চলতি বছর কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি!

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: চলতি বছরের নভেম্বর মাস পর্যন্ত অর্থাৎ ১১ মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে মোট কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২৬ লাখ ছয় হাজার ৭৭২ টিইইউএস, যেখানে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ ছিল ৩২ লাখ ১৪ হাজার ৫৪৮ টিইইউএস। এতে গত বছরের তুলনায় প্রায় সাড়ে চার লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং কম হতে পারে। অর্থাৎ প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হতে পারে ১৩-১৫ শতাংশ। কারণ দেশে চলমান ডলার সংকটে আমদানি নিয়ন্ত্রণসহ নানা কারণে দেশের সব ধরনের আমদানিপত্র খোলায় কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। ঋণপত্র খোলা ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের গতি আরও কমবে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, গত নভেম্বর মাসে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে এক লাখ এক হাজার ৫১১ টিইইউএস কনটেইনার পণ্য আমদানি করা হয়, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল এক লাখ ১৬ হাজার ৬৪৮ টিইইউএস কনটেইনার। চলতি বছরের অক্টোবর মাসে ৯৭ হাজার ৫৩৮ টিইইউএস কনটেইনারবাহী পণ্য আমদানি করা হয়। গত সেপ্টেম্বর মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি পণ্য ভর্তি এক লাখ এক হাজার ৪৯৩ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে, যা আগের মাস অর্থাৎ আগস্টে বন্দরে এক লাখ ১৪ হাজার ৯২০ টিইইউএস কনটেইনার ভর্তি পণ্য আমদানি করা হয়েছিল। অর্থাৎ চার মাসের ব্যবধানে আমদানি পণ্য ভর্তি কনটেইনারের সংখ্যা কমেছে ১৩ হাজার ৪০৯ টিইইউএস বা ১১ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

অপরদিকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রপ্তানি পণ্য হ্যান্ডলিং হয়েছে ৫৯ হাজার ৯৭৩ টিইইউএস। আগের বছরের রপ্তানি করা হয়েছিল ৬৮ হাজার ৩৭ টিইইউএস কনটেইনার পণ্য। আর চলতি বছরের অক্টোবর মাসে রপ্তানি করা হয় ৫৯ হাজার ৩৩১ টিইইউএস কনটেইনার পণ্য। গত সেপ্টেম্বর মাসে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে ৬৩ হাজার ৮০৩ টিইইউএস কনটেইনার পণ্য রপ্তানি হয়েছে। আর আগস্টে রপ্তানি হয়েছিল ৭৫ হাজার ৬৯৭ টিইইউএস কনটেইনার পণ্য। অর্থাৎ চার মাসের ব্যবধানে রপ্তানি পণ্যভর্তি কনটেইনারের সংখ্যা কমেছে ১৫ হাজার ৭২৪ টিইইউএস বা ২১ শতাংশেরও বেশি।

জানা যায়, নভেম্বর পর্যন্ত গত ১১ মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে মোট কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল ২৬ লাখ ছয় হাজার ৭৭২ টিইইউএস। অপরদিকে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ ছিল ৩২ লাখ

১৪ হাজার ৫৪৮ টিইইউএস। এতে গত বছরের তুলনায় কমতে পারে কনটেইনার হ্যান্ডলিং। ফলে কমবে চট্টগ্রাম বন্দরের আয়। পাশাপাশি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব আহরণও কমবে। আর ২০২০ সালের মোট কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল ২৮ লাখ ৩৯ হাজার ৯২৭ টিইইউএস।

আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধসহ নানা কারণে বিশ্বের নানা দেশে সংকট তৈরি হয়েছে। আর দেশের প্রকট ডলার সংকট। এই সংকটের কারণে দেশের আমদানিপত্র খোলায় কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। আবার বিশ্বব্যাপী পণ্যের চাহিদা কমছে। এর মধ্যে খাদ্যপণ্য, তেল, তুলা, গম, ইস্পাতসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম কমছে। পাশাপাশি বিভিন্ন গন্তব্যে জাহাজ ভাড়াও কমেছে ৬০ শতাংশেরও বেশি। মোট কথায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ধস দেখা দিয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। দেশের অর্থনীতিতে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে কমে যাওয়ায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যদি আমাদের এলসি খোলা স্বাভাবিক হয়, তাহলে সবকিছুর দাম স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

এ বিষয়ে খাতুনগঞ্জ এলাকার আমদানিকারক ও খাতুনগঞ্জ আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, অস্থিতিশীল আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এবং ভারসাম্যহীন ডলারের বিনিময়মূল্যের কারণে তিন মাস ধরে আমদানি আগের চেয়েও অনেক কমেছে। ফলে মজুত পণ্য কমছে। এতে পণ্যের দাম বাড়ছে। কারণ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়াটাই জটিল হয়ে পড়েছে, যদিও ব্যাংকগুলো ইচ্ছামতো ডলার দর নিয়েছে। ফলে খরচ ২০ শতাংশ বেড়েছে। আর জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি সংকটকে আরও প্রকট করেছে, যার কারণে সবকিছু অনেক সেøা হয়ে পড়েছে। 

কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ কমে যাওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে কনটেইনারবাহী পণ্য আমদানি কমছে। অপরদিকে খোলা পণ্যের আমদানি বাড়ছে। আর রপ্তানিবাহী কনটেইনার হ্যান্ডলিংও কমছে। মূলত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সংকট চলছে, যার প্রভাবে আমদানি কমছে। এ কারণে আগের বছরের তুলনায় কনেটেইনার হ্যান্ডলিং কম হতে পারে। এক্ষেত্রে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির উন্নতিসহ বৈশ্বিক অর্থনীতি ঠিক না হলে এই সংকট আরও বাড়তে পারে। তবে কনটেইনার হ্যান্ডলিং কম হওয়ার ক্ষেত্রে বন্দরের সক্ষমতার সঙ্গে সম্পর্ক নেই। এটা দেশের আমদানি ও রপ্তানির কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। এছাড়া বন্দর কর্তৃপক্ষ সবসময় সর্বোচ্চ সেবা প্রদানে প্রস্তুত। 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০