Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 4:12 am

চর্ব্য-চোষ্য-লেহ্য-পেয়: সুস্থতার জন্য মধু

মধুর গুণের যেন শেষ নেই। এটি নানা ধরনের রোগপ্রতিরোধক হিসেবে যেমন কাজ করে, তেমনি রোগবালাই দূর করতে সাহায্য করে।

মধুতে প্রায় ৪৫টি খাদ্য উপাদান থাকে। ফুলের পরাগের মধুতে থাকে ২৫ থেকে ৩৭ শতাংশ গ্লুকোজ, ৩৪ থেকে ৪৩ শতাংশ ফ্রুক্টোজ, শূন্য দশমিক পাঁচ থেকে তিন শতাংশ সুক্রোজ ও পাঁচ থেকে ১২ শতাংশ মল্টোজ। আরও রয়েছে ২২ শতাংশ অ্যামাইনো এসিড, ২৮ শতাংশ খনিজ লবণ ও ১১ ভাগ এনজাইম। ১০০ গ্রাম মধুতে প্রায় ৩০৪ ক্যালরি থাকে। এতে কোনো চর্বি নেই।

 

মধুর উপকারিতা

মধু শরীরের রোগপ্রতিরোধ শক্তি বাড়ায়। শরীরের ভেতর ও বাইরে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ প্রতিহত করার ক্ষমতার জোগান দেয়। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, মধুতে রয়েছে উচ্চশক্তিসম্পন্ন অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল এজেন্ট। এ এজেন্ট শরীরের ক্ষতিকর রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে। তাছাড়া মধু তাপ ও শক্তির ভালো উৎস

ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্যসহ নানা ধরনের পেটের অসুখ দূর করতে ভূমিকা রাখে। মধু পাকস্থলীর কাজকে জোরালো করে ও হজমের গোলমাল দূর করে। এটি অরুচি, বমিভাব, বুক জ্বালাপোড়া দূর করে

রক্তের হিমোগ্লোবিন গঠনে সহায়তা করে বলে এটি রক্তশূন্যতায় বেশ ফলদায়ক। মধু রক্ত ও রক্তনালি পরিষ্কার করতে সাহায্য করে

বলা হয়, ফুসফুসের যাবতীয় রোগে মধু উপকারী। এটা হাঁপানি রোধে সহায়তা করে। উচ্চরক্তচাপ কমায়। হƒদরোগের টনিক হিসেবে কাজ করে। এটা হƒৎপেশিকে সবল ও কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে

অনিদ্রার ভালো ওষুধ। রাতে শোয়ার আগে এক গ্লাস পানির সঙ্গে দুই চা চামচ মধু মিশিয়ে খেলে গভীর ঘুম হয়

যৌন দুর্বলতার জন্য এটি একটি উৎকৃষ্ট ওষুধ। হালকা গরম দুধের সঙ্গে মিশ্রিত মধু একটি প্রশান্তিদায়ক পানীয়ও বটে

মুখের ভেতরের স্বাস্থ্য রক্ষা, দাঁতের ক্ষয়রোধ ও পাথর জমাট বাঁধা রোধ করে। দাঁত পড়ে যাওয়া বিলম্বিত করে। মধু রক্তনালিকে সম্প্রসারিত করে দাঁতের মাড়ির স্বাস্থ্য রক্ষা করে। মধু মিশ্রিত পানি দিয়ে গড়গড়া করলে মাড়ির প্রদাহ দূর হয়

তারুণ্য ধরে রাখতে মধুর ভূমিকা অপরিহার্য। পেট পরিষ্কার করে ও ফ্যাট কমায়। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বক সুন্দর করে। ত্বকের ভাঁজ পড়া ও বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে। মধুর গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ক্যালসিয়াম দাঁত, হাড়, চুলের গোড়া শক্ত রাখে, নখের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করে, ভঙ্গুরতা রোধ করে

চা, কফি ও গরম দুধের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে হাঁচি, কাশি, জ্বর জ্বর ভাব, জ্বর, গলা ব্যথা, টনসিল, নাক দিয়ে পানি পড়া, জিহ্বার ঘা (ঠাণ্ডাজনিত) প্রভৃতি থেকে দ্রুত পরিত্রাণ পাওয়া যায়। যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া স্টেট কলেজ অব মেডিসিনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, এক চামচ মধু বিভিন্ন সর্দির ওষুধ থেকেও অনেক বেশি কার্যকর

শিশুর দেহের বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশ ভালো করে মধু। শিশুর দুর্বলতা দূর করার জন্য মধুতে রয়েছে জিংক ও ফসফরাস। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত মধু ও সুষম খাবারে অভ্যস্তরা তুলনামূলক বেশি কর্মক্ষম ও নিরোগ থাকেন।

 

হাসানুজ্জামান পিয়াস