শেয়ার বিজ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শিশুদের জন্য এমনভাবে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে হবে, যাতে তারা সেখান থেকে ভবিষ্যৎ জীবন গড়ার অনুপ্রেরণা পায়। গতকাল গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘২০১৯ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিতরণ’ অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। খবর: বিডি নিউজ।
শিশুদের জন্য চলচ্চিত্র নির্মাণের ওপর গুরুত্ব দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, এর মধ্যে দিয়ে কিন্তু একটা শিশু তার জীবনটাকে দেখতে পারবে, জীবনটাকে তৈরি করতে পারবে, বড় হতে পারবে। সেদিকে লক্ষ রেখেই শিশুদের জন্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করা, তার মধ্য দিয়ে তাদের শিক্ষণীয় বিষয়গুলো প্রতিফলিত করা এটাও কিন্তু আমাদের করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্প নষ্ট হয়ে যাক, সেটা সরকার কখনও চায় না। একসময় টেলিভিশন যুগের আবির্ভাবে সিনেমাশিল্প থমকে গেলেও এখন আবার সিনেমার যুগ ফিরে এসেছে। শুধু বাংলাদেশেই নয়, এখন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মানুষ সিনেমা দেখছে। হয়তো হলে যায় না, ঘরে বসে দেখে। কিন্তু হলেও আমাদের মানুষ টানতে হবে। আর মানুষ যাতে আসে, তার ব্যবস্থা করতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যেন চলচ্চিত্রে উঠে আসে, সেভাবে চলচ্চিত্র নির্মাণের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আপনাদের এটা অনুরোধ করব, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসটা কিন্তু ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর বিকৃত করা হয়েছে। কাজেই ইতিহাসটা যেন সবাই জানে।
সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের শিল্প-সংস্কৃতি সেগুলো যেমন থাকবে, আবার বিশ্বের সঙ্গে মিলিয়ে চলার জন্য সেগুলোও থাকতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে যাতে সেগুলো গ্রহণযোগ্যতা পায়। কিন্তু পাশপাশি আমাদের যে মহান অর্জন, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা যে বিজয় অর্জন করেছি, আমাদের সেই বিজয়ের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, আমাদের চেতনা, আমাদের যে আদর্শ, আমাদের নীতি সেগুলো প্রতিফলিত হওয়া একান্ত দরকার।
সমাজ গঠনে চলচ্চিত্রের ভ‚মিকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমি জানি, আমি একজন রাজনীতিবিদ। যত বক্তৃতা দিয়ে একজন মানুষকে যত কথাই বলি না কেন, কিন্তু একটা নাটক বা একটা সিনেমা বা একটা গানের মধ্যে দিয়ে, একটা কবিতার মধ্যে দিয়ে কিন্তু অনেক কথা বলা যায়, মানুষের অন্তরে প্রবেশ করা যায়, মনের গহীনে প্রবেশ করা যায়। কাজেই সেজন্য এর একটা আবেদন কিন্তু রয়েছে। করোনা মহামারির মধ্যে মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সচেতন করতে দায়িত্ব পালন করায় চলচ্চিত্রশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা।
দেশের চলচ্চিত্রের উন্নয়ন ও প্রসারে জাতির পিতার নেয়া ভ‚মিকার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে এই শিল্পের উন্নয়নে বর্তমান সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপেরও কথাও অনুষ্ঠানে বলেন প্রধানমন্ত্রী। মহামারির মধ্যে এ অনুষ্ঠানে সশরীরে উপস্থিত থাকতে না পারায় নিজের দুঃখের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমি তো আছি সব সময় আপনাদের পাশে। কারণ আমার বাবার হাতে গড়া এফডিসি। এই সিনেমা তৈরি করার যে উৎসাহটা, সেটা তিনি দিয়েছিলেন। কাজেই সেদিকটা মাথায় রেখে সব সময় আমি কাজ করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে বা দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে সিনেমাশিল্প অনেক অবদান রাখতে পারে। সেভাবেই আপনারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় মানুষকে আরও উদ্বুদ্ধ করা, প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন আমাদের ইতিহাসটা জানতে পারে, বিজয়ের ইতিহাস জানতে পারে এবং মানুষ যেন ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারে, সেদিকে লক্ষ রেখে আপনারা করবেন। এখন তরুণরা চলচ্চিত্রশিল্পে এগিয়ে আসায় ইতিবাচক পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা তো বৃদ্ধ হয়ে গেছি, আজ আছি কাল নেই। কিন্তু আমাদের তরুণ সমাজ যে সিনেমাশিল্পের দিকে… তাদের আগ্রহ বেড়েছে, তারা যে এগিয়ে আসছে, আমরা মনে করি এটা ভালো লক্ষণ।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অনুষ্ঠানের সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ অনুষ্ঠানে তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান এবং তথ্যসচিব খাজা মিয়াও বক্তব্য দেন। ২০১৯ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্য থেকে ২৫ ক্যাটেগরিতে মোট ৩১ জনকে এ অনুষ্ঠানে পুরস্কৃত করা হয়। এছাড়া চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য মাসুদ পারভেজ (সোহেল রানা) ও কোহিনুর আক্তার সুচন্দা এ বছর আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন।