চলতি অর্থবছর প্রবৃদ্ধি হবে সাড়ে ছয় শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ছয় দশমিক পাঁচ থেকে ছয় দশমিক ছয় শতাংশের মধ্যে থাকবে বলে জানিয়েছে প্রধান উন্নয়ন সহযোগী বিশ্বব্যাংক। এ সঙ্গে সরকার জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে হিসাব তুলে ধরেছে, তাতে নানা অসংগতি রয়েছে বলে মনে করে সংস্থাটি। যদিও সরকার বলছে, প্রবৃদ্ধি হবে সাত দশমিক ৬৫ শতাংশ।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে গতকাল বিশ্বব্যাংকের আবাসিক কার্যালয়ের ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ উপস্থাপনায় এমটি জানানো হয়। এতে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন সংস্থাটির ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। ঢাকা কার্যালয়ের আবাসিক প্রতিনিধি চিমিয়াও ফানসহ অন্য কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

বিশ্বব্যাংকের পর্যালোচনায় বলা হয়, সরকারের হিসাবে চলতি অর্থবছর ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে পৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ১৩ দশমিক দুই শতাংশ। গত অর্থবছরে যা ছিল ১০ দশমিক ৯৭ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে এত বেশি প্রবৃদ্ধি হওয়ার জন্য ব্যক্তি খাতে যে পরিমাণ বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি দরকার ছিল, তা হয়নি। ফলে এত প্রবৃদ্ধি কোথা থেকে এলো- সেটা একটি বড় প্রশ্ন। একই সঙ্গে ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি দাবি করা হলেও এর বিপরীতে কর্মসংস্থান বেড়েছে মাত্র দুই লাখ। কিন্তু প্রবৃদ্ধি বেশি হলে তো কর্মসংস্থান আরও বেশি হওয়ার কথা।

এছাড়া ভারত, ইরান, ইথিওপিয়া ও ভুটানসহ যেসব দেশে সাত শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে, সেখানে জিডিপির অনুপাতে মোট বিনিয়োগ ৩৫ শতাংশের ওপরে। জিডিপির অনুপাতে তাদের রফতানি আয়ও অনেক বেশি। কিন্তু এক্ষেত্রে একমাত্র ব্যতিক্রম বাংলাদেশ। এখানে মোট বিনিয়োগ এখনও জিডিপির ৩২ শতাংশের নিচে। রফতানি আয়ও জিডিপির অনুপাতে উল্লিখিত দেশগুলোর তুলনায় বেশি নয়। তারপরও কিভাবে সাত দশমিক ৬৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলো সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিশ্বব্যাংক।

জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে ম্যানুফ্যাকচারিং ও নির্মাণ খাতে যে বেশি মাত্রায় প্রবৃদ্ধি দেখানো হয়েছেÑএখানে কিছু ভাববার বিষয় আছে। তিনি বলেন, প্রবৃদ্ধি সাত দশমিক ৬৫ শতাংশ দেখানোর মূল কারণ হচ্ছে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের বড় প্রবৃদ্ধি। ভোক্তার ব্যয় এতে চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে। ব্যক্তি খাতের ভোক্তার ব্যয়টাই এখানে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে। প্রশ্ন যেটা থেকে যায়, এ ভোক্তা চাহিদা বাড়ার সূত্রটা কি?

দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে ব্যাংক খাত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংকের এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘ব্যাংক খাতের দুর্নীতির তদারকি বাড়াতে হবে। আবার ঋণ আদায়ে আইনগত ও আর্থিক কাঠামোর উন্নতি করতে হবে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় তারল্য সংকট না থাকলেও খেলাপি ঋণ বেশি আছে। তবে কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকে তারল্য সংকট দেখা যাচ্ছে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঘোষিত মুদ্রানীতির উল্টোদিকে চলছে বলে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য কিছুটা সতর্কতামূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করলেও শেষ পর্যন্ত ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (সিআরআর) এক শতাংশ কমিয়ে উল্টো সম্প্রসারণমূলক করা হয়েছে।’

মূল্যস্ফীতির বিষয়ে তিনি বলেন, সাধারণত খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বাড়লে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে। আর খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বাড়লে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে। কিন্তু বিবিএসের হিসাবে এসব বিষয়ের মধ্যে কোনো সামঞ্জস্য দেখা যাচ্ছে না। খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি একই সঙ্গে বাড়া বা একই সঙ্গে কমে যাওয়া কোনো নিয়মের মধ্যে পড়ে না।

অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি চিমিয়াও ফান বলেন, ‘এদেশ এক বছরে দুইবার প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরেও যেভাবে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে, সেটা এদেশের অর্থনীতির শক্তি।’

 

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০