চলছে সুপ্রিম কোর্ট বারের ভোট

নিজস্ব প্রতিবেদক: সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের প্রথম দিন দুপুর পর্যন্ত নির্বিঘ্নে ভোট দিয়েছেন আইনজীবীরা। সকাল ১০টার পর ভোটগ্রহণ শুরু হয়। দুপুর ১টা পর্যন্ত নির্বিঘ্নেই চলে ভোট। তবে নির্বাচন পরিচালনা উপ কমিটির কাছে এক সম্পাদক প্রার্থীর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বহিরাগত জড়ো করার অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

আজ বুধবার (৬ মার্চ) সকালে উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যে ভোট শুরু হয়। মধ্যাহ্ন বিরতির আগেই ড. কামাল হোসেন, সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনসহ জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে দেখা যায়।

তবে ভোট শুরু হওয়ার আগে থেকে আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে সাদা শার্ট পরা ব্যক্তিদের জড়ো হতে দেখা যায়। জড়ো হওয়া ব্যক্তিদের প্রায় প্রত্যেকের শার্টে সম্পাদক প্রার্থী নাহিদ সুলতানা যুথীর নির্বাচনী ব্যাজ ছিল।

পরে ভোটারদের উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ এনে তাদের সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে সরিয়ে দিতে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়কের কাছে আবেদন করেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী শাহ মঞ্জুরুল হক। আবেদনে তিনি লিখেছেন, একজন সম্পাদক পদপ্রার্থীর পক্ষে বেশ কিছু লোক যারা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য কিংবা ভোটার নয় তারা সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বিশেষ অঙ্গ-ভঙ্গির মাধ্যমে মহড়া দিচ্ছে এবং ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে ভোটারদের উত্ত্যক্ত করার চেষ্টা করছে, যা সুষ্ঠু নির্বাচনে অন্তরায়। অতএব, সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে অত্র সমিতির সদস্য কিংবা ভোটর ব্যতীত অবাঞ্ছিত/বহিরাগত ব্যক্তিদের দ্রুত অপসারণ করে সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ বজায় রাখতে আপনার দ্রুত পদক্ষেপ কামনা করছি।

পরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় জড়ো হওয়া ব্যক্তিদের সরিয়ে দেওয়া হয়।

পরে তারা সুপ্রিম কোর্ট মাজার গেটের বাইরে বটতলায় জড়ো হয়। সেখানে তাদেরকে স্লোগান দিতেও দেখা গেছে।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি এক নোটিশে সমিতির দুই দিনব্যাপী নির্বাচনের (২০২৪-২৫) তারিখ ঘোষণা করা হয়। তফসিল অনুসারে আজ বুধবার ও আগামীকাল বৃহস্পতিবার দুই দিনব্যাপী নির্বাচন হবে।

নির্বাচন পরিচালনা উপ কমিটির আহ্বায়ক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবুল খায়ের কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কত ভোট পরেছে এই মুহূর্তে বলতে পারব না।

ভোটগ্রহণ শুরু হতে একটু বিলম্ব হয়েছে বটে। কিন্তু শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ চলছে।’ অরাজনৈতিক পেশাজীবী সংগঠন হলেও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীরা বরাবরই প্যানেলভিত্তিক পরিচিতি পেয়েছেন। আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের মনোনীত প্রার্থীরা ‘সাদা প্যানেল’র প্রার্থী হিসেবে হিসেবে পরিচিত। আর বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী প্যানেলের সমর্থিত প্রার্থীরা ‘নীল প্যানেল’র প্রার্থী হিসেবে পরিচিত।

প্রতি বছর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ১৪টি পদে নির্বাচন করে থাকে। এর মধ্যে সভাপতি-সম্পাদকসহ দাপ্তরিক পদ ৭টি, বাকি ৭টি সদস্য পদ। সাদা-নীল দুই প্যানেলই বরাবরের মত ১৪টি পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে। এ দুই প্যানেলের বাইরে সভাপতি পদে দুইজন, সম্পাদক পদে দুইজন এবং কোষাধ্যক্ষ পদে একজন নির্বাচন করছেন। অর্থাৎ এবারের নির্বাচনে মোট ৩৩ জন প্রার্থী হয়েছেন।

গত বছর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন ঘিরে সাদা-নীল প্যানেলের প্রার্থী-সমর্থক আইনজীবীদের মধ্যে ব্যাপক হট্টগোল হয়। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, হাতাহাতি-ভাঙচুরের মধ্যে পুলিশি হামলার ঘটনাও ঘটে। পুলিশের হামলায় আইনজীবীদের পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্ট বিটের বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও আহত হন। আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন বর্জন না করলেও নীল প্যানেলের প্রার্থীরা ভোট থেকে সরে দাঁড়ায়। গত বছর ১৫-১৬ মার্চ ভোট হয়। দ্বিতীয় দিনের একপেশে ভোটের পরদিন অর্থাৎ ১৭ মার্চ ফল প্রকাশ করে নির্বাচন পরিচালনা উপ কমিটি। নিরঙ্কুশ জয় পায় বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত সাদা প্যানেল।

এবারের নির্বাচনে ৭ হাজার ৮৮৮ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। ১০টি বুধে এক সঙ্গে ৫০ জন যাতে ভোট দিতে পারে, সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান।

সাদা প্যানেলের প্রার্থীরা
এ প্যানেল থেকে সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন- আবু সাঈদ সাগর, সম্পাদক পদে শাহ মঞ্জুরুল হক, সহসভাপতি দুটি পদে যথাক্রমে রমজান আলী শিকদার ও ড. দেওয়ান মো. আবু ওবাঈদ হোসেন (সেতু), কোষাধ্যক্ষ পদে মোহাম্মদ নুরুল হুদা আনসারী, সহ-সম্পাদকের দুটি পদে মো. হুমায়ুন কবির ও মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির (পল্লব)। আর সদস্য সাতটি পদে যথাক্রমে- খালেদ মোশাররফ (রিপন), মাহমুদা আফরোজ (মনি), মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান ভূইয়া, মো. বেলাল হোসেন, মো. রায়হান রনি, রাশেদুল হক খোকন ও সৌমিত্র সরদার প্রার্থী হয়েছেন।

নীল প্যানেলের প্রার্থীরা
এ প্যানেল থেকে সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন এ এম মাহবুব উদ্দিন (খোকন), সম্পাদক পদে মো. রুহুল কুদ্দুস (কাজল), সহসভাপতি দুটি পদে মো. হুমায়ুন কবির ও সরকার তাহমিনা বেগম সন্ধ্যা, কোষাধ্যক্ষ পদে রেজাউল করিম, সহ-সম্পাদক পদে মাহফুজুর রহমান (মিলন) ও মোহাম্মদ আব্দুল করিম।
আর সদস্য সাতটি পদে ফাতিমা আক্তার, মো. শফিকুল ইসলাম, মো. রাসেল আহমেদ, মোহাম্মদ আশিকুজ্জামান নজরুল, মহিউদ্দিন হানিফ, মো. ইব্রাহিম খলিল ও সৈয়দ ফজলে এলাহী প্রার্থী হয়েছেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থী যারা
পরিচিত দুই প্যানেলের বাইরে সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন- মো. খলিলুর রহমান বাবলু (এম কে রহমান) ও মো. ইউনুছ আলী আকন্দ। সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন- নাহিদ সুলতানা যুথী ও ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভুইয়া। এছাড়া কোষাধ্যক্ষ পদে প্রার্থী হয়েছেন মো. সাইফুল ইসলাম।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০