Print Date & Time : 30 June 2025 Monday 12:30 am

চলতি বছরেই পুঁজিবাজারে আসছে রবি আজিয়াটা

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: করোনাভাইরাসের প্রভাবে এলোমেলো হয়ে গেছে প্রায় সব সেক্টরের পরিকল্পনা। ভাইরাসের তাণ্ডবে পিছিয়ে গেছে সব কার্যক্রম। ফলে টেলিযোগাযোগ খাতের কোম্পানি রবি আজিয়াটা পুঁজিবাজারে আসতে সময়ক্ষেপণ হতে পারেÑএমন ধারণা ছিল সাধারণ বিনিয়োগকারীসহ বাজারসংশ্লিষ্ট অনেকেরই। তবে কোম্পানিটির বেলায় তার ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কোম্পানিটির যথাসময়ে তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া চলছে। করোনার বৈরী প্রভাবে রবির তালিকাভুক্তি বিলম্বিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

জানা গেছে, এরই মধ্যে বাংলাদেশে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) আবেদন জমা দিয়েছে রবি আজিয়াটা। কমিশনও রবির আইপিও অনুমোদনের বিষয়ে আন্তরিক রয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে খুব শিগগির এই কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দেওয়া হবে। ভালো শেয়ারের জোগান দিতে কোম্পানিটিকে দ্রুতই তালিকাভুক্ত করার প্রক্রিয়াও চলছে।

কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের ৫২ কোটি ৩৮ লাখ শেয়ার ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই শেয়ারের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৫২৩ কোটি টাকা তুলবে রবি, যা ব্যবসা (নেটওয়ার্ক) সম্প্রসারণের ব্যয় করবে কোম্পানিটি। প্রতিষ্ঠানটিকে পুঁজিবাজারে আনার জন্য ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছে মার্চেন্ট ব্যাংক আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড।

জানতে চাইলে রবি আজিয়াটা লিমিটেডের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমাদের জমা দেওয়া আইপিও আবেদন বর্তমানে বিএসইসিতে প্রক্রিয়াধীন এবং এর অগ্রগতি সন্তোষজনক। আমরা আশা করছি, কমিশন খুব দ্রুত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।’

বিষয়টি নিয়ে কথা বললে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘শুধু রবিই নয়, যেসব কোম্পানি বর্তমানে আইপিও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, সব কোম্পানির অনুমোদনের বেলায় আমরা সতর্ক। সেই জন্য প্রতিটি কোম্পানির জমা দেওয়া তথ্যাদি, হিসাব আমরা খুব ভালো করে দেখছি। সব কাগজপত্র ঠিক থাকলে আমরা কোনো কোম্পানির বেলায় সময়ক্ষেপণ করতে চাই না। সব ঠিক থাকলে কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দ্রুত সময়েই দেওয়া হবে।’

তথ্যমতে, গত মে শেষে দেশে রবির সেবাগ্রহীতার সংখ্যা ছিল চার কোটি ৮০ লাখ, যা দেশের মোট গ্রাহক সংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ। মালয়েশিয়ার কোম্পানি আজিয়াটা রবির ৬৮ দশমিক সাত শতাংশ শেয়ারের মালিক। জানা গেছে, এই কোম্পানিটি বাজারে এলে প্রথম দিনেই অভিহিত দরের হিসাবে বাজার মূলধন বাড়বে দুই শতাংশ।

অন্যদিকে রবির পুঁজিবাজারে আসার অপেক্ষায় রয়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। কারণ ২০০৯ সালে গ্রামীণফোন পুঁজিবাজারে আসার পর সে রকম আর কোনো কোম্পানির দেখা পাওয়া যায়নি। ভালো শেয়ারের জোগান দিতেও এই ধরনের কোম্পানির বিকল্প নেই বলে জানান পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা।

জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘আমাদের পুঁজিবাজারে ভালো মানের শেয়ারের খুব অভাব। অথচ বাজারে ভালো শেয়ার থাকার বিকল্প নেই। আর ভালো শেয়ার পেতে হলে দরকার পড়ে ভালো মানের কোম্পানির। রবিসহ এই ধরনের বড় বড় কোম্পানি যদি পুঁজিবাজারে আসে, তা পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারী সবার জন্যই ভালো হবে।’

২০০৬ সালে সরকারি নির্দেশনায় ৪০ কোটি টাকা বা তারও বেশি মূলধনি প্রাইভেট কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে আসার জন্য ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। ওই নির্দেশনা কার্যকর না হওয়ায় ২০১০ সালের ৫ মে ৫০ কোটি টাকার ওপরে পরিশোধিত মূলধন হলে সেই কোম্পানির পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির বিষয়ে বাধ্যবাধকতা আরোপ করে বিএসইসি। এরপর ২০১৫ সালের ১১ জুন বহুজাতিক ও বিদেশি যৌথ মালিকানার কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তির বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। সর্বশেষ ২০১৭ সালে প্রণীত ফোরজি লাইসেন্স-সংক্রান্ত নীতিমালায় টেলিকম খাতের কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আসার শর্ত দেওয়া হয়। তখন ব্যবসায়িকভাবে লোকসানের কারণে তালিকাভুক্তির শর্ত পূরণ করতে পারেনি রবি। পরে ২০১৮ সালে প্রায় ২১৫ কোটি টাকা কর-পরবর্তী মুনাফা করে কোম্পিানিটি।

উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালে টেলিকম মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের এ কে খান গ্রুপের যৌথ মালিকানায় ‘একটেল’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১০ সালে মালিকানা বদলের পর ‘রবি’ নামে ব্যবসা শুরু করে কোম্পানিটি। একীভূতকরণের পর যৌথ মালিকানার এই সেলফোন অপারেটর সেবাদাতা কোম্পানির মোট শেয়ারের মধ্যে ৬৮ দশমিক সাত শতাংশ শেয়ারের মালিক মালয়েশিয়ান আজিয়াটা গ্রুপ। এর বাইরে ভারতী এয়ারটেল ২৫ শতাংশ ও জাপানের এনটিটি ডোকোমো এখন রবির ছয় দশমিক তিন শতাংশ শেয়ারের মালিক। পরবর্তী সময়ে রবির সঙ্গে একীভূত হয় দেশের অপর অপারেটর একটেল।

সূত্রমতে, নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে এর আগে বন্ড ইস্যু করতে চেয়েছিল রবি আজিয়াটা। পরে তারা এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) শর্তের কারণে ৪০০ কোটি টাকার বন্ড ইস্যু করেনি কোম্পানিটি।