নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের অর্থনীতিতে বর্তমানে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। যার প্রভাব পড়বে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধিতে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেয়ে ৪ শতাংশে নামবে বলে প্রক্ষেপণ দিয়েছে দেশে সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি জানায়, বর্তমানে দেশের অর্থনীতিতে পাঁচ ধরনের চ্যালেঞ্জ বিরাজ করছে। এগুলো হচ্ছে উচ্চমাত্রার মূল্যস্ফীতি, আর্থিক খাতে ভঙ্গুরতা, বহির্খাতে চাপ, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও আনুষ্ঠানিক কর্ম সৃজন না বাড়া। এ থেকে উত্তোরণে সংস্কার কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। আর সে সংস্কার কর্মসূচির মূল লক্ষ্যই হবে শোভন কর্মসৃজন।
বিশ্বব্যাংকের ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট: ক্রিয়েটিং জবস ফর এ বেটার ফিউচার’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব বিষয় উঠে এসেছে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সšে§লনে গতকাল এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সংবাদ সšে§লনে অনলাইনে যুক্ত হয়ে ওয়াশিংটন থেকে বক্তব্য দেন বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি আবদুল্লায়ে সেক। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ইকনোমিস্ট ধ্রুব শর্মা, ইকনোমিস্ট নাজমুস খান এবং বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র যোগাযোগ কর্মকর্তা মেহেরিন এ মাহবুব।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এই মুহূর্তে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বহিস্থ খাতের চাপ, আর্থিক খাতের দুর্বলতা এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। এসব কারণে প্রবৃদ্ধি খুব বেশি বাড়বে না। সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কেননা এখনও ৮৪ দশমিক ৯ শতাংশ কর্মসংনস্থান অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে। এটি অত্যন্ত উচ্চ সংখ্যা। এই শ্রমশক্তির অর্ধেকই কৃষিতে কর্মরত এবং তাদের দক্ষতার মান অনেক নিম্ন। ২০১৬ সাল থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে কর্মসংস্থান কমেছে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ হারে।
আর্থিক খাত নিয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ব্যাংক খাতে নানা ধরনের সংকট রয়েছে, বিশেষ করে খেলাপি ঋণ অনেক বেশি। সরকারের অনেক প্রচেষ্টার পরও সেটি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এছাড়া মূল্যস্ফীতি কমাতে ঋণের সুদেও হার বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বেসরকারি খাতে ঋণ গ্রহণ কমেছে।
প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলছে, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি শ্লথ হয়ে ৩ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ২ শতাংশের মধ্যে থাকবে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, মধ্যবর্তী পয়েন্ট হবে ৪ শতাংশ। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য বিশ্বব্যাংক এপ্রিলে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল।
চলমান অর্থবছরের বাজেটে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। সেই হিসাবে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস সরকারি লক্ষ্যের চেয়ে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ কম। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী কমে গেলে তা হবে কভিড মহামারির পর সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।
চলতি অর্থবছরের পূর্বাভাস কমানোর পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলনও কমিয়ে ৫ দশমিক ২ শতাংশে নামিয়েছে। গত অর্থবছরের জন্য সরকারের সাময়িক প্রাক্কলন ছিল ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ।
কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে সংবাদ সšে§লনে বলা হয়, বাংলাদেশে কর্মের বাজোরে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ব্যবধান রয়েছে। সেটি একটি বড় সমস্যা। এক্ষেত্রে রপ্তানি বহুমুখীকরণ, বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং শিক্ষার মান বাড়াতে হবে। দক্ষতা অর্জনের সঙ্গে বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষা সঙ্গতিপূর্ণ নয়। প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান বাড়াতে এসব বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায়ের পরিস্থিতি খারাপ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুল্লায়ে সেক বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে খুব বেশি ভূমিকা রাখতে পারেনি। অথচ প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তরুণ কর্মের বাজারে প্রবেশ করছেন। বিশেষ করে শিক্ষিত ও শহুরে বেকার বৃদ্ধি পাওয়াটা একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ। তিনি আরও বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশের জন্য অন্যতম একটি চ্যালেঞ্জ। নানা উদ্যোগ নিয়েও এটি কমানো যাচ্ছে না। বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি। যা সাধারণ মানুষের জীবনমানকে নিচে নামাচ্ছে। পাশাপাশি বৈষম্যও বাড়ছে বাংলাদেশে। জিনি সহগের হিসেবে প্রতিবছর এটি বাড়ছে। এক্ষেত্রে বৈষম্য কমানোর উদ্যোগ দরকার। অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি এবং আর্থিক খাতে বিভিন্ন সংস্কার দ্রুত করতে হবে।