সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: চলতি অর্থবছরের জুলাই হতে এপ্রিল পর্যন্ত পদ্মা অয়েলে বিক্রয়কৃত তেলের অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। এ সময়ে সংস্থাটির কাছে পদ্মা অয়েলের নতুন করে পাওনা হয়েছে ২০৬ কোটি ১০ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। এ নিয়ে গত সাড়ে আট বছরের মোট বকেয়া পাওনার পরিমাণ এক হাজার ৮৬৩ কোটি ৫৬ লাখ ১৭ হাজার টাকা। আর একাধিকবার এ পাওনা প্রদানে ব্যর্থ হয় বিমান বাংলাদেশ। এ নিয়ে সরকারি দুই সংস্থার টানাপড়েন চলছে।
বিপিসির সূত্রমতে, অর্থ সংকটের কথা বলে বিমান ২০১০-১১ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি-জুন থেকে চলতি অর্থবছরের গত মে পর্যন্ত বিপিসিকে তেল বিক্রির কোনো অর্থ পরিশোধ করেনি। গত সাড়ে আট বছরে বিমান মোট ছয় হাজার ১০৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকার জ্বালানি তেল ক্রয় করে। এর বিপরীতে পরিশোধ করে চার হাজার ৮৪১ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এতে বকেয়া পড়ে যায় এক হাজার ২৬৬ কোটি ৮১ লাখ ২২ হাজার টাকা। আর দীর্ঘ সময় ধরে পাওনা পরিশোধ না করায় এ বকেয়ার সঙ্গে আরও ৫৯৬ কোটি ৭৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা সুদ যুক্ত হয়েছে। ফলে সব মিলিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত এ সংস্থার কাছে বিপিসির মোট বকেয়া এক হাজার ৮৬৩ কোটি ৫৬ লাখ ১৭ হাজার টাকা।
বকেয়া পরিশোধে বিমানকে বারবার তাগাদা দিয়ে সাড়া পায় না বিপিসি। পাওনা পরিশোধের জন্য জ্বালানি বিভাগ বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে। এদিকে গত ২৯ মে একটি দ্বিপক্ষীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় পাওনা পরিশোধে নিশ্চিয়তা দিতে পারেনি বিমান বাংলাদেশ। যদিও গত বছরের জানুয়ারি থেকে বিমানকে বাকিতে তেল দেওয়া কয়েক মাসের জন্য বন্ধ রাখে বিপিসি। পরে মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে তেল দেওয়া শুরু করে বিপিসি। কিন্তু বকেয়া জ্বালানি তেলের টাকা পরিশোধে কোনো উদ্যোগ দেখছে না বলেন জানান বিপিসি সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
তথ্যমতে, বছরভিত্তিক পাওনার তালিকা প্রণয়ন করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের সহযোগী প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড। এ তালিকায় দেখা যায়, ২০১০-১১ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি-জুন থেকে চলতি অর্থবছরের গত মে পর্যন্ত বিপিসিকে তেল বিক্রির কোনো অর্থ পরিশোধ করেনি। এতে মোট বকেয়া পাওনার পরিমাণ দাঁড়ায় এক হাজার ৮৬৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২০১০-১১ অর্থবছরের বকেয়া ছিল ২৯ কোটি তিন লাখ টাকা। এরপরের বছরের অর্থবছরের ৫৮২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এভাবে ২০১২-১৩ অর্থবছরের ১৮৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা, ২০১৩-১৪ অর্থবছরের ৫০১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের ১৯০ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের ৫২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ১১৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা এবং চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের গত এপ্রিল পর্যন্ত ২০৬ কোটি ১১ লাখ টাকা।
বিপিসির শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতি বছর আমাদের উড়োজাহাজের জ্বালানি তেল জেট এ ওয়ান বিক্রি বাড়ছে। এর মধ্যে দেশের মোট বিক্রয়কৃত জেট ফুয়েলের মধ্যে বাংলাদেশ বিমান ক্রয় করে ২৫ শতাংশ, যা বাকিতে লেনদেন হয়। আর ৭৫ শতাংশ দেশীয় প্রাইভেট-বিদেশি উড়োজাহাজ সংস্থা নগদে বিপিসির কাছ থেকে তেল ক্রয় করে। তাদের কাছে বিপিসির কোনো বকেয়াও নেই। কিন্তু আর্থিক সংকটের কথা বলে ২০১১ সালের পর থেকে ২০১৬-এর শেষ পর্যন্ত বিপিসিকে কোনো টাকাই দেয়নি বিমান।
এ ব্যাপারে বিপিসির পরিচালক (হিসাব) আলতাফ হোসাইন চৌধুরী শেয়ার বিজকে বলেন, বাংলাদেশ বিমানের কাছে আমাদের এক হাজার ৮৬৩ কোটি টাকার অধিক বকেয়া পাওনা আছে। এ পাওনা আদায়ের জন্য একাধিক বার চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে গত ২৯ মে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু পাওনা পরিশোধে কোনো উদ্যোগ নেয়নি বিমান বাংলাদেশ। অথচ বিমানের বহর ভারি করার জন্য নতুন নতুন বিমান ক্রয়ে প্রস্তাব শুনলাম। অথচ তারা দাবি করে আমাদের তেলের দাম বেশি। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুসারে প্রতি মাসে আমরা কলকাতা বিমানবন্দরের মূল্য তালিকা পর্যলোচনা করে মূল্য নির্ধারণ করি।
তিনি আরও বলেন, বিপুল এ পাওনা পরিশোধের জন্য প্রতি মাসে ৩৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা করে পাঁচ বছরমেয়াদি কিস্তি সুবিধা দেওয়া হয়েছিল বিমানকে। কিন্তু সেইটা তো বিমান বাংলাদেশ ব্যর্থ হয়। আর বিশাল অঙ্কের এ পাওনা টাকা পাওয়া গেলে আমাদের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহার করা যেত।
এ বিষয়ে জানার জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এএম মোসাদ্দিক আহমেদের সঙ্গে শেয়ার বিজের পক্ষ থেকে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
উল্লেখ্য, গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের সব বিমান সংস্থাগুলোর কাছে জেট ফুয়েল বিক্রির পরিমাণ ছিল তিন লাখ ৭৬ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন। যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরের ছিল তিন লাখ ৪৭ হাজার ৩২৩ টন। এর আগের বছরের তুলনায় ২৯ হাজার ৩৭৭ টন বেশি। এছাড়া ২০১৪-১৫ অর্থবছরের তিন লাখ ৩৮ হাজার ৮২৯ টন, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তিন লাখ ২৩ হাজার ৩২৭ টন।