ফাষ্ট ফাইন্যান্স লিমিটেড

চট্টগ্রাম শাখায় খেলাপি বাড়ল ৫১ কোটি টাকা

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: ফাষ্ট ফাইন্যান্স লিমিটেড চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন পর্যায়ের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে অর্থায়ন করেছিল। এর মধ্যে পাঁচ প্রতিষ্ঠান ঋণখেলাপি হয়েছে ৫১ কোটি টাকার বেশি। এর আগেও অ-আর্থিক খাতের এ প্রতিষ্ঠানটি মাবিয়া গ্রুপের জাহাজ ভাঙা ও ইস্পাত শিল্প খাতের একাধিক প্রতিষ্ঠান ৪৭ কোটি টাকা খেলাপি ঋণে পরিণত হয়। এ শাখায় বছর বছর খেলাপি ঋণ বাড়ছে।

ফাষ্ট ফাইন্যান্স লিমিটেড সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম অঞ্চলে জাহাজ ভাঙা, ইস্পাত শিল্প, আবাসন, ট্রেডিং ও অন্যান্য খাতে প্রায় ২৩৮ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ফার্¯¡ ফাইন্যান্স লিমিটেড অর্থায়ন করে। এর মধ্যে অ-আর্থিক খাতের এ প্রতিষ্ঠানে গত ২৭ নভেম্বর এক দিনেই পাঁচ প্রতিষ্ঠান ঋণখেলাপি হয়েছে ৫১ কোটি ৫১ লাখ ৯১ হাজার টাকা। এর মধ্যে ইটারনাল ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড চার কোটি ৫৬ লাখ ৯৫ হাজার টাকা, এসএস ট্রেডিং চার কোটি ৪৬ লাখ ৭৮ হাজার টাকা, ফাতেমা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট ১১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা, রাইজিং লজিস্টক ২১ কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং রাইজিং স্টিল লিমিটেড ২০ কোটি ৫৩ লাখ ৭৩ হাজার টাকা খেলাপি হয়। অর্থাৎ এ পাঁচ প্রতিষ্ঠান খেলাপি হয়েছে ৫১ কোটি ৫১ কোটি ৯১ হাজার টাকা।

অপরদিকে সীতাকুন্ডের জাহানারবাদ এলাকার মহরম আলী মেম্বারের ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের মালিকানাধীন মাবিয়া গ্রুপের একাধিক প্রতিষ্ঠানও খেলাপি গ্রাহকে পরিণত হয়, যিনি মাবিয়া গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারিতে মাবিয়া স্টিল কমপ্লেক্স এবং ব্রাদার্স ইস্পাত ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডও খেলাপিতে পরিণত হয়। এর মধ্যে মাবিয়া স্টিল কমপ্লেক্সের খেলাপি ১৩ কোটি ৪৭ লাখ ৮৮ হাজার টাকা এবং ব্রাদার্স ইস্পাত ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ২১ কোটি ১৫ লাখ ১১ হাজার টাকা। আর এই প্রতিষ্ঠানের খেলাপি পাওনা আদায়ে ঋণের বিপরীতে বন্ধকিতে থাকা সীতাকুণ্ড ও কুমিল্লার ২৬৩ শতাংশ জমি নিলামে বিক্রয়ে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। এছাড়া মাবিয়া গ্রুপের ফাহিম স্টিল রি-রোলিং মিলসের নামে নেয়া ঋণ গত ২০১৯ সালে ৩ আগস্ট খেলাপি হয়। প্রতিষ্ঠানটির কাছে ফার্স্ট ফাইন্যান্সের সুদাসলে মোট খেলাপি পাওনার পরিমাণ ছিল ১২ কোটি ৬৭ লাখ ২২ হাজার টাকা। আর এ খেলাপি পাওনা আদায়ে প্রতিষ্ঠানটির সীতাকুণ্ড, খুলশী ও কুমিল্লায় মোট ১১৮ দশমিক ৯৬ শতক জমি নিলামে বিক্রি করে পাওনা আদায়ে চেষ্টা করা হয়। পরে ডিসেম্বরে অর্থঋণ আদালতে মামলা করা হয়। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে খেলাপি ঋণের দায়ে মাবিয়া গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহাঙ্গীর আলমকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

প্রসঙ্গত, ফার্¯¡ ফাইন্যান্স লিমিটেড পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০০৩ সালে। প্রতিষ্ঠানটির অনুমোদিত মূলধন ৫০০ কোটি। আর পরিশোধিত মূলধন ১১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ২০১৭ সাল থেকে লোকসানে আছে ফাষ্ট ফাইন্যান্স লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি সর্বশেষ প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর কর-পরবর্তী নিট লোকসান (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) হয় ২৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, যা আগের বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর ছিল ৩৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা। অপরদিকে সর্বশেষ ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন খাতে মোট ৮৯২ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে বিতরণ করে।

এ বিষয়ে জানার জন্য গতকাল সকালে ফাষ্ট ফাইন্যান্স লিমিটেডের চট্টগ্রাম শাখার ব্যবস্থাপক শফি উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে বিকালে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে জানান। ফলে তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে নামে প্রকাশে অনিচ্ছুক ফাষ্ট ফাইন্যান্স লিমিটেডের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম শাখায় খেলাপি ঋণ বাড়ছে, যা উদ্বেগজনক। আর আদায়ের পরিমাণও কম। এগুলোর নামেও এনআই অ্যাক্টে মামলা চলমান আছে। এখন অর্থঋণ আদালতের মামলা করা হবে। আর পাওনা আদায়ে আমরা আইন অনুসারে কাজ করছি। তবে এসব খেলাপিদের অনেক জমি ও সম্পদ আছে। কিছু কিছু জমি বিক্রি করলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ শোধ করতে পারবে। কিন্তু তারা তা করছে না।’

উল্লেখ্য, ‘জেড’ ক্যাটেগরির কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার ৪১ দশমিক ৩১ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর ১৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ ও ৩৯ দশমিক ১৬ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার মালিকানা রয়েছে। গতকাল কোম্পানিটির শেয়ারদর সর্বোচ্চ ছিল সাত টাকা ৬০ পয়সা এবং সর্বনিন্ম ছিল সাত টাকা ৩০ পয়সা। কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০১৪ সালে পাঁচ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দেয়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০