বিশ্বব্যাংকের কমোডিটি মার্কেটস আউটলুক

চলতি অর্থবছর দেশে চাল উৎপাদন বাড়বে ৫%

ইসমাইল আলী: চাল উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে ২০১৯-২০ অর্থবছর প্রথমবারের মতো বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে উঠে আসে বাংলাদেশ। ওই সময় দেশে রেকর্ড তিন কোটি ৫৯ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদিত হয়। যদিও গত অর্থবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাবে উৎপাদন হ্রাস পায়। ফলে চাল উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ স্থানে নেমে যায় বাংলাদেশ। তবে চলতি অর্থবছর আবারও চাল উৎপাদনে তৃতীয় অবস্থানে উঠে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

এ সময় দেশের চাল উৎপাদন ১৭ লাখ মেট্রিক টন বা প্রায় পাঁচ শতাংশ বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এতে দেশে চাল উৎপাদনে আবারও রেকর্ড গড়বে বাংলাদেশ। গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে সংস্থাটির প্রকাশিত ‘কমোডিটি মার্কেটস আউটলুট: আরবানাইজেশন অ্যান্ড কমোডিটি ডিমান্ড’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, গত অর্থবছর দেশে চাল উৎপাদন হয়েছে তিন কোটি ৪৬ লাখ মেট্রিক টন। ২০২১-২২ অর্থবছর তা বেড়ে দাঁড়াবে তিন কোটি ৬৩ লাখ মেট্রিক টনে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। অন্যদিকে গত অর্থবছর ইন্দোনেশিয়ায় চাল উৎপাদন হয় তিন কোটি ৫৩ লাখ মেট্রিক টন। চলতি অর্থবছর তা সামান্য বেড়ে দাঁড়াবে তিন কোটি ৫৪ লাখ মেট্রিক টনে। ফলে চলতি অর্থবছর ইন্দোনেশিয়ার চেয়ে বাংলাদেশের চাল উৎপাদন ৯ লাখ মেট্রিক টন বেশি দাঁড়াবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ উৎপাদন বৃদ্ধি প্রসঙ্গে শেয়ার বিজকে বলেন, সঠিকভাবে পরিকল্পনা গ্রহণ ও তার বাস্তবায়ন দেশে চাল উৎপাদন বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখছে। প্রধানমন্ত্রী করোনা মহামারির সময়ে কৃষকদের জন্য প্রণোদনা ঘোষণা করেন, যা দেশে চাল উৎপাদন বৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। এছাড়া কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বাড়ানো হয়েছে। এটিও চাল উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে।

তিনি আরও বলেন, চাল উৎপাদনে সবচেয়ে বড় কাজ হলো কৃষকদের উৎসাহিত করা। সেজন্য নিরলসভাবে কাজ করা হচ্ছে। সম্প্রসারণ সেবা, উপকরণ, আর্থিক ও নীতিসহায়তা মাঠপর্যায়ে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। ঘাতসহিষ্ণু জাত উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ করে লবণাক্ত, খরা ও হাওর অঞ্চলের কৃষকদের আবাদে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এগুলোর প্রভাবও রয়েছে চাল উৎপাদন বৃদ্ধিতে।

বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, গত অর্থবছর ছাড়া কয়েক বছর ধরে দেশে চালের উৎপাদন নিয়মিত বাড়ছে। এর মধ্যে ২০০০-০১ অর্থবছরে বাংলাদেশে চাল উৎপাদন ছিল দুই কোটি ৫১ লাখ মেট্রিক টন। এক দশক পর ২০১০-১১ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় তিন কোটি ১৭ লাখ মেট্রিক টনে। আর ২০১৭-১৮ দেশে চাল উৎপাদন হয় তিন কোটি ২৭ লাখ মেট্রিক টন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তিন কোটি ৪৯ লাখ মেট্রিক টন ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে তিন কোটি ৫৯ লাখ মেট্রিক টন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, চাল উৎপাদনে ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে গবেষণার পাশাপাশি সম্প্রসারণে গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ সামনের দিনে কৃষিজমি কমে যাবে। তাই ফলন বৃদ্ধির মাধ্যমে চালের উৎপাদন ধরে রাখতে হবে। সেটি করতে হলে যেমন উন্নত মানের বীজ সরবরাহ বাড়াতে হবে, তেমনি কৃষকের ধানের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া নতুন জাত উদ্ভাবনের পাশাপাশি এগুলো কৃষকের কাছে জনপ্রিয় করতে হবে। আর কৃষকদের জন্য ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে হবে।

এদিকে গত অর্থবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাবে দেশে চাল উৎপাদন হ্রাস পায়, যার প্রভাব পড়েছে এর দামে। বর্তমানে ঢাকা মহানগরীতে চিকন চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫৮ থেকে ৬৬ টাকায়, গত বছর এ সময় যা ছিল ৫২ থেকে ৬০ টাকা। এছাড়া বর্তমানে মাঝারি চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেঝি ৫০ থেকে ৫৬ টাকায়, গত বছর যা ছিল ৪৮ থেকে ৫২ টাকা। আর বর্তমানে ঢাকায় মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকায়, গত বছর যা ছিল ৪২ থেকে ৪৫ টাকা।

বিশ্বব্যাংক বলছে, বাংলাদেশের পাশাপাশি শীর্ষ দুই দেশ চীন ও ভারতেও চলতি অর্থবছর চাল উৎপাদন বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এক্ষেত্রে চলতি অর্থবছর চীনে চাল উৎপাদন দাঁড়াবে ১৪ কোটি ৯০ লাখ মেট্রিক টন, গত অর্থবছর যা ছিল ১৪ কোটি ৮৩ লাখ মেট্রিক টন। আর ভারতের চাল উৎপাদন দাঁড়াবে ১২ কোটি ৫০ লাখ মেট্রিক টন, গত অর্থবছর যা ছিল ১২ কোটি ২৩ লাখ মেট্রিক টন।

২০২১-২২ অর্থবছর বিশ্বে চাল উৎপাদন দাঁড়াবে ৫১ কোটি সাত লাখ মেট্রিক টন, গত অর্থবছর যা ছিল ৫০ কোটি ৬৪ লাখ মেট্রিক টন। অর্থাৎ চলতি অর্থবছর ৪৩ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন বাড়বে। আর চাল উৎপাদনে বিশ্বে পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম স্থান অপরিবর্তিত থাকবে। কয়েক বছর ধরেই এ অবস্থানগুলোয় রয়েছে যথাক্রমে থাইল্যান্ড, মিয়ানমার ও ফিলিপাইন।

প্রসঙ্গত, প্রতি বছর বৈশ্বিক কৃষি উৎপাদন পরিস্থিতি নিয়ে বছরে দুবার কমোডিটি মার্কেটস আউটলুক প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক, যার প্রথমটি এপ্রিলে ও দ্বিতীয়টি অক্টোবরে। এ প্রতিবেদনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের খাদ্যপণ্য ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের উৎপাদন, মজুত, আমদানি-রপ্তানি প্রভৃতি চিত্র তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে খাদ্যপণ্যে উৎপাদনের চিত্র তুলে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপারমেন্ট অব এগ্রিকালচারের তথ্য ব্যবহার করা হয়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০