নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি অর্থবছর দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। গত অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির তুলনায় এটি কিছুটা কম। গত অর্থবছর প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। আর গত এপ্রিলে সংস্থাটি জানিয়েছিল, প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। এবার প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে অভ্যন্তরীণ ভোগ-চাহিদা হ্রাস, প্রবাসী আয় কমে যাওয়া এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির শ্লথগতির কারণে গত বছরের তুলনায় এবার জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছু কমবে বলে মনে করছে এডিবি।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নিজেদের স্থানীয় কার্যালয়ে গতকাল এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক আপডেটের সেপ্টেম্বর সংস্করণ প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটিতে এসব বিষয় উঠে এেেসছ। সংবাদ সম্মেলনে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং।
সূচনা বক্তব্যে গিনটিং বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বর্তমানে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এক ধরনের অনিশ্চয়তা চলছে। এর পাশাপাশি বিশ্ববাজারে জ্বালানিরও সংকট চলমান, যে কারণে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ হ্রাস পাবে। চলতি অর্থবছর প্রবৃদ্ধি কম হওয়ার ক্ষেত্রে এটি অন্যতম কারণ হিসেবে কাজ করবে। এর পাশাপাশি চলতি বছর মৌসুমি বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। এতে আমন উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এছাড়া চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরুর দিকে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যার কারণে ওই এলাকার অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে সেখানকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিঘ্নিত হয়েছে। অন্যদিকে দেশের প্রধান প্রধান রপ্তানি গন্তব্যে চাহিদা হ্রাস পাওয়া ও বিদ্যুৎ-জ্বালানির সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধিও হ্রাস পাবে, যে কারণে সার্বিকভাবে চলতি অর্থবছর ২০২০-২১ অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কম হবে।
মূল্যস্ফীতির বিষয়ে এডিবি জানায়, চলতি অর্থবছর গড় মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৭ শতাংশ হতে পারে। সংস্থাটির মতে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে, যা মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিচ্ছে। তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতিতে সংকোচনমূলক পদক্ষেপ নিতে পারে বলে মনে করে এডিবি। আর এ অর্থবছর বাজেট ঘাটতি জিডিপির সাড়ে পাঁচ শতাংশ হবে বলে জানায় সংস্থাটি।
তবে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির যে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে, সেটিও এশিয়ার গড় প্রবৃদ্ধির তুলনায় অনেক বেশি বলে জানিয়েছে এডিবি। আর সরকার মিশ্র ধরনের অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ করেছে। এ ধরনের নীতির ফলে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা মোকাবিলা করার বিষয়টি অনেকটা সহজ হয়েছে। তবে বিদ্যমান টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যে সংস্কারমূলক পদক্ষেপ বাস্তবায়নের
সুযোগ করে দেয়। এসব সংস্কার বাস্তবায়ন অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংহতকরণ, আর্থিক বাজারের সংগতি জোরদার করা এবং প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে, যা ব্যক্তি খাতে উৎপাদনশীল চাকরি সৃষ্টিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। আর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জ্বালানি খাতে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, সে অনিশ্চয়তার প্রভাব থেকে দেশের অর্থনীতিকে রক্ষা করা জন্য সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানি ওপর জোর দিতে পারে বলে পরামর্শ দিয়েছে এডিবি। এতে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে সরকার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, তা অর্জন করা সহজ হবে।
এডিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, কভিড-১৯-এর অভিঘাত মোকাবিলায় বাংলাদেশ সফলতা দেখাতে সক্ষম হয়েছে। আর কভিড-১৯ অতিমারির ফলে সৃষ্ট আর্থসামাজিক প্রভাব মোকাবিলায় এডিবি এ পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য আড়াই বিলিয়ন ডলার ঋণ ও ৭২ লাখ ৩০ হাজার ডলার অনুদান দিয়েছে। আর ২০২৩ থেকে ২০২৫ মেয়াদে সংস্থাটি বাংলাদেশকে সাড়ে ৯ বিলিয়ন ডলার অর্থ সহায়তা দেয়ার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। আর গত ৪৯ বছরের অংশীদারিত্বকালে এডিবি বাংলাদেশকে ৪০ বিলিয়ন ডলার ঋণ ও অনুদান সহায়তা দিয়েছে। বর্তমানে এডিবির অর্থায়নে বাংলাদেশের ৪৯টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। এসব প্রকল্পে এডিবি ১১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় এডিবির জ্যেষ্ঠ কান্ট্রি স্পেশালিস্ট সুন চ্যান হং উল্লেখ করেন, প্রবাসী আয় হ্রাস পাওয়া ও আমদানি ব্যয় বৃদ্ধিজনিত বাণিজ্য ঘাটতির কারণে বিগত অর্থবছরে বাংলাদেশে চলতি হিসাবের ঘাটতি ব্যাপকহারে বেড়ে গিয়েছিল। চলতি অর্থবছর এ ঘাটতি হ্রাস পেতে পারে বলে আশা করছে এডিবি।
মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য প্রধান দুটি ঝুঁকি চিহ্নিত করা হয়। এগুলো হলোÑইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান আগ্রাসনের কারণে সৃষ্ট অনিশ্চয়তার কারণে রপ্তানি দুর্বল হওয়া এবং নানা ধরনের প্রকৃতিক দুর্যোগের ফলে সৃষ্ট ঝুঁকি। সাম্প্রতিক সময়েও বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলের বন্যা ও দেশব্যাপী অনাবৃষ্টির কারণে আমন ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া আবহাওয়াজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের উৎকৃষ্ট উদাহরণ।