চবিতে ঠিকাদারকে মারধর অভিযোগে কাজ বন্ধের ঘোষণা: ঠিকাদার সমিতি

প্রতিনিধি চবি: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজি, রড চুরি, ইট চুরি এবং প্রকাশ্যে ঠিকাদারদের গায়ে হাত তোলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে সব ধরনের কাজ বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে ঠিকাদার সমিতি।

গেল রোববার দুপুরে ঠিকাদার সমিতির সভাপতি মো. সেকান্দর হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেদ চৌধুরী নিজেদের স্বাক্ষরিত চিঠি উপাচার্যকে দিয়েছেন।

চিঠিতে বলা হয়, চলমান কিছু মাদক আসক্ত অ-ছাত্রদের চাঁদাবাজির মহোৎসব চলছে, রড চুরি, ইট চুরি, সকল নির্মাণ সামগ্রী চুরি এবং প্রকাশ্যে ঠিকাদারদের গায়ে হাত তোলা। উল্লেখ্য যে, গত ৩১ জানুয়ারি ঘটনাস্থলস্থিত সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অফিসের অন্তর্ভূক্ত নাম ফলক এর কাজ চলমান থাকা অবস্থায় বিকাল আনুমানিক ৪ টার সময় সন্ত্রাসীরা আর, এস, এন্টারপ্রাইজ স্বত্ত্বাধিকার ঠিকাদারের ছেলেকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে, লাঠি, রড দিয়ে মারধর করে শহীদ আবদুর রব হলে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে চাঁদা দাবি করেন। এ ব্যাপারে ঠিকাদার বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর, প্রধান প্রকৌশলী(ভারপ্রাপ্ত), হাটহাজারী মডেল থানা ও যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে ঠিকাদারের ছেলে প্রাণে রক্ষা পায়। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হাটহাজারী মডেল থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করা হয়।

চিঠিতে আরও বলা হয়, প্রক্টর বরাবর ঠিকাদারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে, একটি তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আমরা ঠিকাদার সমিতির পক্ষ থেকে জোরালো দাবি জানাচ্ছি যে, মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার ও গ্রেপ্তারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং আমাদের উন্নয়নমূলক কাজ চলমান ও যে কোন ধরণের সমস্যা সমাধানের জন্য আপনি যথাযথ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন। অন্যথায় আমরা ঠিকাদার সমিতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ধরণের উন্নয়ন কাজ থেকে বিরত থাকব।

চিঠিতে আরও বলা হয়, চাঁদাবাজির এসব অভিযোগ অতীতে প্রশাসনকে জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। উল্টো অভিযোগ করায় শ্রমিকদের মারধর করে বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী নিয়ে গেছেন চাঁদাবাজেরা। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও মালামাল লুট হচ্ছে। প্রশাসন ব্যবস্থা না নেওয়ায় ঠিকাদারেরা মানহানিসহ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এসব ঘটনার বিহিত না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকাভুক্ত ঠিকাদারেরা সব নির্মাণ-সংস্কারকাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ঘটনার পরপরই গত ১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মামুনকে আহ্বায়ক, সহকারী প্রক্টর নাজমুলে ইসলাম মুরাদ ও সহকারী প্রক্টর শংকর বড়ুয়াকে সদস্য করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

ঠিকাদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেদ চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এসব সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে আমাদের। বারবার বলার পরও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। এখন আমরা উপাচার্যকে চিঠির মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছি এভাবে চলতে থাকলে আমাদের পক্ষে কাজ করা সম্ভব হবে না। আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমাধান না পাওয়া পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখবো।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নূর আহমদের সাথে মুঠোফোনে কয়েক দফায় যোগাযোগ করা হলে কোন সাড়া মেলেনি।

এর আগে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের চার নেতার বিরুদ্ধে চাঁদা না পেয়ে ঠিকাদারকে হলের কক্ষে আটকে রেখে মারধরের অভিযোগ উঠে। গত ৩১ জানুয়ারি বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ আবদুর রব হলে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গত ১ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার হাটহাজারী থানায় চার নেতার নাম উল্লেখ করে মামলা করেন ভুক্তভোগী ঠিকাদার মো. তামজিদ উদ্দীন। এতে অজ্ঞাতপরিচয় আরও সাত-আটজনকে আসামি করা হয়।

অভিযুক্ত এই চার নেতা বিলুপ্ত হওয়া শাখা ছাত্রলীগের কমিটিতে পদধারী ছিলেন। তারা হলেন বিলুপ্ত কমিটির সহসভাপতি এম মেহেদী হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক শাফায়েত হোসেন, উপকর্মসূচি ও পরিকল্পনা সম্পাদক মাশরুর কামাল ও সহসম্পাদক মো. হৃদয়। চাঁদাবাজির অভিযোগ, সাংবাদিককে মারধরসহ নানা অভিযোগে গেল বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি বিলুপ্ত করে কেন্দ্র।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০