসমৃদ্ধ দেশেও সুপেয় পানি ক্রমেই দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে। দেশের ৩৩ শতাংশ এলাকার মানুষ সুপেয় পানির বড় ঝুঁকিতে রয়েছে। এ ব্যর্থতা ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনও হুমকিতে পড়ার শঙ্কা তৈরি করেছে।

পানি বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহকৃত পানিকে সুপেয় পানি বলা যায়। তবে সেখানে কোনো ময়লা ঢুকে পড়লে সেই পানিকে আর সুপেয় থাকে না। সুপেয় পানি না ফুটিয়েই পান করা যাবে।’ এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ২০৩০ সালের মধ্যে সরকারকে সুপেয় পানি সরবরাহে শতভাগ সাফল্য অর্জন করতে হবে। সেটা করতে হলে প্রতি বছর ছয় শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। বর্তমান অগ্রগতি প্রায় এক শতাংশ। ভূমিকম্প দুর্যোগপ্রবণ হওয়ায় দেশে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর থেকে চাপ কমিয়ে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারে উদ্যোগ নিতে হবে। শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার সময় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে জলাধারের ব্যবস্থা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। যেহেতু কলকারখানায় লবণাক্ত পানি ব্যবহার যন্ত্রপাতি বিনষ্ট হয় দ্রুত, তারা বিশুদ্ধ পানির জন্য ওয়াসার ওপর নির্ভরশীল। তারা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পানির জোগান দিলে ওয়াসার ওপর চাপ কমবে। চট্টগ্রাম ওয়াসার উচিত হবে নগরবাসীর চাহিদা মেটাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০