চরাঞ্চলের অনেকেই এখন স্বাবলম্বী। বদলে ফেলেছে নিজেদের জীবনযাত্রা। কম পরিশ্রম ও অল্প খরচে বেশি লাভের কারণে তরমুজ চাষের প্রতি ঝুঁকছেন তারা। এ বছর তরমুজের ফলন ভালো হওয়ায় চরাঞ্চলের কৃষক খুশি।
জানা যায়, উপযোগী মাটি, সঠিক পরিচর্যা ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর লালমনিরহাটের তিস্তা, ধরলা ও সানিয়াজান নদীবেষ্টিত কুলাঘাট, রাজপুর, মোগলহাট, সানিয়াজান, সিংগীমারী, বানিয়াটারী, কুটিরচর, কাউয়ার বাজার চরসহ বিভিন্ন চরাঞ্চলে তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। ভালো দাম পাওয়ায় খুশি তরমুজচাষিরা। মান ভালো থাকায় জেলার চাহিদা মিটিয়ে স্থানীয় আড়তদার ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছেন এ ফল। ফলন ভালো হওয়ায় অনেক চাষির মুখে খুশির হাসি দেখা গেছে। অনেকে আশাতীত অর্থনৈতিক সাফল্যও পেয়েছেন। জমি চাষাকরতে যে পরিমাণ খরচ হয়েছে, তার চেয়ে তিনগুণ বেশি লাভ হবে বলে আশাবাদী এখানকার তরমুজ চাষি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চরাঞ্চলের কৃষক এবার সুগার বেবি, জাগুয়ার, আলীবাবা, ট্রিপল স্টার, সুইট ডন, হানিডিউসহ বিভিন্ন জাতের হাইব্রিড তরমুজ চাষ করেছেন। এসব জাতের মান ভালো হওয়ায় বাজারজাত করতেও কোনো সমস্যা হচ্ছে না কৃষকের। বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ী ক্ষেত থেকেই নিয়ে যাচ্ছেন এখানকার তরমুজ।
চরাঞ্চলের কয়েকজন তরমুজ চাষি জানান, প্রায় এক মাস আগে তরমুজ তুলতে শুরু করেছেন তারা। প্রতিদিন আট থেকে ১০ হাজার তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। প্রতি হাজার তরমুজ আকারভেদে ৭০ থেকে ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হচ্ছে। সরাসরি ক্ষেত থেকে কিনছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানের আড়তদার।
মহিষ ও ঘোড়ার গাড়ি চালকরা জানান, এ বছর চরাঞ্চলে তরমুজের ফলন ভালো হওয়ায় বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা তরমুজ কিনতে এসেছেন। এতে তাদের গাড়ির চাহিদা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। মাসখানেক ধরে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ গাড়িতে করে বিভিন্ন চর থেকে তরমুজ নিয়ে লালমনিরহাট শহরে যাচ্ছেন তারা। ফলে তারা প্রতিদিন দুই হাজার টাকা বাড়তি আয় করছেন।
স্থানীয় আড়তদার ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিবছর অন্যান্য এলাকা থেকে তরমুজ কিনে এনে ব্যবসা করেন তারা। কিন্তু এ বছর লালমনিরহাটের চরাঞ্চলে চাষ হওয়া তরমুজের মান ভালো হওয়ায় তাদের সময় ও শ্রম বেঁচে গেছে। বর্তমানে জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তরমুজ সরবরাহ করছেন তারা।
লালমনিরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক বিধু ভূষণ রায় বলেন, তিস্তা, ধরলা ও সানিয়াজান নদীবেষ্টিত আশেপাশের জমি তরমুজ চাষের জন্য বেশ উপযোগী। এ বছর ফলন ভালো হওয়ায় চরাঞ্চলের চাষি পেয়েছেন আশাতীত অর্থনৈতিক সাফল্য। পাল্টে ফেলেছেন নিজেদের ভাগ্য। জমি চাষাবাদ করতে যে পরিমাণ খরচ হয়েছে, এবার তার চেয়ে অনেক বেশি লাভ হবে ধারণা করা হচ্ছে।
জাহেদুল ইসলাম সমাপ্ত, লালমনিরহাট