শেয়ার বিজ ডেস্ক: চীনের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলিবাবার শেয়ারদর ৭ শতাংশ কমেছে। মুনাফা কমার খবরে যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজারে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদর কমে গেছে। খবর: এপি ও সিএনবিসি।
গত মার্চে সমাপ্ত চতুর্থ প্রান্তিকে আলিবাবার নিট মুনাফা কমেছে ৮৬ শতাংশ। এ সংবাদের জেরে গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রি-মার্কেট লেনদেনে কোম্পানিটির শেয়ারদর কমেছে। বাজার খোলার প্রথম ঘণ্টায় শেয়ারদর কমেছে ৮ দশমিক ১ শতাংশ।
আলোচ্য সময়ে আলিবাবার নিট আয় কমে ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ৩৩০ কোটি চীনা ইউয়ান হয়েছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৮৫ শতাংশ কম।
সিএনবিসির খবরে বলা হয়েছে, আলিবাবার জন্য ২০২৩ সালটি বেশ কঠিন ছিল। কারণ, কোম্পানিটি তার এ যাবৎকালের সর্ববৃহৎ করপোরেট কাঠামোগত সংশোধন করে। সেই সঙ্গে কোম্পানির উচ্চ পর্যায়ের ব্যবস্থাপনায়ও একাধিক পরিবর্তন ঘটে। এর মধ্যে রয়েছে, কোম্পানির অভিজ্ঞ কর্মকর্তা এডি উ গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে চলতি বছরের শুরুর দিকে আলিবাবা ঘোষণা করে, তারা শেয়ার বাইব্যাক বা পুনঃক্রয় কর্মসূচি ২৫ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৫০০ কোটি ডলার বাড়িয়েছে। সে অনুযায়ী, ২০২৭ সালের মার্চের মধ্যে তারা এ পরিমাণ অর্থের শেয়ার বাইব্যাক করবে।
উল্লেখ্য, ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় চীনের ভোক্তারা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। তা সত্ত্বেও গত মার্চ প্রান্তিকে আলিবাবার মূল ই-কমার্স ব্যবসায়ে কিছুটা পুনরুদ্ধারের লক্ষণ দেখা গেছে। চীনের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি মন্থর হয়ে পড়ায় হ্যাংঝু-ভিত্তিক আলিবাবা তার বৈদেশিক ব্যবসা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছে। কিন্তু পিডিডির মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে আলিবাবা। কারণ, ওই সব প্রতিষ্ঠান তুলনামূলক কম দামে পণ্য সরবরাহ করছে।
চীনে আলিবাবার ই-কমার্স ব্যবসা পরিচালনা করে তাওবাও ও টিমল। এই দুটি বিভাগের রাজস্ব আয় গত এক বছরে ৪ শতাংশ বেড়ে ৯৩ দশমিক ২ বিলিয়ন বা ৯ হাজার ৩২০ কোটি ইউয়ানে উঠেছে। এর আগের ত্রৈমাসিকে এই ব্যবসায়ের আয়ে ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। গত এক বছরে আলিবাবার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বা ব্যবসা ৪৫ শতাংশ বেড়ে ২৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৭৪০ কোটি ইউয়ানে দাঁড়িয়েছে।
এ বছরের শুরুর দিকে এডি উ আরও বিনিয়োগের মাধ্যমে ই-কমার্স ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি অর্জনের হার পুনরায় চাঙা করে তোলার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, মার্চ ত্রৈমাসিকের তথ্যে সেই লক্ষণ রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে এবং আমরা প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরছি।
মুনাফা কমার খবরে শেয়ারের দামে দীর্ঘমেয়াদি পতন দেখা যাচ্ছে। এর কারণ হিসেবে আলিবাবা বলছে, আলোচ্য প্রান্তিকে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ কমে গেছে।
বিনিয়োগকারীরা আলিবাবার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ওপর নজর রাখছেন। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তাদের ক্লাউড কম্পিউটিং বিভাগ ২৫ দশমিক ৬ বিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ৩ শতাংশ বেশি। এর আগের প্রান্তিকগুলোয়ও একই প্রবৃদ্ধি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। মার্চ ত্রৈমাসিকে এআই-সম্পর্কিত মুনাফা তিনগুণ বেশি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আলিবাবা বলেছে, ইন্টারনেট সোবাদাতা প্রতিষ্ঠান এবং আর্থিক ও গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রধান ক্রেতা। প্রতিষ্ঠানটি ক্লাউড ব্যবসার বিষয়ে আর বিস্তারিত জানায়নি।
মঙ্গলবার আলিবাবা জানায়, হংকং স্টক এক্সচেঞ্জে প্রাইমারি মার্কেট থেকে সেকেন্ডারি মার্কেটে প্রতিষ্ঠানটি লেনদেন শুরু করবে।
২০২০ সালের অক্টোবরে আলিবাবার শেয়ারদর সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছায়। এর পর থেকে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম ৭০ শতাংশের বেশি কমেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় চীনের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর নজরদারি ও প্রতিযোগিতার কারণে তাদের শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমেছে।