ঝড়ের কবল থেকে গাছ ও নারকেল রক্ষায় ভিয়েতনামের খাটো জাতের সিয়াম ব্লু নারিকেল গাছের চাষাবাদ শুরু করেছেন মাহাফুজুর রহমান। নারিকেল গাছের পাশাপাশি সাথি ফসল হিসেবে চাষ করছেন মাল্টা, লাউ, করলা, ধুন্দল ও শসা। এসব ফসলের কান্দিতে রয়েছে মাছের অভয়ারণ্য। মাহাফুজুর রহমান ঝালকাঠি সদর উপজেলার বেশাইন খান গ্রামের অধিবাসী। তিনি এই মিশ্র খামারটির নাম দিয়েছেন ‘এশা ইন্টিগ্রেটেড এগ্রিকালচার’।
খামার ঘুরে দেখা যায়, তিন একর জমিতে তিনি গড়ে তুলেছেন একটি মিশ্র খামার। শুরুতে তিনি ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে ভিয়েতনামের খাটো জাতের ১৮০টি সিয়াম ব্লু নারিকেল গাছের চারা রোপণ করেন। বন্যা ও ঝড়ো হাওয়ায় এই নারিকেল গাছের কোনো ক্ষতি হয় না। চারা রোপণের তিন বছরের মধ্যে ছোট অবস্থাতেই গাছে নারিকেল পাওয়া যাবে।
মাহফুজের এই নারিকেল খামারে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করছেন পাঁচজন শ্রমিক। কৃষি অধিদফতরের পরামর্শ নিয়ে নারিকেল গাছের পাশাপাশি চাষ করছেন সাথি ফসল মাল্টা, লাউ, করলা, ধুন্দল ও শসা। আর এসব ফসলের কান্দিতে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের অভয়ারণ্য। সবজি বিক্রি করে মৌসুমের প্রতি সপ্তাহে দশ হাজার টাকা আয় করেন মাহফুজ। এই টাকা থেকে শ্রমিকদের পারিশ্রমিক দেওয়া হয়। সংগত কারণে তার এই খামার দেখে গ্রামের অনেকে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। খামারটি দেখতে আসছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। এমনকি ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকেও বেকার যুবকদের এই খামারের আদলে খামার করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
মাহাফুজুর বলেন, উপকূলীয় এলাকায় খাটো জাতের ভিয়েতনামের ৫০০টি নারিকেলের চারা রোপণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। আমি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতাম। মূলত তখন থেকে খামার করার পরিকল্পনা করি। কৃষি বিভাগের সহযোগিতা নিয়ে মিশ্র খামার গড়ে তুলেছি। এখন আমার খামারে বিভিন্ন সবজি ও মাছের চাষ হচ্ছে। আশা করি এই খামার থেকে একসময় আমি লাভবান হব।
খামারে কর্মরত শ্রমিক ফারুক সিকদার বলেন, আমরা পাঁচ-ছয় শ্রমিক প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ খামারে কাজ করছি।
কীর্তিপাশা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুস শুক্কুর মোল্লা বলেন, আমাদের ইউনিয়নে মাহাফুজুর রহমান যে কৃষি খামার করেছেন, তা অত্যন্ত লাভজনক। এই খামারটি এলাকার বেকার যুবকদের জন্য অনুকরণীয়। তারা ইচ্ছা করলে মাহাফুজের কাছ থেকে এবং কৃষি বিভাগ থেকে তথ্য নিয়ে এমন খামার করতে পারেন।
ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক শেখ আবুবকর ছিদ্দিক বলেন, মাহাফুজকে প্রথমে নারিকেলের বাগান করার পরামর্শ দিয়েছিলাম। তিনি আমাদের কাছ থেকে ১৮০টি ভিয়েতনামের খাটো জাতের নারিকেল চারা নিয়ে রোপণ করেছেন। এ জাতের নারিকেল আকারে বড় ও খেতে সুস্বাদু। পরে আমাদের পরামর্শে তিনি কান্দিতে মাছের চাষ ও সাথি ফসল হিসেবে সবজি চাষ শুরু করে সফলতা পেয়েছেন।
ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক বলেন, আমরা খামারটি পরিদর্শন করেছি। খামারটি সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে করা হয়েছে। এখানে একসঙ্গে ফল, সবজি ও মাছের চাষ হচ্ছে। এটি জেলার সবচেয়ে বড় মিশ্র খামার। এখানে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান হয়েছে। নারিকেলের ফলন শুরু হলে মাহাফুজ এখান থেকে অনেক টাকা আয় করতে পারবেন।
সম্প্রতি মিশ্র খামারটি পরিদর্শনে এসে কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ফরিদা জাহান বলেন, এই পদ্ধতিতে খামারে ভিয়েতনামের খাটো জাতের নারিকেল, সবজি ও মাছের চাষ লাভজন। আমি কৃষক মাহাফুজকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এই খামারটি এলাকার কৃষকদের মাঝে ব্যপক সারা ফেলেছে, তারা উৎসাহিত হচ্ছেন।
মো. শাহীন আলম